মানসিক অবসাদ কি?
মানসিক কাজ অনেকক্ষণ ধরে করতে থাকলে মানসিক কার্যক্ষমতা হ্রাস পায় এবং অবসাদ দেখা দেয়। যেমন: অনেক সময় ধরে এক নাগাড়ে অংক করতে থাকলে একটা পর্যায়ে অংক করার জন্য বিচারশক্তি, চিন্তাশক্তি ও নির্ভুল করার ক্ষমতা কমতে থাকে। এই কমতে থাকা অর্থাৎ পরিবর্তনের এই অবস্থাকে মানসিক অবসাদ বলে। এছাড়া ব্যক্তিগত পছন্দ, অপছন্দ, মানসিক অবস্থার তারতম্য, পরিবেশগত কারণেও অবসাদ আসতে পারে। তবে দৈহিক ও মানসিক কাজকে যেমন সম্পূর্ণভাবে পৃথক করা যায় না, তেমনি দৈহিক অবসাদ ও মানসিক অবসাদকে আলাদা করা যায় না। অনেকক্ষণ দৈহিক পরিশ্রম করলে মানসিক অবসাদ আসতে পারে, তেমনি একটানা মানসিক কাজ করতে থাকলে দৈহিক অবসাদ আসে।

মানসিক অবসাদের কারণ ও দূরীকরণের উপায়
দৈহিক বা মানসিক অবসাদ, সামগ্রিক বা আংশিক যাই হোক না কেন তার পিছনে কতকগুলো কারণ রয়েছে। শারীকি শিক্ষা কর্মসূচিজনিত শারীরিক চাপের কারণে সাধারণভাবে মানুষের মধ্যে অবসাদ আসে। তবে আরও অনেক কারণে অবসাদ আসতে পারে। মনোবিদগণ অবসাদের কারণসমূহকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করেছেন- ১) দৈহিক কারণ, ২) মানসিক কারণ এবং ৩) পরিবেশগত কারণ। দৈহিক অবসাদের জন্য মাংসপেশিতে ল্যাকটিক এসিডের সৃষ্টি, দেহকোষের ক্ষয়, শরীর থেকে লবণ বের হওয়া, যথেষ্ট পরিমাণে অক্সিজেন ঘাটতি, অতিরিক্ত অঙ্গ সঞ্চালন প্রভৃতি কারণে হয়ে থাকে।
মানসিক অবসাদের কারণসমূহ
মানসিক অবসাদের কারণসমূহকে নিম্নবর্ণিত উপায়ে বিশ্লেষণ করতে পারি। যেমন:
১) মানসিক প্রস্তুতির অভাবঃ কোনো কাজ করার আগে সে সম্পর্কে মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা প্রয়োজন। কর্মসূচি সম্পর্কে পূর্ব ধারণা স্পষ্ট না থাকলে তাড়াতাড়ি মানসিক অবসাদ আসে।
২) কাজে অভ্যস্ত না হয়ে উঠাঃ কর্মসূচি নিয়মিতভাবে পালনকালে অভ্যস্ত হয়ে উঠলে ঐ কর্মসূচিতে তাড়াতাড়ি অবসাদ আসে না। তাই অভ্যাসের অভাবের কারণে অনেক সময় অবসাদ দেখা দেয়।
৩) কর্মক্ষেত্রে প্রেষণা এবং কাজের প্রতি অনুরাগের অভাবঃ যে কোনো কাজের পিছনে প্রেষণা থাকলে একটানা কাজ করেও অনেক সময় অবসাদ আসে না। আবার যে কাজে প্রেষণা নেই, সেই কাজ তার কাছে বোঝাস্বরূপ। ঐ ধরনের চাপিয়ে দেওয়া কাজে সহজে মানসিক অবসাদ দেখা দেয়।
৪) মানসিক ইচ্ছার অভাবঃ কর্মসূচি বাস্তবায়নের শিক্ষার্থীর যদি অনীহা থাকে তাহলে সে দ্রুতই মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। মানসিক ইচ্ছা প্রবল হলে অনেক সময় কঠিন কাজ হলেও তা করা সম্ভব হয়। তাই মানসিক ইচ্ছার অভাব অবসাদের একটি বিশেষ কারণ।
৫) পরিবেশগত কারণঃ দৈহিক ও মানসিক কারণ ছাড়াও কিছু পরিবেশগত কারণেও অবসাদ আসতে পারে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ অর্থাৎ সেঁতসেঁতে, আলো-বাতাসের অভাব এমন পরিবেশ, খুব গরম, খুব ঠাণ্ডা বা গুমোট আবহাওয়া কোনো কাজের জন্য অনুকূল পরিবেশ নয়। এরূপ পরিবেশে সহজেই অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেশি। অনুরূপভাবে পরিমিত আলো, বাতাস, প্রশস্ত জায়গা ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ না থাকলে অল্পতেই অবসাদ এসে ভর করে।
মানসিক অবসাদ দূরীকরণের উপায়
দৈহিক ও মানসিক শক্তি ক্ষয়ের ফলেই যেহেতু অবসাদের উদ্ভব হয়, তাই দেহ ও মনের সুস্থতা ও সক্রিয়তা আনয়নের মাধ্যমে অবসাদ দূর করা সম্ভব। মানসিক অবসাদ দূরীকরণের জন্য আমরা বিষয়গুলোর উপর গুরুত্বারোপ করতে পারি:
১) কর্মসূচির প্রতি অনুরাগ সৃষ্টিঃ শিক্ষার্থীর যদি কর্মসূচির প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়, তাহলে তাড়াতাড়ি অবসাদ আসে না।
২) কর্মসূচির একঘেয়েমিতা পরিহারঃ বিরক্তিকর কর্মসূচির একঘেয়েমিতা শিক্ষার্থীকে অবসাদগ্রস্ত করে তোলে। অন্যদিকে কাজের ফাঁকে বিশ্রাম কর্মসূচিকে আনন্দপূর্ণ ও বৈচিত্র্যময় করলে অবসাদ দূর করা যায়।
৩) প্রেষণাঃ কর্মসূচিতে প্রেষণা থাকলে শিক্ষার্থীরা আনন্দের সাথে তা পালন করবে এবং শীঘ্র অবসাদ আসবে না।
৪) অতিরিক্ত চাপযুক্ত কর্মসূচি পরিহারঃ সাধ্যের অতিরিক্ত কোনো কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষার্থীদেরকে চাপ দেওয়া যাবে না।
৫) বিশ্রাম ও ঘুমঃ দেহের ক্ষয়পূরণের জন্য পুষ্টিকর খাবারের প্রয়োজন। তেমনি অবসাদ দূর করার জন্য প্রয়োজন পরিমিত বিশ্রাম ও ঘুম। বিশ্রাম ও ঘুমের ফলে দেহ ও মস্তিষ্কের অবসাদ দূরীভূত হয় এবং পুনরায় নতুন উদ্যোগে কাজ করার স্পৃহা জন্মে।
শিক্ষার্থীর উপর মানসিক অবসাদের প্রভাব
শিক্ষার্থী বলতে এখানে শারীরিক শিক্ষা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের বোঝানো হয়েছে। শারীরিক শিক্ষা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের যে দৈহিক অবসাদ আসে তা তাদের শারীরিক পরিশ্রমের পরিমাণের উপর নির্ভর করে। তাদের শারীরিক পরিশ্রমের ফলে বিপুল পরিমাণ ঘাম নিঃসরণ, শারীরিক অঙ্গ-সঞ্চালন এবং একাগ্রতার উপর প্রভাব ফেলে কিন্তু যখন তারা মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে তখন যে সব প্রভাব প্রত্যক্ষ করা যায় তা নিম্নরূপ:
১) তাদের কর্মসূচি পালনকালে ভুল হতে পারে।
২) তারা নিজেদের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলে।
৩) তাদের কাজের মধ্যে সমন্বয় থাকে না।
৪) তারা কাজের ছন্দ হারিয়ে ফেলে এবং ভুল সিদ্ধান্ত নেয়।
৫) তারা অমনোযোগী হয়ে পড়ে, কর্মসূচি বাস্তবায়নের কলাকৌশল সহজে বুঝতে পারে না।
৬) কাজের একাগ্রতা কমে যায় এবং তারা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে।