মুনাফিক হলেন তারা, যাদের অন্তরের অবস্থা গোপন থাকে। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায়, অন্তরে কুফর ও অবাধ্যতা গোপন করে মুখে ইসলাম স্বীকার করার নাম হলো নিফাক। যে এরূপ কাজ করে তাকে বলা হয় মুনাফিক। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী মুনাফিক চেনার উপায় ৩টি। যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, যখন ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করে, আর যখন কোনো কিছু তার কাছে আমানত রাখা হয়, তার খিয়ানত করে।
যে ব্যক্তি অন্তরে কুফর লুকিয়ে রেখে যবান দ্বারা ইসলাম প্রকাশ করে তাকে মুনাফিক বলে। যুগে যুগে ইসলামের সবচেয়ে বড় ক্ষতি মুনাফিকদের দ্বারাই হয়েছে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মুনাফিক সম্প্রদায়ই সবচেয়ে বেশী কষ্ট দিয়েছে। কারণ কাফির সম্প্রদায় যেহেতু প্রকাশ্যে মুসলমানদের বিরোধিতা করতো, তাই তাদের অনিষ্ট থেকে বেঁচে থাকা সহজ ছিলো। পক্ষান্তরে মুনাফিক সম্প্রদায় মুসলমান পরিচয় দিয়ে মুসলমানদেরকে ধোঁকায় ফেলে তাদের বিরুদ্ধে গোপন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হতো।
মুনাফিকদের সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-
“নিঃসন্দেহে মুনাফিকরা রয়েছে দোযখের সর্বনিম্ন স্তরে। আর তোমরা তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী কখনও পাবে না। (সূরা নিসা, ১৪৫ আয়াত)
অর্খাৎ: দোযখের সবচেয়ে ভয়াবহ স্থানে মুনাফিকদেরকে রাখা হবে। তারা দুনিয়াতে আল্লাহ্ পাকের দ্বীন নিয়ে উপহাস এবং মুসলমানদেরকে সীমাহীন দুর্ভোগে নিক্ষেপ করার কারণে পরকালে সবচেয়ে কঠিন শাস্তিতে পতিত হবে।
মহানবী সাল্লাল্লাহু, আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভাষ্য অনুযায়ী কিছু কাজ এমন আছে, যা কেবল মাত্র মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্যরূপে গণ্র হয়, কোন মুমিনের জন্য তা শোভনীয় নয়। অথচ অজ্ঞতার কারণে অনেক মুসলমান, খাঁটি মুমিনও নিজের অজান্তে তাতে লিপ্ত হয়ে যায়।
মুনাফিকের তিনটি নিদর্শন
হযরত আবু হুরাইরাহ (রঃ) বর্ণনা করেন যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুনাফিকের তিনটি নিদর্শন। (অর্থাৎ কোন মুসলমানের দ্বারা এমন কাজ সম্ভব নয়। যদি কারো মধ্যে এগুলো পাওয়া যায়, তাহলে মনে করতে হবে সে মুনাফিক) আর তা হলো –
১) যখন কথা বলে মিথ্যা বলে
২) যখন ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করে
৩) আর যখন তার নিকট কোন কিছু আমানত রাখা হয়, তখন সে (তার মধ্যে) খিয়ানত করে।
কোনো কোনো বর্ণনায় একথাও আছে যে, যদিও সে নামাজ পড়ে, রোযা রাখে এবং এককথায় দাবী করে যে, সে মুসলমান। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সে মুসলমান নয়, কেননা মুসলমান হওয়ার জন্য যে সকল মৌলিক গুণাবলীর প্রয়োজন সেগুলো সে ছেড়ে বসে আছে।