জাতীয় শিক্ষা পরিষদ কেন প্রতিষ্ঠিত হয়?

জাতীয় শিক্ষা পরিষদ কেন প্রতিষ্ঠিত হয়?

জাতীয় শিক্ষা পরিষদ ১৯০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর প্রতিষ্ঠার প্রধান কারণগুলো হলো:

  • ব্রিটিশ প্রবর্তিত শিক্ষানীতির বিরোধিতা: তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত শিক্ষানীতি ভারতীয়দের প্রয়োজন ও আকাঙ্ক্ষার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না। এই শিক্ষাব্যবস্থা মূলত কেরানি তৈরির লক্ষ্যে গঠিত হয়েছিল এবং এতে ভারতীয় সংস্কৃতি, ইতিহাস ও দর্শন উপেক্ষিত ছিল। জাতীয় শিক্ষা পরিষদ এই নীতির বিরোধিতা করে একটি বিকল্প, স্বদেশী শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে চেয়েছিল।
  • দেশের প্রয়োজনে স্বদেশী ধাঁচে শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা: জাতীয় নেতৃবৃন্দ উপলব্ধি করেছিলেন যে দেশের উন্নতি ও বিকাশের জন্য একটি নিজস্ব, জাতীয়তাবাদী শিক্ষাব্যবস্থা প্রয়োজন। এই শিক্ষাব্যবস্থা ভারতীয় ঐতিহ্য ও মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে তৈরি হবে এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধ জাগিয়ে তুলবে।
  • সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন ও বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় জাতীয় ভাবনায় শিক্ষাদান: পরিষদ চেয়েছিল এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা যেখানে সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন এবং বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় জাতীয় দৃষ্টিকোণ থেকে জ্ঞান দান করা হবে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারবে এবং নিজেদেরকে বৃহত্তর জাতীয় পরিচয়ের অংশ হিসেবে অনুভব করবে।
  • কারিগরি শিক্ষাকে গুরুত্ব প্রদান: জাতীয় শিক্ষা পরিষদ উপলব্ধি করেছিল যে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কারিগরি শিক্ষার প্রসার অপরিহার্য। তাই তারা কারিগরি শিক্ষাকে সর্বজনীন ও বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নিয়েছিল এবং বাংলা ভাষার মাধ্যমে বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা করেছিল।
  • শারীরিক ও নৈতিক শিক্ষার প্রসার: শুধুমাত্র একাডেমিক শিক্ষাই নয়, শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও নৈতিক বিকাশের উপরও জোর দেওয়া হয়েছিল। পরিষদের লক্ষ্য ছিল এমন নাগরিক তৈরি করা যারা শারীরিকভাবে সক্ষম এবং নৈতিক মূল্যবোধ সম্পন্ন হবে।

মোটকথা, জাতীয় শিক্ষা পরিষদ ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা দূর করে একটি স্বাধীন, জাতীয়তাবাদী এবং দেশের প্রয়োজনে উপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

error: Content is protected !!