প্রথমেই কৃষিতত্ত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ Cereal এর উল্লেখ করতে হয়। এই শব্দটি রোমান দেবী Ceres এর সম্মানার্থে আয়োজিত উৎসব Cerealia হতে উদ্ভূত। Ceres শব্দের অর্থ প্রাচুর্যের দেবী (Goddess of Plenty)। অনুমান করা হয় যে, খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ সালের দিকে গ্রিসে এক ভয়াবহ খরার দরুন অজন্মা দেখা দেয়। এ অজন্মার কবল হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য এসময় হতেই Cerealia উৎসবের প্রচলন শুরু হয়। প্রাচীন গ্রিসবাসীদের ধারণা ছিল যে, Ceres এর উপাসনা করলে দেশে কোন দুর্ভিক্ষ দেখা দিবে না, দেশ প্রাচুর্যে ভরে যাবে।
এটি সুনিশ্চিত যে, বিভিন্ন শস্যের মধ্যে সর্বপ্রথম Cereal শস্য চাষের প্রচলন শুরু হয়। এর মধ্যে বার্লি, গম এবং মিলেট বৈদিক যুগ হতে চাষ করা হয় বলে অনুমেয়। কোন কোন ঐতিহাসিকের মতে, এসব খাদ্যশস্য খ্রিস্টজন্মের ১০-১৫ হাজার বছর পূর্বেও চাষ করা হতো। রাই এবং ওট অপেক্ষাকৃত নতুন শস্য। সভ্যতার ইতিহাসের প্রথম দিকে এসব শস্য মানুষের কাছে অজ্ঞাত ছিল। পৃথিবীর অন্যতম প্রধান খাদ্যশস্য ধান সম্ভবত ৩০ শতাব্দী আগে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রথম দেখা যায়। ভুট্টা সম্প্রতি মানুষের কাছে পরিচিতি লাভ করে। একে New World Crop বলা হয়। মধ্য-আমেরিকা বা মেক্সিকো এর উৎপত্তিস্থল বলে অনুমান করা হয়। পরবর্তী কালে এটি ইউরোপ, এশিয়া এবং পৃথিবীর অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
আজ হতে মাত্র ২০০ বছর পূর্বে মৃত্তিকার উর্বরতা রক্ষার জন্য জমিতে গোবর, সবুজসার এবং চুন ব্যবহারের যথাযথ গুরুত্ব উপলব্ধি করা হয়।
১৮৮৬-১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দের পূর্ব পর্যন্তও মৃত্তিকা উন্নয়ন শিম্বি-জাতীয় গাছের অবদানের কথা মানুষ জানতে পারে নি। এসময় দু’জন জার্মান বৈজ্ঞানিক হেলরিজেল (Hellrigel) এবং উইলফার্থ (Willfarth) প্রথম আবিষ্কার করেন যে, বিশেষ একপ্রকার জীবাণু (Bacteria) এবং শিম্বি জাতীয় গাছের মিথোজীবিতা বা পারস্পরিক সহযোগিতার (Symbiosis-এর) ফলে মাটির ভৌত ধর্ম এবং খাদ্য উপাদানের উন্নতি ঘটে। এ আবিষ্কারের ফলে শিম্বি জাতীয় গাছ মৃত্তিকা উন্নয়নে এবং শস্য পর্যায়ের জন্য খুবই ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হতে থাকে।
১৯০৩ খ্রিস্টাব্দের দিকেও ইউ.এস.ডি.এ (U.S.D.A)-এর কৃষিবিজ্ঞানী হুইটনে (Whitney) এবং ক্যামরন (Camron) অভিমত প্রকাশ করেন যে, মৃত্তিকা হচ্ছে গাছের খাদ্য উপাদানের অফুরন্ত ভাণ্ডার। শস্য উৎপাদন দ্বারা এ খাদ্য উপাদান শেষ হয় না। প্রধানত অনুকূল আবহাওয়ায় সুষ্ঠু পরিচর্যা এবং শস্য-পর্যায় অনুসরণ করলেই ভালো ফলন পাওয়া যায়। কিন্তু উল্লিখিত মন্তব্য আজ ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে। এমনকি উত্তম শস্য-পর্যায়, সুষ্ঠু পরিচর্যা এবং শিম্বি জাতীয় গাছ ও নানাবিধ আবর্জনা সারের ব্যবহার ও মাটির উর্বরতা রক্ষা করতে সক্ষম নয়। তাই বহির্ভাগ হতে নানাবিধ রাসায়নিক সার (Urea, Muriate of Potash, Triple Phosphate প্রভৃতি) সরবরাহ করে মাটির যথাযথ উর্বরতা রক্ষা করা অপরিহার্য হয়ে পড়ে।