ফাইটোহরমোন কি? ফাইটোহরমোনের গুরুত্ব

ফাইটোহরমোন হলো উদ্ভিদদেহে উৎপাদিত অত্যন্ত ক্ষুদ্র পরিমাণের জৈব রাসায়নিক পদার্থ, যেগুলো উদ্ভিদের বৃদ্ধি, বিকাশ, ফুল ফোটা, ফল ধরা, পাতা ঝরে পড়া, মূলের বৃদ্ধি ইত্যাদি সকল প্রকার জীবনক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। এগুলোকে উদ্ভিদের হরমোনও বলা হয়।

উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও বিকাশ, বিভিন্ন অঙ্গ সৃষ্টি ইত্যাদি উদ্ভিদদেহে উৎপাদিত যে বিশেষ আমিষ জাতীয় জৈব রাসায়নিক পদার্থের প্রভাবে হয়ে থাকে তাই হলো ফাইটোহরমোন।

ফাইটোহরমোন হলো উদ্ভিদের সকল কাজ নিয়ন্ত্রণকারী বিশেষ ধরনের জৈব রাসায়নিক পদার্থ। ফাইটোহরমোন প্ল্যান্ট হরমোন হিসাবেও পরিচিত। এগুলি এমন রাসায়নিক উপাদান যা উদ্ভিদের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে।

সহজ ভাষায়, বিভিন্ন উদ্ভিদের হরমোন যা গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং এগুলির মধ্যে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় বজায় রাখে তাকেই ফাইটোহরমোন বলে।

উদ্ভিদে যেসব হরমোন পাওয়া যায় সেগুলো হলো – অক্সিন, জিবেরেলিন, সাইটোকাইনিন, অ্যাবিসিসিক এসিড এবং ইথিলিন।

ফাইটোহরমোনের  নাম

উল্লিখিত এসব হরমোন ছাড়াও উদ্ভিদে আরও কিছু হরমোন রয়েছে যাদের আলাদা করা বা শনাক্ত করা সম্ভব হয় নি। এদেরকে পস্টুলেটেড হরমোন বলা হয়। এরা প্রধানত উদ্ভিদের ফুল ও জনন সংশ্লিষ্ট অঙ্গের বিকাশে সহায়তা করে। এদের মধ্যে ফ্লোরিজেন এবং ভার্নালিন প্রধান। ফ্লোরিজেন পাতায় উৎপন্ন হয় এবং তা পত্রমূলে স্থানান্তরিত হয়ে পত্রমুকুলকে পুস্পমুকুল হিসেবে রূপান্তরিত করে এবং উদ্ভিদে ফুল ফুটাতে সাহায্য করে।

এরা কোষে উৎপন্ন হয় এবং উৎপত্তিস্থল থেকে বাহিত হয়ে দূরবর্তী স্থানের কোষের কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করে।

কেন ফাইটোহরমোন গুরুত্বপূর্ণ?

  • বৃদ্ধি ও বিকাশ: কোষ বিভাজন, দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি, মোটা হওয়া ইত্যাদির মাধ্যমে উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও বিকাশ নিয়ন্ত্রণ করে।
  • অঙ্গ সৃষ্টি: মূল, কাণ্ড, পাতা, ফুল, ফল ইত্যাদি অঙ্গের সৃষ্টি ও বিকাশের জন্য ফাইটোহরমোন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  • পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানো: পরিবেশের বিভিন্ন পরিবর্তনের সাথে উদ্ভিদ যাতে খাপ খাইয়ে নিতে পারে, সেজন্য ফাইটোহরমোন কাজ করে। উদাহরণস্বরূপ, আলো, তাপমাত্রা, জলের অভাব ইত্যাদির প্রতিক্রিয়া হিসেবে উদ্ভিদ যেসব পরিবর্তন ঘটায়, সেগুলো ফাইটোহরমোনই নিয়ন্ত্রণ করে।

প্রধান ফাইটোহরমোনগুলো:

  • অক্সিন: মূলের বৃদ্ধি, কাণ্ডের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি, ফল ধরা ইত্যাদি কাজে সাহায্য করে।
  • জাইবেরিলিন: কাণ্ডের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি, বীজ অঙ্কুরণ, ফুল ফোটা ইত্যাদি কাজে সাহায্য করে।
  • সাইটোকাইনিন: কোষ বিভাজন, পাতা ও ফুলের বয়স বাড়ানো ইত্যাদি কাজে সাহায্য করে।
  • এবসিসিক এসিড: পাতা ঝরে পড়া, বীজ সুপ্তাবস্থায় থাকা ইত্যাদি কাজে সাহায্য করে।
  • ইথিলিন: ফল পাকানো, পাতা ঝরে পড়া ইত্যাদি কাজে সাহায্য করে।
error: Content is protected !!