ব্যবসায় পরিবেশ, বাংলাদেশে ব্যবসায়িক পরিবেশ ও এর উপাদান

ব্যবসায় পরিবেশ

পরিবেশ দ্বারা মানুষের জীবনধারা আচার, আচরণ, পরিবেশ দ্বারা মানুষের জীবনধারা আচার, আচরণ,শিক্ষা, সংস্কৃতি অর্থনীতি এবং ব্যবসা প্রভাবিত হয়। পরিবেশ হলো কোন অঞ্চলের জনগনের জীবন ধারা ও অর্থনৈতিক কার্যাবলীকে প্রভাবিত করে এমন সব উপাদানের সমষ্টি পারিপার্শ্বিক উপাদানের মধ্যে রয়েছে, ভূপ্রকৃতি, জলবায়ু,নদ-নদী, পাহাড়, বনভূমি, জাতী, ধর্ম, শিক্ষা ইত্যাদি। যে সব প্রাকৃতিক ও অপ্রাকৃতিক উপাদান দ্বারা ব্যবসায়িক সংগঠনের গঠন, কার্যাবলী, উনড়বতি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রভাবিত হয় সেগুলোর সমষ্টিকে ব্যবসায়িক পরিবেশ বলে। কোন স্থানের ব্যবসায় ব্যবস্থার উন্নতি র্নিভর করে ব্যবসায়িক পরিবেশের উপর।

বাংলাদেশ ব্যবসায়িক পরিবেশ

বাংলাদেশ একটি কৃষি নির্ভর উন্নয়নশীল দেশ। অবশ্য দেশের অর্থনিতিতে ব্যবসায় তথা শিল্প ও বাণিজ্যের অবদান প্রতি বছর বেড়েই চলছে। এককালে এ অঞ্চলে ব্যবসায় বাণিজ্যে সারাবিশ্বে বিখ্যাত ছিল। ব্যবসায় বাণিজ্যে প্রসিদ্ধ স্থান হিসাবে বিশেষ করে মসলিন কাপড়ের জন্য ‘সোঁনারগাঁ’ এবং সমুদ্র বন্দর ও জাহাজ নির্মাণ শিল্পের জন্য চট্রগ্রাম এ দুটো স্থানের নাম সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল। সোনাগাঁও এর আশে পাশে তৈরীর মসলিন রপ্তানি হতো ইউরোপ ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে আমাদের এ দেশ চিরকাল বাণিজ্যের জন্য বিখ্যাত ছিল। এদেশের বাণিজ্যের খ্যাতিতে প্রলুব্ধ হয়ে আরবগন স্মরণাতীত কাল পুর্বে থেকে বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপন করেন এবং দলে দলে এ দেশে আগমন করেন। বাণিজ্য বিষয়ে তখন এ অঞ্চলের শ্রীবৃদ্ধি এতদূর হয়েছিল যে, ইতিহাস বিখ্যাত তাম্রলিপ্ত ও সপ্তগ্রামের সাথে এর ঘোর প্রতিযোগিতা চলত। এ অঞ্চলের বাণিজ্য খ্যাতি প্রাচ্যের দেশ ছাড়িয়ে সুদুর ইউরোপ পর্যন্তু পৌছে ছিল। খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতাব্দীতে পর্তুগীজরা এসে বাণিজ্য করতে আরম্ভ করেন। তারা সপ্তগ্রামকে ক্ষুদ্র বন্দর এবং চট্রগ্রামকে বৃহৎ নামে অভিহিত করেন। উল্লেখ্য, বাণিজ্য বন্দর হিসাবে পশ্চিম বঙ্গের সপ্তগ্রাম নামটিও বিখ্যাত ছিল। সমুদ্রপথে ব্যবসায়ের জন্য আমাদের দেশ প্রসিদ্ধ ছিল। সমুদ্রগামী জাহাজও এ দেশে নির্মিত হতো। বর্তমান এ প্রতিযোগিতামুলক বিশ্বে ব্যবসায়িক পরিবেশের সকল উপাদান অনুকুল না হলে ব্যবসায় বাণিজ্যে উনড়বতি লাভ করে টিকে থাকা কঠিন।

নিম্নে ব্যবসায়িক পরিবেশের উপাদানগুলো বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আলোচনা করা হলো:

১। প্রাকৃতিক উপাদান: প্রাকৃতিক পরিবেশের অধিকাংশ উপাদানই বাংলাদেশের ব্যবসায় স্থাপনের জন্য অনুকুল। দেশের প্রায় সকল অংশই নদী বিধৌত। ফলে এখানে সহজেই কৃষিজাত বিভিন্ন শিল্প ও ভোগ্য পন্যের কাঁচামাল উৎপাদন করা সম্ভব। ব্যবসায় বা শিল্প স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক গ্যাস বিদ্যমান। দেশে বিদ্যমান কয়লা, চুনাপাথর, কঠিনশিলা ও খনিজতৈল শিল্প বিকাশে সহায়ক।
২। অর্থনৈতিক উপাদান: দেশে বিরাজমান কার্যকর অর্থ ব্যাংকিং ব্যবস্থা, কৃষি ও শিল্পের অবদান, জনগনের সঞ্চয় ও বিনিয়োগ মানসিকতা ও সরকারের পৃষ্টপোষকতা ব্যবসায় পরিবেশের সুদৃর অর্থনৈতিক উপাদান হিসাবে কাজ করে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উপাদানগুলোর কয়েকটির ভিত্তি বেশ মজবুত হলেও অনেকগুলোর ভিত্তি তেমন সুদৃঢ় নয়। চাহিদার তুলনায় প্রয়োজনীয় মুলধনের অভাব, প্রসাসনিক জটিলতা, দালাল শ্রেণীর লোকদের হয়রানি, দ্রব্যমুল্যের উর্ধ্বগতি ইত্যাদি প্রতিকুল অবস্থা কাটাতে পারলে বাংলাদেশ ব্যবসায় বিকাশ আরও দ্রুত অগ্রসর হতে পারবে।
৩। সামাজিক উপাদান: জাতি ধর্মীয় বিশ্বাস, ভোক্তাদের মনোভাব, মানব সম্পদ, শিল্প ও সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রভৃতি ব্যবসায়ের সামাজিক উপাদানগুলোর বেশিরভাগ বাংলাদেশ ব্যবসায় প্রসারের ক্ষেত্রে অনুকুল। এ দেশের মানুষ জাতিগত, ঐতিহ্যগত এবং সংস্কৃতিকভাবে উদার, পরিশ্রমী এবং সৃজনশীল। অতীতে জাহাজ নির্মাণ করে মসলিন কাপড় উৎপাদন করে ও দেশের মানুষ তাদের প্রতিভা ও পরিশ্রমের স্বাক্ষর রেখেছে। সোনারগাঁও এক সময় ব্যবসায়, শিক্ষা, দিক্ষা, কৃষি, সাহিত্যে সংস্কৃতি, শিল্প কারুশিল্পে ঝিল বিশ্বসেরা।
৪। রাজনৈতিক উপাদান: সুষ্ঠু আইন সৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং অনুকুল শিল্প ও বাণিজ্যনীতি, প্রতিবেশী ও অন্যান্য দেশের সাথে সুসম্পর্ক ব্যবস্যা বাণিজ্য প্রসারে সহায়তা করে। অন্যদিকে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, ঘন ঘন সরকার পরিবর্তন, হরতাল, ধর্মঘট ব্যবসায় বান্ধব শিল্প ও বাণিজ্যনীতির অভাব ইত্যাদি প্রদিকুল রাজনৈতিক উপাদান শিল্প ও বাণিজ্যের প্রসারে বাধা সৃষ্টি করে। দেশী বিদেশি বিনিয়োগকারীগণ বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হয় না। শ্রমিক অসন্তোষ, ধর্মঘট, হরতালসহ, বিভিন্ন নেতিবাচক কর্মকান্ড পরিহার করার মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যবসায়ের জন্য রাজনৈতিক পরিবেশ উন্নত করা যায়।
৫। আইনগত উপাদান: আইনগত পরিবেশের বেশ কিছু উপাদান বাংলাদেশে আধুনিক ও যুগপোযোগী হলেও অনেকগুলো বেশ পুরাতন। পরিবেশ সংরক্ষণ ও ভোক্তা আইনের কঠের প্রয়োগ, শিল্প ও বিনিয়োগ বান্ধব আইন তৈরী এবং দূর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি চাঁদাবিিজ প্রতিরাধ আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যেেম দেশের ব্যবসা বাণিজ্যের উন্নতি নিশ্চিত করা যায়।
৬। প্রযুক্তিগত পরিবেশ: শিল্প ও ব্যবসায় বাণিজ্যের উন্নতিতে দক্ষতা সম্পন্ন কর্মী, উন্নত যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির প্রয়োজন হয়। সাধারণত দেখা যায় যে, যে সকল দেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত পরিবেশে উন্নত তারা ব্যবসা বাণিজ্যে ও উন্নত। প্রযুক্তিগত উন্নয়ন উৎপাদন প্রক্রিয়াকে সহজতর করে। ফলে উৎপাদিত পণ্যের পরিমাণও গুনগত মান বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশে ব্যাবসায় পরিবেশের প্রযুক্তিগত উপাদানগুলো অনেক ক্ষেত্রই অনুকুল। ব্যবসায়ের সকল শাখায় প্রযুক্তির ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

error: Content is protected !!