বক্রচলন কি? প্রকারভেদ, কারণ ও গুরুত্ব

বক্রচলন হল উদ্ভিদের একটি বিশেষ ধরনের চলন, যেখানে উদ্ভিদের কোনো অংশ কোনো একক উদ্দীপকের প্রভাবে নির্দিষ্ট দিকে বাঁকতে থাকে। এই উদ্দীপকটি হতে পারে আলো, পানি, স্পর্শ, গুরুত্বাকর্ষণ ইত্যাদি। বক্রচলন উদ্ভিদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি তাদেরকে পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করে।

বক্রচলনের প্রকারভেদ

বক্রচলনকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা যায়:

  • ট্রপিজম: এই ধরনের বক্রচলনে উদ্দীপকের উৎসের দিকে বা তার বিপরীত দিকে উদ্ভিদের অংশ বাঁকতে থাকে।
    • ফোটোট্রপিজম: আলোর দিকে বাঁকাকে ফোটোট্রপিজম বলে। উদাহরণস্বরূপ, সূর্যের আলোর দিকে গাছের ডাল বাঁকে।
    • জিওট্রপিজম: গুরুত্বাকর্ষণের দিকে বাঁকাকে জিওট্রপিজম বলে। উদাহরণস্বরূপ, গাছের শিকড় মাটির ভিতরে গভীরের দিকে বাঁকে।
    • হাইড্রোট্রপিজম: পানির দিকে বাঁকাকে হাইড্রোট্রপিজম বলে। উদাহরণস্বরূপ, গাছের শিকড় পানির উৎসের দিকে বাঁকে।
    • থার্মোট্রপিজম: তাপের দিকে বাঁকাকে থার্মোট্রপিজম বলে।
    • কেমোট্রপিজম: রাসায়নিক পদার্থের দিকে বাঁকাকে কেমোট্রপিজম বলে।
  • ন্যাস্টিজম: এই ধরনের বক্রচলনে উদ্দীপকের দিক নির্বিশেষে উদ্ভিদের অংশ বাঁকতে থাকে। উদ্দীপকের তীব্রতা বা দৈর্ঘ্যের উপর নির্ভর করে এই বাঁকানি। উদাহরণস্বরূপ, লাজুক লতার পাতা স্পর্শ করলে ভাঁজ হয়ে যায়।

বক্রচলনের কারণ

উদ্ভিদের কোষে অক্সিন নামক একটি হরমোন থাকে। এই হরমোনই বক্রচলনের জন্য দায়ী। উদ্দীপকের প্রভাবে অক্সিনের ঘনত্ব কোষে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে পড়ে। ফলে কোষের বৃদ্ধিও ভিন্ন ভিন্ন হতে থাকে এবং উদ্ভিদের অংশটি বাঁকতে শুরু করে।

বক্রচলনের গুরুত্ব

  • পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানো: বক্রচলনের মাধ্যমে উদ্ভিদ আলো, পানি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদানের সন্ধান পায় এবং পরিবেশের বিভিন্ন পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে।
  • বৃদ্ধি ও বিকাশ: বক্রচলনের ফলে উদ্ভিদের শিকড় মাটিতে গভীরভাবে প্রবেশ করে এবং ডালপালা আলোর দিকে বৃদ্ধি পায়।
  • প্রতিরক্ষা: কিছু উদ্ভিদ স্পর্শের প্রতিক্রিয়া হিসেবে পাতা ভাঁজ করে শত্রুদের থেকে নিজেকে রক্ষা করে।

সারসংক্ষেপে, বক্রচলন উদ্ভিদের জীবনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। এটি উদ্ভিদকে পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে।

error: Content is protected !!