চোখ লাফানো বা চোখের পাতা কাঁপা (চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় যাকে ‘মায়োকেমিয়া’ বা ‘ব্লেফারোস্পাজম’ বলা হয়) একটি সাধারণ সমস্যা এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি গুরুতর কিছু নয়। এর পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ থাকতে পারে, যার মধ্যে প্রধানগুলো হলো:
১. মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা
যখন আমরা মানসিক চাপে থাকি, শরীর বিভিন্ন উপায়ে তার প্রতিক্রিয়া দেখায়। চোখের পাতা লাফানো মানসিক চাপের একটি সাধারণ লক্ষণ হতে পারে।
২. ক্লান্তি ও ঘুমের অভাব
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে বা শরীর অতিরিক্ত ক্লান্ত থাকলে চোখের পেশীও ক্লান্ত হয়ে যায় এবং লাফানো শুরু করতে পারে।
৩. অতিরিক্ত ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল সেবন
বেশি পরিমাণে চা, কফি বা অ্যালকোহল গ্রহণ করলে চোখের পেশী উত্তেজিত হতে পারে, যার ফলে চোখের পাতা লাফাতে পারে।
৪. চোখের উপর চাপ বা শুষ্কতা
দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটার, মোবাইল বা টিভির স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখে চাপ পড়ে এবং চোখ শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। এর ফলেও চোখের পাতা লাফাতে পারে। এছাড়াও চোখে যদি ধুলোবালি বা অন্য কিছু প্রবেশ করে, তাহলেও জ্বালা করে চোখ লাফাতে পারে।
৫. পুষ্টির অভাব
শরীরে কিছু নির্দিষ্ট পুষ্টি উপাদানের অভাব থাকলে, যেমন – ম্যাগনেসিয়াম বা ভিটামিন বি১২-এর অভাব হলে চোখের পাতা লাফানোর সমস্যা হতে পারে।
৬. অ্যালার্জি
যাদের চোখে অ্যালার্জি আছে, তারা চোখ চুলকালে হিস্টামিন নির্গত হয়, যা চোখের পাতা লাফানোর কারণ হতে পারে।
৭. কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
কিছু নির্দিষ্ট ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেও চোখের পাতা লাফাতে পারে।

Frequently Asked Questions
চোখ লাফানো কি?
চোখ লাফানো বলতে চোখের পাতা, বিশেষ করে উপরের পাতার অনিচ্ছাকৃত এবং পুনরাবৃত্তিমূলক সংকোচন বা কাঁপুনি বোঝায়। এটি মাইওকিমিয়া (myokymia) নামেও পরিচিত।
চোখ লাফানো কি গুরুতর কোনো রোগের লক্ষণ হতে পারে?
সাধারণত চোখ লাফানো গুরুতর কোনো রোগের লক্ষণ নয়। তবে, খুব বিরল ক্ষেত্রে এটি স্নায়বিক রোগের (যেমন: ব্লেফারোস্পাজম, হেমোফেসিয়াল স্পাজম) লক্ষণ হতে পারে, বিশেষ করে যদি লাফানো দীর্ঘস্থায়ী হয়, চোখের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে, বা সাথে অন্য কোনো উপসর্গ (যেমন: মুখের পেশী দুর্বল হওয়া) থাকে।
চোখ লাফানো কতক্ষণ স্থায়ী হয়?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চোখ লাফানো কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘণ্টা স্থায়ী হয় এবং তারপর নিজে থেকেই থেমে যায়। তবে, কিছু ক্ষেত্রে এটি কয়েক দিন বা এমনকি সপ্তাহখানেকও স্থায়ী হতে পারে।
কখন ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত?
যদি চোখ লাফানো দীর্ঘস্থায়ী হয় (কয়েক সপ্তাহ ধরে চলতে থাকে), চোখের পাতা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়, মুখ বা শরীরের অন্যান্য অংশেও খিঁচুনি হয়, চোখ লাল হয়ে যায়, ফুলে যায়, বা চোখ থেকে অস্বাভাবিক স্রাব হয়, তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ম্যাগনেসিয়ামের অভাব কি চোখ লাফানোর কারণ?
হ্যাঁ, ম্যাগনেসিয়াম পেশী এবং স্নায়ুর সঠিক কার্যকারিতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই খনিজটির অভাবে পেশী দুর্বলতা, ক্র্যাম্প এবং অনিচ্ছাকৃত পেশী সংকোচন (যেমন চোখ লাফানো) হতে পারে।