- যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণ আশ, ভাবসম্প্রসারণ
- ইটের পর ইট মাঝে মানুষ কীট, ভাবসম্প্রসারণ
- লাইব্রেরি জাতির সভ্যতা ও উন্নতির মানদণ্ড, ভাবসম্প্রসারণ
মূলভাব: ভোগবাদিতা মানবজীবনের আদর্শ নয়। ভোগ ও ত্যাগ-মানবজীবনের দুটি ‘পরস্পরবিরোধী পথ। ভোগ মানুষকে ইন্দ্রিয়পরায়ণ করে আর ত্যাগ মানুষের জীবনকে অর্থবহ করে।
সম্প্রসারিত ভাব: ভোগপ্রবণতা কখনো মানুষকে সুখী করে না বা মনুষ্যত্বেরও বিকাশ ঘটায় না বরং ত্যাগের মাধ্যমে প্রকৃত সুখ পাওয়া যায়। পরার্থে আত্মত্যাগই মনুষ্যত্বের আদর্শ। পৃথিবীর মানুষ প্রবৃত্তির দাস। প্রবৃত্তি মানুষকে ভোগপ্রবণ করে। প্রবৃত্তির হাত থেকে মুক্তির মাধ্যমে মানুষের আত্মমুক্তি ঘটে। আর এ মুক্তির মাধ্যমে মহৎ জীবনের আস্বাদ পাওয়া যায়। ভোগের কারণে মানুষ সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়। ফলে ভোগ করতে হয় সীমাহীন দুঃখদুর্দশা। ভোগপ্রবণতা মানুষকে আত্মকেন্দ্রিক ও স্বার্থপর করে তোলে। ভোগের বশবর্তী মানুষের দ্বারা পৃথিবীতে কোনো মহৎ কাজ করা সম্ভব হয় না। স্বার্থপর ভোগী মানুষকে জগৎ মনে রাখে না। অপরের জন্য নিজের সুখ বিসর্জন দেওয়ার মাধ্যমে মানসিক প্রশান্তি পাওয়া যায়। আর ত্যাগী মানুষ তার মহৎ গুণের জন্য স্বমহিমায় উজ্জ্বল হয়ে থাকে। ত্যাগের মাধ্যমে তারা পৃথিবীতে অমরত্ব লাভ করে। যুগে যুগে গুণীজ্ঞানী ও পণ্ডিত ব্যক্তিরা ত্যাগের মাধ্যমেই মানবকল্যাণ সাধনে ব্রতী হয়েছেন। মাদার তেরেসা, ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল প্রমুখ মানবজাতির কল্যাণের জন্য বহু ত্যাগ স্বীকার করে গেছেন। তবে ত্যাগ মানে নিজের জীবন ও পরিবারকে বিসর্জন দেওয়া নয়। অন্যের কল্যাণের জন্য ত্যাগই হলো যথার্থ। এর মাধ্যমে প্রকৃত সুখ লাভ করা যায় এবং যথার্থ মনুষ্যত্বের পরিচয় ঘটে।
মন্তব্য: জীবনকে সুন্দর ও অর্থবহ করতে হলে আত্মস্বার্থ ত্যাগ করা উচিত। ভোগী মানুষ বাঁচে তার ‘পরিবার-পরিজনের মধ্যে আর ত্যাগী মানুষ বাঁচে কালের অনন্ত প্রবাহে। তাই ত্যাগই আমাদের চরিত্রের আদর্শ হওয়া উচিত।