ল্যাবরেটরি ব্যবহার বিধি : পোষাক, নিরাপদ গ্যাস, মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভস

আমরা জানবো -

  • ল্যাবরেটরির ব্যবহার বিধি
  • ল্যাবরেটরিতে পোশাক পরিধানের সঠিক নিয়ম
  • ল্যাবরেটরিতে গ্লাস, মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার বিধি

১. পোশাক

ল্যাবরেটরিতে কখনোই ঢিলেঢালা জামাকাপড় ব্যবহার করা উচিত নয়। ল্যাবরেটরিতে প্রবেশের আগে ছাত্রছাত্রীদের সাদা অ্যাপ্রন (Apron) পরতে হবে। রাসায়নিক দ্রব্য দ্বারা যাতে জামা কাপড় নষ্ট না হয় সেজন্য অ্যাপ্রন পরা জরুরি। এছাড়াও অ্যাপ্রন পরিধানে ল্যাবরেটরিতে কাজ করার জন্য শিক্ষার্থীরা মানসিক প্রস্তুতি লাভ করে। ছাত্রীরা প্রয়োজনে চুল বেঁধে মাথায় স্কার্ফ পরতে পারে।

২. নিরাপদ গ্লাস

চোখ মানুষের মূল্যবান সম্পদ। তাই চোখের সুরক্ষার জন্য ল্যাবরেটরিতে নিরাপদ গ্লাস ব্যবহার করা উচিত। বিকারক বা রিয়াজেন্ট টেস্টটিউবে নিয়ে উত্তপ্ত করার সময় অনেক সময় তীব্র বেগে টেস্টটিউব থেকে বেরিয়ে আসে। উত্তপ্ত এবং তীব্র বেগে বেরিয়ে আসা রিয়েজেন্ট কোনোভাবে চোখে পড়লে মারাত্মক ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে চোখে গ্লাস ব্যবহার করলে এরূপ দুর্ঘটনা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। গ্লাসের ফাঁক দিয়ে যেন গ্যাসীয় পদার্থ প্রবেশ করতে না পারে এজন্য গ্লাসের পার্শ্ব দিয়ে প্লাস্টিক লাগানো নিরাপত্তা গ্লাস ব্যবহার করা উত্তম।

৩. মাস্ক

ল্যাবরেটরিতে কোনো কোনো পরীক্ষায় মারাত্মক বিষাক্ত ও দুর্গন্ধযুক্ত গ্যাস নির্গত হয়। কোনোভাবে এসব গ্যাস নাসিকা দ্বারা ভিতরে প্রবেশ করলে মাথাব্যথা, বমি হওয়া, শ্বাসকষ্ট, চোখে পানি আসা, চোখ লাল হওয়া এমনকি শিক্ষার্থী অনেক সময় জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারে। এসব দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য মাস্ক ব্যবহার করা খুবই প্রয়োজন। ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা কার্য পরিচালনার সময় সাধারণত H2S, SO2, NO2, CO2, NH3, Cl2 প্রভৃতি গ্যাস উৎপন্ন হয়। এ গ্যাসগুলোর ক্ষতিকর প্রভাব বিদ্যমান। মাস্ক ব্যবহার করলে এসব গ্যাসের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

৪. হ্যান্ড গ্লাভস

ল্যাবরেটরিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থগুলোর বেশির ভাগই হাতে, গায়ে বা চামড়ায় লাগলে ক্ষতিসাধন করে। এসব রাসায়নিক দ্রব্য খালি হাতে স্পর্শ করা ঠিক না। এজন্য ল্যাবরেটরিতে কাজ করার সময় হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার করা দরকার। এছাড়া রিয়াজেন্ট বোতলের ছিপি খুলতে বা আটকানোর ক্ষেত্রে হাতে গ্লাভস পরে নিতে হবে। ভাঙা কাচের টুকরা, ব্যবহৃত ফিল্টার পেপার, ব্যুরেট, পিপেট, ইত্যাদি খালি হাতে না ধরে গ্লাভস পরা অবস্থায় ব্যবহার করা উত্তম।

গ্লাভসে কোনো ছিদ্র বা ছেঁড়া আছে কি না তা দেখে ব্যবহার করতে হবে। হাত থেকে গ্লাভস খোলার সময় হাতের কবজির দিক থেকে টেনে খুলতে হয়। গ্লাভস খোলার সময় বা ব্যবহারের সময় গ্লাভসে লেগে থাকা রাসায়নিক বস্তু যেন শরীরের ত্বকের সংস্পর্শে না আসে তা খেয়াল রাখতে হবে। ব্যবহার অনুপযোগী বা সংক্রমিত গ্লাভস নির্ধারিত বর্জ্য পাত্রে ফেলতে হবে। গ্লাভস খোলার পর ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিতে হবে। 

মৃদু ক্ষয়কারী পদার্থ, অস্বস্তিকর জ্বালা সৃষ্টিকারী পদার্থ, বৈদ্যুতিক শক্ থেকে রক্ষার জন্য PVC গ্লাভস বা ল্যাটেক্স গ্লাভস বা নিওপ্রিন গ্লাভস ব্যবহার করা হয়। শিখা পরীক্ষার মতো ছোটখাটো জ্বলন্ত বস্তু নিয়ে কাজ করার সময় জিটেক্স গ্লাভস ব্যবহার করা ভালো। এক্ষেত্রে ক্যান্সার সৃষ্টির বৈশিষ্ট্যের কারণে অ্যাসবেস্টসের গ্লাভস বর্তমানে ল্যাবরেটরিতে ব্যবহৃত হয় না।

এছাড়াও ছাত্রছাত্রীদের নিম্নলিখিত বিষয়গুলো জানা জরুরি -

  • বিপজ্জনক বস্তু (গাঢ় H2SO4, গাঢ় HNO3, TNT, তীব্র ক্ষার), দাহ্য বস্তু (বেনজিন, পেট্রোল, স্পিরিট), বিষাক্ত গ্যাস (H2S, HCN, Hg, NH3, Cl2) প্রভৃতি নিয়ে কাজ করার সময় শিক্ষকের পরামর্শ বা উপস্থিতি জরুরি।

  • আগুন দিয়ে তাপ দেওয়ার সময় উদ্বায়ী, দাহ্য বস্তুসমূহ সেখান থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। এসব রাসায়নিক বস্তু নিয়ে কাজ করার সময় আগুনের ব্যবহার বিপজ্জনক এবং দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে।

  • ল্যাবরেটরিতে কাজ করার সময় মোবাইল ফোনে কথা বলা, নেট চালানো, গল্প করা থেকে বিরত থাকা উচিত। তা না হলে অমনোযোগিতা বা অসাবধানতার কারণে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

  • অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের অবস্থান ও ব্যবহার প্রত্যেকের জেনে রাখতে হবে।

  • শিক্ষকের পরামর্শ ও নির্দেশনা ব্যতিরেকে অযথা খেয়ালের বশে কোনো পরীক্ষা করা, বিক্রিয়া ঘটানো, লেবেল ছাড়া কোনো বিকারকের আনুমানিক ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।

  • সংরক্ষিত বিকারক বোতল প্রয়োজনীয় কাজ শেষে নির্দিষ্ট স্থানে সংরক্ষণ করতে হবে। বিকারক বোতল থেকে অতিরিক্ত বিকারক নিয়ে পরে অব্যবহৃত বিকারক পুনরায় বোতলে ঢেলে রাখা বা পরিত্যাগ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url