সংস্কৃতি বলতে কি বোঝ? সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো।

সংস্কৃতি বলতে কি বোঝ?

সংস্কৃতি বলতে বোঝায় ঐতিহাসিকভাবে সৃষ্ট এমন এক প্রতীক ব্যবস্থা যার ভিতর দিয়ে জগৎ সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান, বিশ্বাস ও ভাবনা তৈরি হয় এবং এর আদান-প্রদান ঘটে। সংস্কৃতি মানুষের সাথে মানুষের যোগাযোগের ভিত্তি। সাধারণভাবে সংস্কৃতি বলতে আমরা বুঝি মনের সুন্দর রূপ। অনুশীলনে অর্জিত জ্ঞান-বুদ্ধির উৎকর্ষতা সাংস্কৃতিক মানুষ বলতে বুঝি এমন ব্যক্তি যার রয়েছে পরিশীলিত চিন্তা, রুচি এবং আচরণ।

সামাজিক বিজ্ঞান সমূহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রত্যয় হল সংস্কৃতি। সংস্কৃতিকে নৃবিজ্ঞানী ও সমাজবিজ্ঞানীরা বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করে থাকেন। তবে সাম্প্রতিককালে সমাজবিজ্ঞান ও নৃবিজ্ঞানের প্রবণতা হচ্ছে সংস্কৃতিকে ব্যঞ্জণা ব্যবস্থা বণটভধভথ ব্রণব হিসেবে আলোচনা করা। একটি বড় ও জটিল সমাজে বিভিন্ন স্বতন্ত্র শ্রেয়োবোধ ও মূল্যবোধ সম্বলিত বিভিন্ন গোষ্ঠী বা দল থাকে। কোন কোন গোষ্ঠীর স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যকে বলে উপসংস্কৃতি। এই উপসংস্কৃতি যখন আধিপত্যমূলক সংস্কৃতির সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বা তার আক্রমণের সম্মুখীন হয়, তখন এটি রূপ নেয় বিপরীত সংস্কৃতিতে।

সংস্কৃতির শুরু কখন তা বলা না গেলেও, এটি ঠিক যে, ভাষার ক্রমবর্ধমান বিকাশের সাথে সংস্কৃতির বিকাশ ওতপ্রোতভাবে যুক্ত। এটি সংস্কৃতিতে নতুন কোন চিন্তা, ঘটনা বা কাজের অর্ন্তভুক্তিকে নির্দেশ করে। সাংস্কৃতিক ব্যাপ্তিতে কোন এলাকায় জনগোষ্ঠীর মধ্যে আবিষ্কার বা উদ্ভাবনা হলে সহজেই অন্যান্য এলাকায় বিস্তৃত হয়।

এক সমাজ থেকে অন্য সমাজে সংস্কৃতির ধরনে ভিন্নতা থাকলেও, সাধারণ কিছু বৈশিষ্ট্য সকল সংস্কৃতিতেই বিদ্যমান- যেমন, ভাষা, মূল্যবোধ, শ্রেয়োবোধ, অনুমোদন প্রভৃতি। এসবই সংস্কৃতির প্রধান উপাদান। সকল সংস্কৃতিই বিকাশমান ও পরিবর্তনশীল। নৃবিজ্ঞানের পরিসরে সাংস্কৃতিক পরিবর্তনকে বোঝার জন্য গুরুত্ব আরোপ করা হয় সাংস্কৃতিক বিবর্তন ও সংস্কৃতিগ্রহণ- এর উপর।

সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য

সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো:
১) মানুষ তার প্রয়োজনে সংস্কৃতি সৃষ্টি করে।
২) স্থান কাল পাত্র ভেদে সব সমাজেই সংস্কতি পরিবর্তন হয়।
৩) সংস্কৃতি হচ্ছে জীবনধারা।
৪) সংস্কৃতি হলো মনোজগতের বিষয়।
৫) সংস্কৃতি বিচ্ছিন্ন অবস্থায় বিদ্যমান থাকে না।
৬) সমাজতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে সংস্কৃতি হচ্ছে অংশীদারিত্বের বিষয়।
৭) সংস্কৃতি একটি চলমান প্রক্রিয়া।
৮) সংস্কৃতি সংগতিপূর্ণ, অটল এবং অখণ্ড।
৯) সংস্কৃতির একটি কাঠামোভিত্তিকরূপ আছে, যে রূপের মাধ্যমে এর প্রকাশ ঘটে।
১০) সংস্কৃতি কখনো স্থির থাকে না।
১১) সংস্কৃতি অর্জিত হয়।
১২) সংস্কৃতি মানব অস্তিত্বের জৈবিক, পরিবেশগত, মনস্তাত্বিক এবং ঐতিহাসিক উপাদান থেকে গৃহীত হয়।
১৩) সংস্কৃতি তার বিভিন্নমুখী অংশ অনুযায়ী বিভাজনযোগ্য।
১৪) সংস্কৃতি পরিবর্তনশীল।
১৫) সংস্কৃতি কাঠামোভিত্তিক।

error: Content is protected !!