তরুলতা সহজেই তরুলতা, পশুপাখি সহজেই পশুপাখি, কিন্তু মানুষ প্রাণপণ চেষ্টায় তবে মানুষ। ভাবসম্প্রসারণ

মূলভাব: বৃক্ষ অথবা জীবজন্তুর আত্মপরিচয় তাদের নামের মধ্যেই নিহিত। কিন্তু মানুষকে অনেক চেষ্টা-সাধনা, পরিশ্রম আর কল্যাণকর কর্মসম্পাদনের মাধ্যমে মানুষরূপে আত্মপ্রকাশ করতে হয়।

সম্প্রসারিত ভাব: পৃথিবীর অসংখ্য সৃষ্টির প্রত্যেকটি ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন: তরুলতা জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই এ নামে পরিচিতি লাভকরে। পশুপাখির ক্ষেত্রেও একই কথা। কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে এর ভিন্নতা লক্ষ করা যায়। কারণ মানুষ নামটি একদিকে যেমন আত্মপরিচায়ক, অন্যদিকে তেমনি তাৎপর্যবহ। জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই তরুলতা তরুলতা বলে বিবেচিত হয়। কিন্তু জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই মানুষ মানুষ হয় না। সে প্রাণী মাত্র থাকে। মানুষকে মানুষ হয়ে উঠতে হলে চেষ্টা-সাধনা আর মানবীয় বৃত্তির চর্চার মাধ্যমে মনুষ্যজন্মের সার্থকতা প্রতিপন্ন করতে হয় এবং সত্যিকারের মানুষ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে হয়। তাকে পরিশ্রম, জ্ঞানচর্চা, ধৈর্য ও সাহসের সঙ্গে নিজের ও সমাজের কল্যাণসাধনের চেষ্টা করতে হয়; প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও অভাবগ্রস্তদের প্রতি সদয় ব্যবহার ও সহানুভূতি প্রকাশসহ আরও বহুবিধ হৃদয়বৃত্তির চর্চা করতে হয়। এছাড়া তাকে স্নেহ-প্রীতি, প্রেম-ভালোবাসা দয়া-মায়া প্রভৃতি মানবীয় বৃত্তির চর্চা করতে হয়; সমাজের অন্য দশজনের সঙ্গে স্নেহ-প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে চলতে হয়। যারা সাফল্যের সঙ্গে এসব কাজ করতে পারে তারা সত্যিকারের মানুষরূপে সমাজে আত্মপ্রকাশ করে। অন্যদিকে, যাদের মধ্যে এসবের অভাব পরিলক্ষিত হয় তারা মনুষ্য পদবাচ্য বলে গণ্য হতে পারে না বরং তারা কেবল প্রাণিসমাজের অন্তর্গত বিবেচিত হয়।

মন্তব্য: জীবজন্তু ও তরুলতার কোনো জীবনসাধনা নেই। তাদের বৈশিষ্ট্য নিসর্গ-নির্দিষ্ট; কিন্তু মানুষকে সামাজিক জীব হয়ে উঠতে হয় কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে।

error: Content is protected !!