চর্যাপদের চারজন পদকর্তার নাম লেখ

অথবা, চর্যাপদের মোট পদকর্তা কতজন? তাঁদের নামের শেষে ‘পা” যোগ করার কারণ কী? 

চর্যাপদ বা চর্যাগীতিকা বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন হিসেবে স্বীকৃত। চর্যাগীতিকাগুলো বৌদ্ধ সহজিয়াদের পদ্ধতিমূলক গান। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে সন্ধ্যাভাষায় রূপকের মাধ্যমে সাধকদের গূঢ় ধর্মসাধনার কথা প্রচার করা। চর্যাপদগুলোর রচনাকাল নির্দিষ্টভাবে নির্ণীত না হলেও নানা আলোচনা হতে বিশেষজ্ঞগণ যে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন তাতে জানা যায় যে, এগুলো দশম হতে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে রচিত।

মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে তৃতীয়বার নেপালে গিয়ে সেখানকার রাজদরবারের গ্রন্থাগার থেকে চর্যাপদ আবিষ্কার করেন।

১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে ‘হাজার বছরের পুরান বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা’ নামে চর্যাপদ প্রকাশিত হলে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। চর্যাপদে মোট ৫১টি পদ ছিল। কিন্তু আবিষ্কৃত পুথির কিছু পাতা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ২৪, ২৫, ৪৮ পদগুলো এবং ২৩ সংখ্যক পদের শেষ অংশ পাওয়া যায়নি। ২৩ জন মতান্তরে ২৪ জন পদকর্তার রচিত এই সাড়ে ছেচল্লিশটি পদই বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন হিসেবে পরিচিত।

চর্যাপদের মোট চব্বিশ জন পদকর্তার পরিচয় পাওয়া যায়। গানের মাঝে ও শেষে তাঁরা ভণিতা দিয়েছেন। তবে কারো কারো গুরুর ভণিতা আছে। নামের শেষে গৌরবসূচক ‘পা’ যোগ করা হয়েছে— এখানে ‘পা’ বলতে সাধারণত পদকর্তাদের নির্দেশ করে। 

চর্যার চব্বিশ জন পদকর্তা হলেন আর্যদেব, কঙ্কণ, কম্বলাম্বর, লুইপা, শবরপা, ভুসুকুপা, কাহ্নপা, কুক্কুরীপা, গুন্ডরীপাদ, চাটিলপাদ, জয়নন্দী, ডোম্বী, ঢেণ্‌ঢণপাদ, তন্ত্রী, তাড়ক, দারিক, ধামপাদ, বিরুপাদ, বীণাপাদ, ভদ্রপাদ, মহীধরপাদ, লাড়ীডোম্বী, শান্তিপাদ, সরহপাদ।

লাড়ীডোম্বীপার কোনো পদ পাওয়া যায়নি। চর্যাগীতিকার প্রায় পদকারই বৌদ্ধ চৌরাশি সিদ্ধার অন্তর্গত। চর্যাকারদের মধ্যে লুই, কুক্কুরী, বিরু, ডোম্বী, শবর, ধাম, জসনন্দি ছিলেন বাঙালি।

error: Content is protected !!