পিলখানা হত্যা কেন হয়েছিল?

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পেছনে বেশ কিছু কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে, যা একটি একক কারণে সীমাবদ্ধ নয়। এটি একটি অত্যন্ত জটিল ঘটনা, যার কারণগুলো এখনো পুরোপুরি পরিষ্কার নয়। তবে বিভিন্ন তদন্ত, আদালত এবং বিশ্লেষণে কিছু মূল কারণ উঠে এসেছে:

  • অপারেশন ডাল-ভাত কর্মসূচি: এটি একটি বিতর্কিত কল্যাণমূলক কর্মসূচি ছিল যা বিডিআর (তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলস) জওয়ানদের জন্য চালু করা হয়েছিল। এই কর্মসূচির আর্থিক লেনদেন ও লাভ-ক্ষতির হিসাব-নিকাশ নিয়ে জওয়ানদের মধ্যে ক্ষোভ ছিল। হাইকোর্টের রায়েও এই ধরনের আর্থিক কর্মসূচিকে বিভেদ ও নৈতিক স্খলনের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
  • সেনা কর্মকর্তাদের প্রতি ক্ষোভ: বিডিআর-এ কর্মরত সেনা কর্মকর্তাদের (যারা প্রেষণে দায়িত্ব পালন করতেন) প্রতি সাধারণ জওয়ানদের বিভিন্ন বিষয়ে ক্ষোভ ছিল। এর মধ্যে ছিল বৈষম্য, খারাপ ব্যবহার, ছুটির অপ্রতুলতা এবং পদোন্নতির ক্ষেত্রে অনিয়ম। হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, এই ধরনের বৈষম্য ভবিষ্যতে সেনাবাহিনী থেকে কর্মকর্তাদের বিডিআর-এ কাজ করতে নিরুৎসাহিত করতে পারে।
  • চেইন অব কমান্ড ধ্বংসের চেষ্টা: আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, বিদ্রোহের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল বাহিনীর চেইন অব কমান্ড ধ্বংস করা এবং এই সুশৃঙ্খল বাহিনীকে অকার্যকর করে তোলা।
  • ষড়যন্ত্র: বিভিন্ন তদন্ত ও বিশ্লেষণে এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। কিছু পর্যবেক্ষক মনে করেন, এটি নবনির্বাচিত সরকারকে অস্থিতিশীল করার একটি পরিকল্পিত চেষ্টা ছিল। তদন্ত কমিশনের সভাপতিও এই ঘটনাকে একটি দীর্ঘমেয়াদি ষড়যন্ত্রের ফল বলে উল্লেখ করেছেন এবং এর পেছনে রাজনৈতিক নেতাদের সংশ্লিষ্টতাও পাওয়া গেছে।
  • গোয়েন্দা ব্যর্থতা: অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, এই ধরনের একটি বড় ঘটনার পেছনে গোয়েন্দা ব্যর্থতা একটি অন্যতম কারণ। সময়মতো তথ্য পাওয়া গেলে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড হয়তো প্রতিরোধ করা যেত।

উপরে উল্লিখিত কারণগুলো ছাড়াও আরও কিছু বিষয় ছিল, যেমন:

  • শান্তিরক্ষা মিশনে বিডিআর সদস্যদের অংশগ্রহণের সুযোগ না থাকা।
  • শতভাগ রেশনিং কার্যক্রম চালুর দাবি।
  • বিডিআর সদস্যদের সামগ্রিক কল্যাণ সম্পর্কিত অন্যান্য দাবি।

এই ঘটনায় তৎকালীন বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা এবং ১৭ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। হাইকোর্ট এই ঘটনাকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করার একটি প্রচেষ্টা হিসেবে চিহ্নিত করে। তবে, এই হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনে একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের জন্য সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানা গেছে।

error: Content is protected !!