কল্যাণমূলক রাষ্ট্র কাকে বলে? কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য

কল্যাণমূলক রাষ্ট্র-এর সংজ্ঞা

কল্যাণমূলক রাষ্ট্র বলতে সেই রাষ্ট্রকে বুঝায় যার সমুদয় সম্পদ ও শক্তিকে জনকল্যাণের লক্ষ্যে পরিচালিত করা হয়। কল্যাণমূলক রাষ্ট্র জনগণের ন্যূনতম চাহিদা পূরণ করে। জনগণের মৌলিক চাহিদা, যেমন - খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। 

কিন্তু কল্যাণমূলক রাষ্ট্র সমাজতান্ত্রিক নয়। কারণ এই রাষ্ট্র ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য অক্ষুণ্ন রেখে কল্যাণমূলক সমাজতান্ত্রিক কার্যাবলী সম্পাদন করে। 

মৌলিক চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে এই রাষ্ট্র অধিক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, বেকারভাতা প্রদান, বিনা খরচে শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে। তাছাড়া পরিকল্পিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মাধ্যমে সম্পদ বৃদ্ধি, ধনবৈষম্য হ্রাস এবং সুষম সম্পদ বণ্টন নিশ্চিত করে।

এক কথায়, রাষ্ট্র জনগণের সর্বাধিক কল্যাণের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যাদি সম্পন্ন করে।

কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য

কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্যগুলো নিচে আলোচনা করা হলোঃ

১) ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য ও স্বাধীনতা সংরক্ষণঃ কল্যাণমূলক রাষ্ট্র ব্যক্তির স্বাধীনতা ও অধিকারকে পূর্ণমাত্রায় স্বীকার ও সংরক্ষণ করে এবং উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে ব্যক্তিত্ব বিকাশের পথ উন্মুক্ত করে।

২) সমাজকল্যাণমূলক কার্যাদি সম্পদান করেঃ কল্যাণমূলক রাষ্ট্র সমাজের সর্বাধিক মঙ্গলের জন্য সামাজিক বীমা, সামাজিক নিরাপত্তা, বেকারভাতা ইত্যাদির ব্যবস্থা করে। বিনা খরচে শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। রাস্তাঘাট নির্মাণ, পানীয় জলের সরবরাহ, দুস্থ ও অবহেলিতদের সাহায্য ও পুনর্বাসন এবং অন্যান্য সমাজকল্যাণমূলক কার্যবালী সম্পাদন করে। জার্মানী, সুইডেন, নরওয়ে, ডেনমার্ক, কানাডা প্রভৃতি রাষ্ট্র সমাজকল্যাণমূলক কার্যাবলী সম্পাদন করে।

৩) আয় বণ্টনঃ কল্যাণমূলক রাষ্ট্র পরিকল্পনার ভিত্তিতে উৎপাদন ও বণ্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে জাতীয় সম্পদের সুষম ব্যবহার নিশ্চিত করে এবং উত্তম কর ব্যবস্থার দ্বারা আয় বণ্টনের ব্যবস্থা করে।

৪) কল্যাণমূলক রাষ্ট্র মধ্যপন্থার অনুসারীঃ পঁজিবাদী ব্যবস্থার অর্থনৈতিক কুফল এবং সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার মাত্রাতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণের মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়ে কল্যাণমূলক রাষ্ট্র উভয় ব্যবস্থার সুফল লাভের ব্যবস্থা করে।

৫) জীবন যাত্রার মান সংরক্ষণঃ শ্রমিক, কৃষক ও মজুরদের স্বার্থ রক্ষার জন্য কল্যাণমূলক রাষ্ট্র সকল প্রকার শোষণ ও নির্যাতনের মূলোৎপাটন করে। খাদ্যদ্রব্য সংগ্রহ, সরবরাহ ও রেশনের ব্যবস্থা এবং মূল্য নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রার ন্যূনতম মান সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে।

আরো পড়ুনঃ

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url