ইলেকট্রন আসক্তি কাকে বলে, জানার পাশাপাশি আমরা আরো জানবো, কোনো গ্রুপে ইলেকট্রন আসক্তির পরিবর্তন কীরূপ? কোন পর্যায়ে ইলেকট্রন আসক্তির পরিবর্তন কীরূপ হবে? Cl এর ইলেকট্রন আসক্তি F অপেক্ষা বেশি কেন? ফ্লোরিন সর্বাধিক তড়িৎ ঋণাত্মক মৌল ব্যাখ্যা কর। ইলেকট্রন আসক্তির ওপর কী কী নিয়ামকের প্রভাব আছে? F ও Cl এর মধ্যে কোনটির ইলেকট্রন আসক্তি বেশি এবং কেন?
ইলেকট্রন আসক্তি কাকে বলে?
কোনো মৌলের এক মোল চার্জ নিরপেক্ষ বিচ্ছিন্ন গ্যাসীয় পরমাণু এক মোল ইলেকট্রনের সাথে যুক্ত হয়ে এক মোল একক ঋণাত্মক চার্জযুক্ত গ্যাসীয় আয়ন সৃষ্টি করলে যে পরিমাণ শক্তি নির্গত হয়, তাকে সেই মৌলের ইলেকট্রন আসক্তি বলা হয়।
অথবা,
চার্জ নিরপেক্ষ গ্যাসীয় পরমাণুর সর্ববহিঃস্থ শক্তিস্তরে একটি ইলেকট্রন প্রবেশ করলে যে পরিমাণ শক্তি নির্গত হয় সেই পরিমাণ শক্তিই হলো ইলেকট্রন আসক্তি।
অথবা,
কোন মৌলের গ্যাসীয় পরমাণুতে একটি অতিরিক্ত ইলেকট্রন প্রবেশ করিয়ে ঋণাত্মক আয়নে পরিণত করতে যে পরিমাণ শক্তি নির্গত বা ছেড়ে দিতে হয় তাকে ঐ মৌলের ইলেকট্রন আসক্তি বলে। যেহেতু এই প্রক্রিয়ায় মৌল তাপ শক্তি ছেড়ে দেয় তাই এটি একটি তাপ উৎপাদী প্রক্রিয়া। যেমন: ফ্লোরিন পরমাণু যখন একটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে তখন তা 328 kJ/mol তাপ ছেড়ে দেয়।
Fe + e– → F–(g), ΔH=-328 kJ/mol
ইলেকট্রনের জন্য আকর্ষণ যত বেশি হবে এর ইলেকট্রন আসক্তির মানও তত বেশি হবে। শক্তি যত বেশি নির্গত হবে গঠিত আয়ন তত বেশি স্থিতিশীল হবে।
একই গ্রুপে যতই নিচ থেকে উপরের দিকে যাওয়া যায় ইলেকট্রন আসক্তি ততই বাড়তে থাকে। আবার একই পর্যায়ে যতই বাম থেকে ডানদিকে যাওয়া যায় ততই এর ইলেকট্রন আসক্তি বাড়তে থাকে।
কোনো গ্রুপে ইলেকট্রন আসক্তির পরিবর্তন কীরূপ?
কোনো গ্রুপের ক্ষেত্রে ওপর থেকে নিচের দিকে ক্রমান্বয়ে ইলেকট্রন সংখ্যার পাশাপাশি শক্তিস্তর যুক্ত হতে থাকে। তাই নিউক্লিয়াস থেকে সর্বশেষ শক্তিস্তরের দূরত্ব বাড়তে থাকে। ফলে e ও p এর আকর্ষণ বল কমতে থাকে। তাই সর্বশেষ স্তর থেকে ইলেকট্রন অপসারণ উপর থেকে নিচের দিকে সহজ হবে।
সুতরাং কোন গ্রুপে উপর থেকে নিচের দিকে ইলেকট্রন আসক্তি কমতে থাকে।
কোন পর্যায়ে ইলেকট্রন আসক্তির পরিবর্তন কীরূপ হবে?
কোন পর্যায়ের ক্ষেত্রে যতই বাম থেকে ডান দিকে যায় পরমাণুর আকার ততই হ্রাস পেতে থাকে। আর পরমাণুর আকার ছোট হলে ইলেকট্রন ও প্রোটনের মধ্যে আকর্ষণ বেশি থাকে বিধায় ইলেকট্রন অপসারণ করতে বেশি শক্তির প্রয়োজন পড়ে। অর্থাৎ বাম থেকে ডানদিকে ইলেকট্রন আসক্তির মান বেশি।
Cl এর ইলেকট্রন আসক্তি F অপেক্ষা বেশি কেন?
Cl এর ইলেকট্রন আসক্তি F থেকে বেশি, কারণ-
F(9)=1s22s22p5
Cl(17)=1s22s22p63s23p5
ফ্লোরিন ২য় পর্যায়ের মৌল যার শেষ কক্ষপথে ৭টি ইলেকট্রন আছে। F এর কর্তৃক অন্য ইলেকট্রনকে আকর্ষণ করার ক্ষমতা কম, কারণ এতে বহিঃস্থ স্তরের ইলেকট্রনের সাথে বিকর্ষণ সংঘটিত হয়। ফলে বহিঃস্থ স্তরের ইলেকট্রনের সাথে বিকর্ষণ সংঘটিত হয়। ফলে ফ্লোরিনের ইলেকট্রন আসক্তি কমে যায়।
অন্যদিকে Cl ৩য় পর্যায়ের মৌল। এর আকার বড়, ফলে নতুন কোন ইলেকট্রনকে আকর্ষণ করতে এর মধ্যে তুলনামূলক বিকর্ষণ সংঘটিত হয় কম যেহেতু এর শেষ শক্তিস্তরে ইলেকট্রন ঘনত্ব কম।
তাই বলা যায়, Cl এর ইলেকট্রন আসক্তি F থেকে বেশি।
ফ্লোরিন সর্বাধিক তড়িৎ ঋণাত্মক মৌল ব্যাখ্যা কর।
পর্যায় সারণির একই পর্যায়ের বাম থেকে ডান দিকে গেলে তড়িৎ ঋণাত্মকতা বৃদ্ধি পায়। আবার, একই গ্রুপের নিচ থেকে উপরের দিকে গেলে তড়িৎ ঋণাত্মকতা বৃদ্ধি পায়। নিষ্ক্রিয় গ্যাস ছাড়া একমাত্র ফ্লোরিনই পর্যায় সারণির সর্ব ডানে এবং সবার ওপরে অবস্থিত। তাই ফ্লোরিনের তড়িৎ ঋণাত্মকতা সবচেয়ে বেশি।
ইলেকট্রন আসক্তির ওপর কী কী নিয়ামকের প্রভাব আছে?
ইলেকটন আসক্তির উপর বা পর্যায়ভিত্তিক ধর্মের উপর বিভিন্ন নিয়ামকের প্রভাব বলতে মূলত নিম্নলিখিত বিষয়গুলোকে বুঝায়-
১. মৌলসমূহের পরমাণুর আকার
২. বহিঃস্থরের ইলেকট্রনীয় কাঠামো
৩. নিউক্লিয়াসের চার্জ
F ও Cl এর মধ্যে কোনটির ইলেকট্রন আসক্তি বেশি এবং কেন?
F অপেক্ষা Cl এর আকার বড় হওয়ায় F অপেক্ষা Cl এর পরমাণুর দিকে আগমনকারী ইলেকট্রনের উপর নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ কম হওয়ার কথা, তবে F এর আকার অনেক ক্ষুদ্র হওয়ায় এবং এত ক্ষুদ্র পরিসরে সাতটি ইলেকট্রন থাকায় ইলেকট্রন মেঘের ঘনত্ব অনেক বেশি হয়। ফলে আগমনকারী ইলেকট্রনের উপর শেষ শক্তিস্তরের ইলেকট্রনসমূহের বিকর্ষণের কারণে Cl অপেক্ষা F এর ইলেকট্রন আসক্তি কম হয়।