রাষ্ট্রবিজ্ঞান কাকে বলে? রাষ্ট্রবিজ্ঞানের নামকরণ

রাষ্ট্রবিজ্ঞান কাকে বলে?

রাষ্ট্রবিজ্ঞান মূলত রাষ্ট্রের ভিত্তি ও সরকারের মূলনীতি নিয়ে আলোচনা করে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান একটি গতিশীল সমাজবিজ্ঞান। রাষ্ট্রবিজ্ঞান একটি গতিশীল বিজ্ঞান।

বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। তাঁদের সংজ্ঞা থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের স্বরূপ ও প্রকৃতি জানা যায়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আদি গুরু এরিস্টটল তাঁর পলিটিক্স গ্রন্থটিতে রাজনৈতিক কার্যকলাপের বিশ্লেষণকে সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞান (Master Science) বলে উল্লেখ করেছেন। 

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ক্যাটলিন বলেন, "রাষ্ট্রবিজ্ঞান মানুষের রাজনৈতিক কার্যকলাপের ব্যাখ্যা দান করে এবং সমাজে বসবাসকারী মানুষের কথা আলোচনা করে।"

পল জানে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে গিয়ে বলেন, "রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমাজ বিজ্ঞানের সেই শাখা যা রাষ্ট্রের মূলভিত্তি ও সরকারের মূলনীতি নিয়ে আলোচনা করে।"

সেলির মতে, "ধনবিজ্ঞান যেমন সম্পদের, জীববিজ্ঞান যেমন জীবের, বীজগণিত যেমন সংখ্যার, জ্যামিতি যেমন স্থান ও আয়তন নিয়ে আলোচনা করে, তেমনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান শাসন ব্যবস্থার ঘটনাবলীর অনুসন্ধান করে।"

রবার্ট ডালের মতে, "রাষ্ট্রবিজ্ঞান হচ্ছে ক্ষমতা, শাসন, কর্তৃত্ব সংক্রান্ত আলোচনা।"

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্যের সঙ্গে সঙ্গে তার সংজ্ঞার চরিত্রগত গুণগত  ও সংখ্যাগত পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে।

যুদ্ধ, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, জাতিগোষ্ঠীর দ্বন্দ ইত্যাদি নানাবিধ কারণে মানুষের জীবন স্বচ্ছন্দ গতিতে চলছে না। অন্যদিকে যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নতি দ্বারা দূরকে নিকট করতে সমর্থ হলেও মানুষে মানুষে ব্যবধানকে করেছে দুস্তর ও দূরতিক্রম্য। এর ফলে মানুষের জীবনে সমস্যা হয়েছে বহুমাত্রিক এবং রাজনীতির সুনিপুণ প্রয়াস এ অবস্থাতেও মানব সমাজের সমস্যার সমাধানের প্রয়াস চালাচ্ছে। এ পর্বে তার সমস্যা অধ্যয়ন কেবল রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে করলেই হচ্ছে না বরং সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকেও প্রগাঢ়ভাবে বিবেচনা করতে হচ্ছে। সে দৃষ্টিতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান হচ্ছে রাজনীতি ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ। 

এভাবে রাষ্ট্রবিজ্ঞান দিন দিন গতিশীল সমাজ বিজ্ঞানে উন্নীত হচ্ছে।


রাষ্ট্রবিজ্ঞানের নামকরণ

নামকরণ থেকে বলা যায় যে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাষ্ট্র সংক্রান্ত বিজ্ঞান। বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ রীতি অনুসরণে রাষ্ট্র এবং সরকার নিয়ে অধ্যয়নের যে শাস্ত্র গড়ে উঠেছে তাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বলা যায়। সমাজ জীবন শুরুর সাথে সাথেই মানুষ আজকের মত রাষ্ট্র গঠন করতে পারে নি। প্রচীনকালের কওম বা গোত্রবদ্ধ মানুষের জীবন থেকে সমাজ, জনপদ থেকে জনসমাজ এবং অবেশেষে জাতিত্বের অহংকারে জনসমাজ থেকে রাষ্ট্রীয় জীবনে পরিণতি লাভ করেছে। রাজনীতি সংক্রান্ত অধ্যয়নকেই আমরা রাষ্ট্রবিজ্ঞান বলে অভিহিত করতে পারি।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের নামকরণ সম্পর্কে অনেক মতভেদ রয়েছে। গ্রীক দার্শনিক এরিস্টটল এই শাস্ত্রটিকে রাজনীতি নামে অভিহিত করেছেন। আবার কেউ কেউ এ শাস্ত্রকে রাষ্ট্রীয় দর্শন বলে আখ্যায়িত করেছেন।

আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ক্যাটলিনের মতে , রাজনীতি ও রাষ্ট্র দর্শন এ দুই বিষয় নিয়েই রাষ্ট্রবিজ্ঞান। ফ্রেডরিক, সিজউইক, জেলিনেক প্রমুখ পণ্ডিতগণ এ শাস্ত্রকে রাষ্ট্রনীতি বলে উল্লেখ করেছেন।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান শাস্ত্রটিকে প্রধানত তত্ত্বগত রাজনীতি বলতে রাষ্ট্রদর্শনের অন্তর্ভূক্ত বিষয়বস্তুকে বুঝায়। তত্ত্বগত রাজনীতি রাষ্ট্রের মৌলিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করে। ব্যবহারিক রাজনীতি রাষ্ট্রের কার্যাবলী পর্যালোচনা করে। যেমন, শাসনতন্ত্র, শাসনতান্ত্রিক আইন, নির্বাচক মণ্ডলী, আইন সভা, আইন প্রণয়ন পদ্ধতি ইত্যাদি।

আরো পড়ুনঃ

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url