যে একা সেই সামান্য। যাহার ঐক্য নাই, সেই তুচ্ছ।বা একতাই বল।ভাবসম্প্রসারণ

মূলভাব: মানুষ সামাজিক জীব। একতাবদ্ধ হয়েই তাকে সমাজে বসবাস করতে হয়। একা সে অসহায় ও নিঃসঙ্গ। যে মানুষ জীবন চলার পথে ঐক্যবদ্ধভাবে চলে না সে শক্তিতে দুর্বল এবং সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে অতি নগণ্য।

সম্প্রসারিত ভাব: পৃথিবীর জন্মলগ্নে মানুষ একা ও বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করত। তখন মানুষ ছিল খুবই অসহায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্য জীবজন্তুর আক্রমণ আর নানা সমস্যা তখন একা মোকাবিলা করা ছিল কষ্টদায়ক। ফলে ভয়ভীতি নিয়ে, এমনকি মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে তাদের দিনযাপন করতে হতো। এসব কারণে তখন মানুষ উপলব্ধি করল ঐক্যবদ্ধ জীবন ছাড়া তাদের পক্ষে বেঁচে থাকা অসম্ভব। তাই মানুষ নিজ প্রয়োজনে তখন গড়ে তোলে সমাজবদ্ধ জীবন এবং হয়ে ওঠে ঐক্যবদ্ধ শক্তিতে বলীয়ান। আমরা জানি, বর্তমানেও কারো পক্ষেই একাকী জীবনযাপন করা সম্ভব নয়। কোনো জাতি এবং রাষ্ট্রের পক্ষেও একাকী পৃথিবীর বুকে টিকে থাকা সম্ভব নয়। পৃথিবীতে যে দেশ বা জাতি উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছেছে তারা সবাই ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা এবং চেতনার দ্বারা তা সম্ভব করেছে। একটি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য প্রয়োজন সমগ্র দেশের জনগণের এক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা, দেশপ্রেম, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা। তা না হলে দেশ বা জাতি এগোতে পারে না। পৃথিবীর বহু দেশ ঐক্যহীনতার কারণে কাঙ্ক্ষিত উন্নতি অর্জন করতে পারেনি। যেমন: সোমালিয়া, বসনিয়া, ইথিওপিয়াসহ আরও অনেক দেশ। মূলত, জনগণের ঐক্যের অভাব আর সুবিধাভোগী মানুষের লেজুড়বৃত্তির কারণে বহু দেশ আজ বিপর্যয়ের মুখোমুখি। অন্যদিকে, বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতা এনেছে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে। স্বাধীনতা-সংগ্রামের সময় যদি বাংলার মানুষ দ্বিধাবিভক্ত থাকত তাহলে বাংলাদেশকে স্বাধীন করা সম্ভব হতো না।

মন্তব্য: ঐক্য বা একতার এ মূলমন্ত্র মানুষের মধ্যে সাহস সঞ্চয় করে, মানুষকে দৃঢ়প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করে, মানুষের মধ্যে অনুপ্রেরণা জোগায়, সর্বোপরি মানুষকে একসূত্রে আবদ্ধ করে।

error: Content is protected !!