অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হিসেবে গণ্য হলেও ব্যবসায় যে কোনো দেশের আর্থ-সামাজিক রাজনৈতিক তথা সামগ্রিক উন্নয়নে বিশেষ অবদান রেখে চলেছে। ব্যবসায়ের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেই গড়ে উঠেছে ছোট-বড় দোকান থেকে শুরু করে বিশাল শিল্প কারখানা। বর্তমান বিশ্বে ব্যবসায়ের গুরুত্ব অপরিসীম। আজকের পৃথিবীতে সে সকল দেশ উন্নতির চরম শিখরে অবস্থান করছে যে দেশগুলো ব্যবসা-বাণিজ্য উন্নত। ব্যবসায় এর মাধ্যমে সম্পদের যথাযথ ব্যবহার সহজ হয় এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়। ব্যবসা এর ফলে সঞ্চয় বৃদ্ধি পায়, মূলধন গঠিত হয় জাতীয় আয় বৃদ্ধি পায়। ব্যবসায় এর মাধ্যমে বেকার মানুষের কর্মসংস্থান হয়। ব্যবসায় গবেষণা ও সৃজনশীল কাজের উন্নয়ন ঘটায়। ব্যবসা-বাণিজ্যের ফলে দেশে দেশে পণ্যদ্রব্যের আদান-প্রদানের সাথে সাথে সংস্কৃতির বিনিময়ও ঘটে। ব্যবসায়-বাণিজ্য ঘিরে নতুন – নতুন শহর, বন্দর গড়ে উঠে।
বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যবসায়ের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো:
১. পণ্য দ্রব্য ও সেবার যোগান: ব্যবসায় মানুষের বিভিন্ন-মূখী চাহিদা পুরণের জন্য ও সেবা সামগ্রীর যোগান দিয়ে থাকে। এর ফলে মানুষ তার প্রয়োজনীয় সামগ্রী অনায়াসে ভোগ করতে পারে।
২. প্রাকৃতিক সম্পদের সদ্ব্যবহার: দেশের প্রাকুতিক সম্পদের সদ্ব্যবহারের ওপর জাতীয় উন্নয়ন নির্ভরশীল। ব্যবসায় দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন: খনিজ দ্রব্য, জল সম্পদ, বনজ সম্পদ ইত্যাদি সংগ্রহ করে শিল্প দ্রব্য পরিণত করে জনগণের চাহিদা পূরণ করে।
৩. জাতীয় আয়বৃদ্ধি : ব্যবসায়ের ফলে সঞ্চয় বৃদ্ধি পায়, মূলধন গঠিত হয় ফলে জাতীয় আয় বৃদ্ধি পায়।
৪. সঞ্চয়ে উৎসাহ প্রদান : ব্যবসায়ের মাধ্যমে স্বাধীনভাবে আয় রোজগার ও সম্পদ অর্জন করা সহজ বলে অনেকেই ব্যবসায় গড়ে তোলার লক্ষ্যে সঞ্চয়ে আগ্রহী হয়।
৫. মুলধন গঠনও তার সদ্ব্যবহার : ব্যবসায়ের প্রয়োজনে উদ্যোক্তাগণ বিভিন্ন উৎস হতে মুলধন সংগ্রহ করে এবং উক্ত মুলধন উপযুক্ত খাতে বিনিয়োগ করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন তরান্বিত করে।
৬. কর্মসংস্থান : ব্যবসায় মানুষের কর্মসংস্থানের নতুন নতুন ক্ষেত্র সৃষ্টি করে থাকে। ব্যবসায়ের মাধ্যমে বেকার মানুষের কর্মসংস্থান হয়। ব্যবসায়িক কার্যক্রম সম্প্রসাারিত হলে অধিক সংখ্যক শিল্পকারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে এবং শিল্প ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে অনেক লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
৭. যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন : ব্যবসায়ের প্রয়োজনের কাঁচামাল ও পণ্যসামগ্রী আনয়নের জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটানো হয়ে থাকে।
৮. সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি : দেশের ব্যবসায়ের তথা শিল্প বাণিজ্যের প্রসারের ফলে সরকার বিভিন্ন খাতে প্রচুর রাজস্ব আদায় করতে পারে। এতে সরকারের অর্থনেতিক প্রবৃদ্ধি তরান্বিত হয়।
৯. জীবনের মানোন্নয়ন : ব্যবসায় সমাজের জনগনের জীবনযাত্রার মানোনড়বয়ণে সহায়ক। ব্যবসায়ের মাধ্যমে আয় বৃদ্ধি পায়। ফলে জনগনের ক্রয়ক্ষমতা ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পায়, যা তাদের জীবনত্রার মানকে উন্নত করে তোলে।
১০. সভ্যতা ও সংস্কৃতির আদান প্রদান : ব্যবসায়ের আর্ন্তজাতিক গতিশীলতা বিভিন্ন দেশ, সমাজ, জাতির মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তোলে। ফলে বিভিন্ন দেশের সভ্যতা ও সংস্কৃতির আদান প্রদানের পথ প্রসারিত হয়।
১১. নগরায়ন : ব্যবসায়ের ফলে সভ্যতার দ্রুত ক্রমবিকাশ ঘটে থাকে। যার ফলে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধাপ্রাপ্ত হয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে দ্রুত নগরায়নের উদ্ভব হয়।