অথবা, সম্রাট আদরের দাক্ষিণাত্য নীতি বিফল হওয়ার কারণ বর্ণনা কর।
মুঘল বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক হিসেবে সম্রাট আওরঙ্গজেব ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছেন। তিনি সম্রাট শাহজাহানের চার পুত্রের মধ্যে সবচেয়ে ধার্মিক ছিলেন। এজন্য মুসলমানরা তাকে জিন্দাপীর বলে ডাকত। তার জীবনের সবচেয়ে বিখ্যাত ঘটনা হলো দাক্ষিণাত্য নীতি। এ নীতিই মুঘল বংশ ধ্বংসের পিছনে সর্বাধিক কাজ করেছে।
আওরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীতি বিফল হওয়ার কারণ
সম্রাট আওরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীতি বিফল হওয়ার পশ্চাতে অনেক কারণ নিহিত রয়েছে। নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. সেনাপতিদের অসন্তোষ : দরবারের অধিকাংশ সেনাপতি ও যুবরাজ শাহ আলম সম্রাট আওরঙ্গজেবকে বিজাপুর ও গোলকুণ্ডা সম্পূর্ণ অধিকার না করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু সম্রাট আওরঙ্গজেব তা কর্ণপাত করেননি। ফলে সেনাপতিদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করে এবং মুঘল সেনাদল রণক্লান্ত হয়ে পড়ে।
২. পরামর্শ অগ্রাহ্য : সম্রাট আওরঙ্গজেব জয়সিংহের পরামর্শ অগ্রাহ্য করে ভুল করেন। জয়সিংহ সম্রাট আওরঙ্গজেবকে পরামর্শ দেন শিবাজীকে একটি সন্তোষজনক ভূখণ্ড দেওয়ার জন্য। কিন্তু আওরঙ্গজেব শিবাজীকে ভূখণ্ড না দিয়ে ভুল করেন।
৩. মারাঠাদের অবহেলা : আওরঙ্গজেব মারাঠাদের সাথে চুক্তি করে বিজাপুর এবং গোলকুণ্ডা অধিকারে সম্মত হলে হয়তোবা দাক্ষিণাত্য নীতি বিফল হতো না। কিন্তু তিনি মারাঠাদের প্রতি অবহেলা করেন। তিনি কোনোভাবেই তাদেরকে গুরুত্ব দেননি।
৪. মিত্রতার অভাব : সম্রাট আওরঙ্গজেব যদি মারাঠাদের সর্নার এবং তাদের জমিদারদের নিজ পক্ষে এনে মিত্রতা করার চেষ্টা করতেন তাহলে মারাঠাদের শক্তি ক্ষয় হতো। আর এতে সম্রাট আওরঙ্গজেবের কূটনীতির বিজয় সম্পূর্ণ হতো। কিন্তু তিনি তা না করে বরং মারাঠাদের আক্রমণ করেন। ফলে মারাঠা সর্দারগণ এবং কর্ণাটের জমিদারগণ মারাঠাদের সাথে একত্রিত হয়ে সম্রাট আওরঙ্গজেবকে পরাজিত করেন।
৫. দূরদৃষ্টির অভাব : সম্রাট আকবর যেভাবে কূটনীতি এবং দূরদর্শিতা প্রয়োগে করে সাম্রাজ্যের সীমানা সুদূর বাংলা পর্যন্ত বিস্তার করেছেন এবং রাজপুতদের পরাজিত করেছেন সম্রাট আওরঙ্গজেব সেভাবে তার দূরদৃষ্টি প্রয়োগ করতে পারেননি। ফলে দাক্ষিণাত্য নীতি বিফল হয়।
৬. হিন্দুদের বিরোধিতা : সম্রাট আওরঙ্গজেব হিন্দুদের উপর পুনরায় জিজিয়া কর ধার্য করায় হিন্দুরা তার প্রতি বিদ্রোহী, হয়। এর ফলে দেখা যায় যে, দাক্ষিণাত্য বিজয়ের সময় হিন্দুরা সম্রাট আওরঙ্গজেবকে সাহায্য করেনি। ফলে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় ।
পরিশেষে বলা যায় যে, দাক্ষিণাত্য নীতি সম্রাট আওরঙ্গজেবকে ধ্বংস করে দেয়। তিনি যদি সুষ্ঠুভাবে দাক্ষিণাত্য নীতি প্রয়োগ করতেন তাহলে হয়তোবা তার এ নীতি ব্যর্থ হতো না। ঐতিহাসিক ড. কে. কে. দত্ত বলেন, “তিনি বুঝতে সক্ষম হননি যে, নিয়তিই তাকে দাক্ষিণাত্যে টেনে নিয়ে যাচ্ছে এবং তার সাম্রাজ্যের সমাধি রচনা করতে যাচ্ছে।
আমরা জানলামঃ সম্রাট আওরঙ্গজেবের দাক্ষিণাত্য নীতি ব্যর্থ হওয়ার কারণ কি ছিল?