ক্যাথোড রশ্মি কাকে বলে? ক্যাথোড রশ্মির উৎপাদন, ক্যাথোড রশ্মির ধর্ম, ক্যাথোড রশ্মির ব্যবহার, ক্যাথোড রশ্মির প্রকৃতি

ক্যাথোড রশ্মি কাকে বলে?

খুব কম বায়ু চাপে তড়িৎ মোক্ষণ নলের গ্যাসের মধ্যে তড়িৎ দ্বারের সাহায্যে উচ্চ বিভব পার্থক্য সৃষ্টি করলে ক্যাথোড থেকে অ্যানোডের দিকে ধাবমান তীব্র গতিবেগ সম্পন্ন ইলেকট্রন কণার স্রোতকে ক্যাথোড রশ্মি বলে।

নিম্ন চাপে তড়িৎ ক্ষরণ নলের ক্যাথোড থেকে যে ইলেকট্রন নির্গত হয়ে লম্বভাবে প্রায় আলোর বেগে ক্ষরণ নলের বিপরীত দিকের দেয়ালে প্রতিপ্রভার সৃষ্টি করে সেই রশ্মিকে ক্যাথোড রশ্মি বলে।

তড়িৎমোক্ষণ নলের বায়ু চাপ 0.01 mm পারদস্তম্বের সমান হলে অ্যানোড ও ক্যাথোডের মধ্যে উচ্চ বিভব প্রভেদে ক্যাথোড থেকে এক প্রকার রশ্মি নির্গত হয়ে অ্যানোডের দিকে যায়। একে ক্যাথোড রশ্মি বলে। (পরে দেখা যায় ক্যাথোড রশ্মি প্রকৃতপক্ষে প্রচণ্ড বেগে ধাবমান ঋণাত্মক আধানবাহী ইলেকট্রনকণার স্রোত)

ক্যাথোড রশ্মির উৎপাদন

একটি তড়িৎ মোক্ষণ নলের মধ্যে গ্যাসের চাপ 0.01 mm পারদস্তম্ভের সমান করা হয়। এবার ক্যাথোড ও অ্যানোডের মধ্যে আবেশ কুণ্ডলীর সাহায্যে উচ্চ বিভব প্রভেদ (10,000 volt) প্রয়োগ করা হয়। সে সময়ে ক্যাথোড থেকে যে কণিকা স্রোত নির্গত হয় তাই হল ক্যাথোড রশ্মি। এভাবে ক্যাথোড রশ্মি উৎপন্ন হয়।


ক্যাথোড রশ্মির ধর্ম

১. ক্যাথোড রশ্মি ক্যাথোড পৃষ্ঠ থেকে লম্বভাবে নির্গত হয়।

২. ক্যাথোড রশ্মি অদৃশ্য। উপযুক্ত পদার্থের উপর ক্যাথোড রশ্মি পড়লে প্রতিপ্রভার সৃষ্টি হয়। এই প্রতিপ্রভায় উৎপন্ন রং পদার্থের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে। উদাহরণ - কাচের ক্ষেত্রে সুবজ অ্যালুমিনিয়ামের ক্ষেত্রে লাল।

৩. ক্যাথোড রশ্মি সরল রেখায় চলে।

৪. ক্যাথোড রশ্মির গতিশক্তি আছে এবং কোনো বস্তুর উপর পড়লে তাপীয় শক্তি উৎপন্ন করে।

৫. ক্যাথোড রশ্মির ভরবেগ আছে এবং কোনো বস্তুর উপর পড়লে তাপীয় শক্তি উৎপন্ন করে।

৬. ক্যাথোড রশ্মিগুলি পরস্পরকে বিকর্ষণ করে।

৭. ক্যাথোড রশ্মি চৌম্বক ক্ষেত্রে বিক্ষিপ্ত হয়।

৮. ক্যাথোড রশ্মি তড়িৎক্ষেত্রে বিক্ষিপ্ত হয়।

৯. ক্যাথোড রশ্মি ঋণাত্মক আধানযুক্ত।

১০. ক্যাথোড রশ্মি সোনা, রূপা, অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতি ধাতুর খুব পাতলা পাত ভেদ করতে পারে। 

১১. ক্যাথোড রশ্মি ফটোগ্রাফিক প্লেটের উপর ক্রিয়া করে।


ক্যাথোড রশ্মির ধর্ম

ক্যাথোড রশ্মি সরল রেখায় গমন করে - ধর্ম প্রদর্শনের পরীক্ষা

অ্যানোডের দিকটা বেশ চওড়া এরূপ একটি বিশেষ ধরনের তড়িৎমোক্ষণ নল নেওয়া হল যার মধ্যে একটি অ্যালুমিনিয়াম পাতের ক্রসকে অ্যানোড হিসাবে ব্যবহার করা হয়। এই নলে গ্যাসের চাপ 0.01 mm পারদস্তম্ভের সমান করে তড়িৎদ্বার দুটিতে উচ্চ বিভব প্রভেদ (10,000 V বা বেশি) প্রয়োগ করলে দেখা যাবে অ্যানোডের পিছনে কাচের দেওয়ালে প্রতিপ্রভা সৃষ্টি হয়েছে এবং তার মধ্যে অ্যালুমিনিয়াম ক্রসের একটি ছায়া সৃষ্টি হয়েছে। এই ছায়ার কোন উপচ্ছায় থাকে না। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ক্যাথোড রশ্মি ক্যাথোড পাতের সঙ্গে লম্বভাবে নির্গত হয় এবং সরলরেখায় গমন করে।

ক্যাথোড রশ্মি সরল
রেখায় গমন করে

ক্যাথোড রশ্মি তাপীয় শক্তি উৎপন্ন করে - ধর্ম প্রদর্শনের পরীক্ষা

এমন একটি তড়িৎ মোক্ষণ নল নেওয়া হলো যার ক্যাথোড অবতল। ক্যাথোডের বক্রতাকেন্দ্রে একটি প্লাটিনাম অ্যানোড রাখা হলো। এখন মোক্ষণ নলে ক্যাথোড রশ্মি উৎপন্ন করলে ক্যাথোড রশ্মি কেন্দ্রীভূত হয়ে প্লাটিনাম পাতের উপর পড়বে। কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখা যাবে যে প্লাটিনাম পাতটি উত্তপ্ত হয়ে লাল হয়েছে। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, ক্যাথোড রশ্মি তাপীয় শক্তি উৎপাদন করে।

ক্যাথোড রশ্মি তাপীয়
শক্তি উৎপন্ন করে


ক্যাথোড রশ্মি চাপ প্রয়োগ করে - ধর্ম প্রদর্শেনের পরীক্ষা

অভ্রের পাতলা পাত দিয়ে তৈরি একটি চাকাকে বিশেষভাবে তৈরি মোক্ষণ নলের মধ্যে এমনভাবে রাখা হয় যাতে মোক্ষণ নলে উৎপন্ন ক্যাথোড রশ্মি সরাসরি ঐ চাকার উপর পড়তে পারে। এই অবস্থায় ক্যাথোড রশ্মি উৎপন্ন হবে, দেখা যাবে চাকাটি ধীরে ধীরে ঘুরছে। এর থেকে প্রমাণিত হয় যে ক্যাথোড রশ্মির ভরবেগ আছে এবং এটি চাপ প্রয়োগ করে।

ক্যাথোড রশ্মি চাপ প্রয়োগ করে

ক্যাথোড রশ্মির ব্যবহার

১) ক্যাথোড রশ্মি ওসিলোস্কোপে ব্যবহার করা হয়।

২) টেলিভিশন পিকচার টিউবে ব্যবহার করা হয়।

৩) X - রশ্মি উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়।


ক্যাথোড রশ্মির প্রকৃতি

ক্যাথোড রশ্মির ধর্ম থেকে জানা যায়, এগুলি এক ধরনের দ্রুতগামী ঋণাত্মক কণিকার স্রোত। তড়িৎ মোক্ষণ নলে নিম্নচাপে ও উচ্চ বিভব প্রভেদে ক্যাথোড থেকে এগুলি নির্গত হয়ে অ্যানোডের দিকে যায়। তড়িৎ মোক্ষম নলে যে গ্যাস থাকুক না কেন, ক্যাথোড বা অ্যানোড যে পদার্থ দিয়ে তৈরি হোক না কেন ক্যাথোড থেকে নির্গত এই কণিকাগুলির ধর্ম একই হয়। এও বোঝা যায় সমস্ত পদার্থের মধ্যে এই কণিকাগুলি আছে। পদার্থের একটি মৌলিক উপাদান হিসেবে এই কণিকা চিহ্নিত হয়। তড়িৎ বিশ্লেষণ সম্পর্কিত পরীক্ষা থেকে বিজ্ঞানী স্টোনী তড়িৎ বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে একপ্রকার অবিভাজ্য তড়িৎ কণিকার অস্তিত্ব সম্পর্কে সিদ্ধান্তে আসেন। এই কণিকার নাম দেন ইলেকট্রন। পরে প্রমাণিত হয় ক্যাথোড রশ্মি হলো প্রকৃতপক্ষে দ্রুতগতি সম্পন্ন ইলেকট্রন প্রবাহ।

আরো পড়ুনঃ

👉 যৌগিক পদার্থ কাকে বলে?

👉 হিমাঙ্ক কাকে বলে?

👉 নিউরন কি বা কাকে বলে? নিউরনের গঠন ও নিউরনের কাজ

👉 প্রিজম কাকে বলে?

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url