সুষম খাদ্য কাকে বলে? সুষম খাদ্যের উপাদান কয়টি ও কী কী?

সুষম খাদ্য কাকে বলে?

সুষম খাদ্য কাকে বলে? যে সকল খাদ্যে সবকয়টি খাদ্য উপাদান (শর্করা, আমিষ, স্নেহ, ভিটামিন, খনিজ লবণ ও পানি) সঠিক অনুপাতে থাকে তাকে সুষম খাদ্য বলে। সুষম খাদ্য নির্বাচন এবং নিয়মিত আহার উন্নত জীবনের একটি পূর্বশর্ত। সুষম খাদ্য একজন মানুষের বিপাকের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে।

সুষম খাদ্য,

সুষম খাদ্যের উপাদান কয়টি ও কী কী?

সুষম খাদ্যের উপাদান মোট ছয়টি। এগুলি হল:

  • শর্করা: শর্করা হলো শরীরের প্রধান শক্তির উৎস। এটি মস্তিষ্ক, পেশী এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কার্যকারিতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। শর্করার ভালো উৎস হলো ভাত, রুটি, আলু, চিনি, ফল এবং মধু।
  • আমিষ: আমিষ শরীরের কোষ, টিস্যু এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গঠন এবং মেরামত করতে সাহায্য করে। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে। আমিষের ভালো উৎস হলো মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ডাল এবং শিম।
  • চর্বি: চর্বি শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় একটি পুষ্টি উপাদান। এটি শরীরের কোষের ঝিল্লি গঠন এবং হরমোন উৎপাদনে সাহায্য করে। চর্বির ভালো উৎস হলো তেল, মাখন, দুধ, ডিম এবং বাদাম।
  • ভিটামিন: ভিটামিন শরীরের বিভিন্ন জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এগুলি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, কোষের বৃদ্ধি এবং বিকাশ, এবং শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে। ভিটামিনের ভালো উৎস হলো ফল, শাকসবজি, দুধ, ডিম এবং বাদাম।
  • খনিজ লবণ: খনিজ লবণ শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজকর্মে অংশগ্রহণ করে। এগুলি হাড় এবং দাঁতের গঠন, রক্তের কোষ গঠন এবং স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। খনিজ লবণের ভালো উৎস হলো ফল, শাকসবজি, মাছ, মাংস এবং ডাল।
  • পানি: পানি শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। এটি শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, কোষের বিপাক প্রক্রিয়া, এবং বর্জ্য পদার্থ অপসারণে সাহায্য করে।

সুষম খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা কি?

  • শরীরের বৃদ্ধি ও মেরামত: শরীরের কোষগুলোকে নতুন করে গঠন এবং ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলোকে মেরামত করার জন্য প্রোটিন প্রয়োজন।
  • শক্তি সরবরাহ: কার্বোহাইড্রেট শরীরকে শক্তি সরবরাহ করে, যা আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্ম সম্পন্ন করতে সাহায্য করে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: ভিটামিন এবং খনিজ লবণ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে রোগ থেকে রক্ষা করে।
  • হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য: ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি হাড় ও দাঁতকে শক্তিশালী করে।
  • মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি: ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
  • হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখা: ফাইবার হজম প্রক্রিয়াকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।

সুষম খাদ্যের অভাবের ফলে কী হতে পারে?

  • দুর্বলতা: প্রোটিন ও ক্যালোরির অভাব শরীরকে দুর্বল করে তোলে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া: ভিটামিন ও খনিজ লবণের অভাব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে।
  • হাড়ের রোগ: ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডির অভাব হাড়ের রোগ যেমন অস্টিওপোরোসিসের কারণ হতে পারে।
  • রক্তাল্পতা: লোহার অভাব রক্তাল্পতা বা এনিমিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
  • মেদবহুলতা: অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ মেদবহুলতার কারণ হতে পারে।

সুষম খাদ্য গ্রহণের ফলে আমাদের শরীর সুস্থ এবং সবল থাকে। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, শারীরিক এবং মানসিক বিকাশ, এবং কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। সুষম খাদ্য গ্রহণের জন্য আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় বিভিন্ন ধরনের খাবার অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এটি আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করবে।

error: Content is protected !!