অথবা, সম্রাট আওরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীতির কারণ আলোচনা কর।

সম্রাট আওরঙ্গজেবের সাম্রাজ্য দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল। প্রথম ভাগে (১৬৫৮-১৬৮১ খ্রি.) পর্যন্ত তিনি উত্তর ভারতে এবং (১৬৮১-১৭০৭ খ্রি.) পর্যন্ত তিনি দক্ষিণ ভারতে অতিবাহিত করেন। যা দাক্ষিণাত্য নামে পরিচিত। সম্রাট আওরঙ্গজেবের জীবনে দাক্ষিণাত্য একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এ দাক্ষিণাত্য নীতিতে তিনি সাফল্য লাভ করতে পারেননি।
ঐতিহাসিক এডওয়ার্ড এবং গ্যারেট বলেন, আওরঙ্গজেব ষোড়শ শতাব্দীর আকবরের অনুসৃত আক্রমণাত্মক সাম্রাজ্যবাদী নীতি অনুসরণ করেন এবং এ ব্যাপারে জাহাঙ্গীর এবং শাহজাহানের নীতি তাকে উৎসাহিত করেছিল। নিম্নে সম্রাট আওরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীতির কারণ আলোচনা করা হলো :
১. সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি : দাক্ষিণাত্যের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বাধীন মুসলিম রাজ্যগুলো যেমন বিদর, বেরার, বিজাপুর, গোলকুণ্ডা এবং আহমদনগর প্রভৃতি মুঘল সাম্রাজ্যের সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকিস্বরূপ ছিল।
২. করদানে বিরত থাকা : দাক্ষিণাত্যের সুলতানগণ সম্রাট আওরঙ্গজেবকে নিয়মিত করদানে বিরত থাকলে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রয়োজনে সম্রাট আওরঙ্গজেবকে দাক্ষিণাত্যে অভিযান করতে হয়।
৩. আকবরের বিদ্রোহ দমন : বিদ্রোহী পুত্র আকবর, মারাঠা বীর শম্বুজীর সঙ্গে মৈত্রী প্রতিষ্ঠা করলে সম্রাট আওরঙ্গজেব অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়েন এবং তাকে দমনের উদ্দেশ্যে দাক্ষিণাত্যে অভিযান করেন।
৪. মারাঠা শক্তি ধ্বংস : মারাঠারা দাক্ষিণাত্যে তখন খুব শক্তিশালী ছিল। ফলে তাদের শক্তি ধ্বংসের জন্য সম্রাটকে উক্ত নীতি গ্রহণ করতে হয়।
৫. বিজাপুর ও গোলকুণ্ডাকে সাম্রাজ্যভুক্তকরণ : সম্রাট আওরঙ্গজেব দাক্ষিণাত্যে অবস্থিত বিজাপুর গোলকুণ্ডা জয় করার জন্য দীর্ঘ দিন মনে লালন করতেন। কারণ তার পূর্বপুরুষরাও যেমন আকবর, শাহজাহান এবং জাহাঙ্গীর দাক্ষিণাত্যকে নিজের সাম্রাজ্যভুক্ত করেন। ফলে সম্রাট আওরঙ্গজেব পূর্বের লালায়িত ইচ্ছা নিয়ে বিজাপুর ও গোলকুণ্ডা ময়ের মনস্থ করেন
৬. মারাঠাদের সাথে যুদ্ধ : পূর্বে মারাঠাদের সাথে কয়েকবার যুদ্ধের পর অবশেষে ১৭০০ সালে তৃতীয় শিবাজী এবং তার মাতা তারাবাঈ অত্যন্ত দক্ষতার সাথে মুঘলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। কিন্তু মুঘল বাহিনী তাদেরকে পরাজিত করে একে একে তাদের নিকট থেকে কোন্দানা, খেলনা, পানহালা, তোরণা, পালি প্রভৃতি দুর্গ অধিকার করতে সক্ষম হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সম্রাট আওরঙ্গজেবের জীবনে দাক্ষিণাত্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দাক্ষিণাত্য নীতির ফলে তিনি কতিপয় রাজ্য দখল করলেও তিনি মূলত সবকিছুই হারালেন। ফলে এ সময় হতেই তার পতনের সূচনা হয়। ঐতিহাসিক ড. কে. কে. দত্ত বলেন, তিনি বুঝতে সক্ষম হননি যে, নিয়তিই তাকে দাক্ষিণাত্যে টেনে নিয়ে যাচ্ছে তার এবং তার সাম্রাজ্যের সমাধি রচনা করতে।
যে প্রশ্নের উত্তর জানলাম: সম্রাট আওরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীতির কারণগুলো ব্যাখ্যা কর।