জিয়ড হল পৃথিবীর আকৃতির একটি গাণিতিক মডেল, যা সমুদ্রের পৃষ্ঠের আকৃতির অনুরূপ। যদি পৃথিবীতে কোনো বাধা না থাকত, তাহলে সমুদ্রের পৃষ্ঠ একটা সমান্তরাল তল হয়ে থাকত। কিন্তু পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠের অসমতলতা, পাথরের ঘনত্বের পার্থক্য এবং পৃথিবীর ঘূর্ণনের কারণে সমুদ্রের পৃষ্ঠও সম্পূর্ণ সমান্তরাল হয় না। এই অসমতলতাকেই গাণিতিক ভাষায় জিয়ড বলা হয়।
সহজ কথায়, জিয়ড হল পৃথিবীর একটি কাল্পনিক সমুদ্রতল, যা পুরো পৃথিবীকে ঢেকে রয়েছে। এই কাল্পনিক সমুদ্রতলের সব বিন্দুতে অভিকর্ষ বলের মান একই থাকে।

পৃথিবীর আকৃতি সম্পর্কে কৃত্রিম উপগ্রহের পাঠানো ছবিতে দেখা যায় পৃথিবীর দক্ষিণ মেরু চাপা, কিন্তু উত্তর মেরু চাপা নয়। উত্তর মেরু ২০ পৃথিবীর ছি স্ফীত। পূর্ব শষ্ট্যগুলিয়া তাঁর তয়ে মিটার উঁচু, দক্ষিণ মেরু ২০ মিটার নীচু। উত্তর গোলার্ধের মধ্যবর্তী অক্ষাংশ ৮ মিটার বসে গেছে এবং দক্ষিণ গোলার্ধের পৃথিবীর আকৃতি পৃথিব মধ্যবর্তী অক্ষাংশ ৮ মিটার ফুলে উঠেছে। -এর উচ্চতা ৮,৮৪৮ মি সুতরাং পৃথিবীর আকৃতি কোনো বস্তুর মারিয়ানাখাতের চ্যালে সাথে তুলনীয় নয়। পৃথিবীর গড় অবস্থা বা আকৃতি বোঝাতে ‘জিয়ড’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। মহাদেশগুলির ওপর দিয়ে খাল কেটে মহাসাগরগুলি যুক্ত করলে সারা পৃথিবীব্যাপী একটি গড় সমুদ্রতল বা জল পৃষ্ঠদেশবিশিষ্ট পৃথিবীর অবয়ব পাওয়া যায়। এইরূপ গোলাকার সমঅভিকর্ষজ পৃষ্ঠদেশবিশিষ্ট পৃথিবীকে ‘জিয়ড’ বলে ।
জিয়ড কি?
জিয়োড হল পৃথিবীর আকারকে বর্ণনা করার একটি গুরুত্বপূর্ণ গাণিতিক মডেল। এটি ভূগোল, ভূগণিত, জিআইএস এবং অন্যান্য বিজ্ঞান শাখায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
জিয়ড কথার অর্থ কি? বা জিয়ড শব্দের অর্থ কি?
গ্রিক শব্দ geo ও eidos মিলে Geold শব্দের উৎপত্তি geo শব্দের অর্থ পৃথিবী এবং eidos শব্দের অর্থ দেখতে বা দেখা। জিয়ড শব্দের আভিধানিক অর্থ পৃথিবী সদৃশ বা পৃথিবীর মতো দেখতে।

জিয়ড বলতে কি বোঝ?
জিয়ড (Geoid) হল পৃথিবীর আকৃতির একটি গাণিতিক মডেল, যা সমুদ্রের পৃষ্ঠের আকৃতির খুব কাছাকাছি। যদি পৃথিবীর সমস্ত জায়গায় সমুদ্রের পানি একই উচ্চতায় থাকতো, তাহলে তার তল যে আকৃতি ধরতো, সেটাই হল জিয়ড।
জিয়ড’এর বৈশিষ্ট্য
- অনিয়মিত আকৃতি: পৃথিবীর ভূ-ত্বকের ঘনত্বের তারতম্যের কারণে জিয়ডের আকৃতি সম্পূর্ণ গোলাকার নয়। এটি কিছুটা আখরোটের মতো আকৃতির।
- গতিশীল: পৃথিবীর ভূ-ত্বকের নিরন্তর পরিবর্তনের কারণে জিয়ডও ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়।
- সমুদ্রতলের সাথে মিল: জিয়ড সমুদ্রতলের সাথে মোটামুটি মিলে যায়। অর্থাৎ, সমুদ্রের যেসব স্থানে কোনো জোয়ার-ভাটা বা সমুদ্রের ধারার প্রভাব নেই, সেখানে সমুদ্রতল জিয়ডের খুব কাছাকাছি থাকে।
জিয়ড এর ধারণা
কৃত্রিম উপগ্রহ প্রেরিত দূরসংবেদন চিত্র (remote sensing image) ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন—
১) পৃথিবীর শুধুমাত্র দক্ষিণ মেরু সামান্য চাপা।
২) দক্ষিণ মেরু 20 মিটার অতি নীচু এবং উত্তর মেরু 20 মিটার অতি উঁচু।
৩) দক্ষিণ গোলার্ধের মধ্য অক্ষাংশ ৪ মিটার ফুলে উঠেছে ; আর উত্তর গোলার্ধের মধ্য অক্ষাংশ ৪ মিটার বসে গিয়েছে।
৪) পৃথিবীপৃষ্ঠের রূপ ও পদার্থের ঘনত্ব সর্বত্র সমান না হওয়ায় অভিকর্ষজ বলের পার্থক্য হয়। উত্তর গোলার্ধে স্থলভাগ বেশি ও দক্ষিণ গোলার্ধে জলভাগ বেশি।
অর্থাৎ উত্তর গোলার্ধ দক্ষিণ গোলার্ধের তুলনায় পদার্থের পরিমাণ বেশি। অন্যদিকে পদার্থের ঘনত্বের তারতম্যে অভিকর্ষজ বলের তারতম্য ঘটে। এজন্য সব জায়গায় সমান অভিকর্ষজ বল অনুযায়ী যদি একটি রেখা কল্পনা করা যায় তখন জিয়ড পৃষ্ঠ দেখতে অনিয়মিত হয়।
৫) পৃথিবীর আকৃতি অনেকটা কমলালেবু বা ন্যাস্পাতির মতো। পৃথিবীর এই বিশিষ্ট আকৃতিটি আমাদের পরিচিত কোনো বস্তুর সঙ্গে সঠিকভাবে তুলনীয় নয়, তাই বলা যায় যে, পৃথিবীর প্রকৃত আকৃতি পৃথিবীরই মতো (the earth is earth shaped) যাকে ইংরেজিতে বলা হয় ‘জিয়ড’ (GEOID = Earth Shaped)। পৃথিবী পুরোপুরি গোলাকার নয়। পৃথিবীর মধ্যভাগ খানিকটা স্ফীত প্রায় 43 কিমি।

জিয়ডের আকার কেমন?
পৃথিবী একটি নিখুঁত গোলক নয়। এর আকার কিছুটা চ্যাপ্টা গোলকের মতো। জিয়ডও এই আকৃতির অনুরূপ। এটি সমুদ্রের গড় জলস্তরের সাথে মিলে যাওয়ার কারণে মহাদেশের উঁচু নিচু স্থানের কারণে এর আকার কিছুটা অনিয়মিত।
জিয়ড গুরুত্বপূর্ণ কেন?
- উচ্চতা পরিমাপ: জিয়ডকে রেফারেন্স পৃষ্ঠ হিসেবে ব্যবহার করে পৃথিবীর যেকোনো বিন্দুর উচ্চতা নির্ণয় করা হয়।
- ভূগোলিক তথ্য ব্যবস্থা (GIS): জিআইএস-এ জিয়ডের তথ্য ব্যবহার করে বিভিন্ন ভূগোলিক তথ্যকে আরও সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয়।
- উপগ্রহ ন্যাভিগেশন: উপগ্রহ ন্যাভিগেশন সিস্টেমগুলো জিয়ডের তথ্য ব্যবহার করে সঠিক অবস্থান নির্ণয় করে।
- ভূকম্পবিজ্ঞান: ভূকম্পের সময় পৃথিবীর পৃষ্ঠের পরিবর্তন মাপার ক্ষেত্রে জিয়ডের তথ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।