মিশ্র অর্থনীতি কাকে বলে? মূল বৈশিষ্ট্য, সুবিধা, অসুবিধা

মিশ্র অর্থনীতি কাকে বলে?

মিশ্র অর্থনীতি হল একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যা মুক্ত বাজার অর্থনীতি এবং পরিকল্পিত অর্থনীতির উভয়েরই বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থায়, বেসরকারি খাত এবং সরকার উভয়ই অর্থনীতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

মিশ্র অর্থনীতির মূল বৈশিষ্ট্য

মিশ্র অর্থনীতির মূল বৈশিষ্ট্যগুলি হল:

১. উৎপাদন, বিনিয়োগ এবং মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের স্বাধীনতা

মিশ্র অর্থনীতিতে, উৎপাদন, বিনিয়োগ এবং মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের স্বাধীনতা রয়েছে। অর্থাৎ, বেসরকারি খাত নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী পণ্য এবং পরিষেবা উৎপাদন করতে পারে, বিনিয়োগ করতে পারে এবং পণ্যের দাম নির্ধারণ করতে পারে।

২. সরকারের নিয়ন্ত্রণ এবং হস্তক্ষেপের মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পরিচালনা

মিশ্র অর্থনীতিতে, সরকার অর্থনীতির কিছু ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ এবং হস্তক্ষেপ করে। উদাহরণস্বরূপ, সরকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, পরিবহন, বিদ্যুৎ, পানি ইত্যাদি খাত নিয়ন্ত্রণ করে। সরকার এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক কল্যাণমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে।

৩. সামাজিক কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য সরকারের ভূমিকা

মিশ্র অর্থনীতিতে, সরকার সামাজিক কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উদাহরণস্বরূপ, সরকার বেকারত্ব ভাতা, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা ইত্যাদি প্রদান করে। সরকার এছাড়াও শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, পরিবহন ইত্যাদি খাতে বিনিয়োগ করে।

৪. ভোক্তার স্বাধীনতা

মিশ্র অর্থনীতিতে, ভোক্তাদের পণ্য এবং পরিষেবা ক্রয়-বিক্রয় ও ভোগের ক্ষেত্রে অবাধ স্বাধীনতা রয়েছে। অর্থাৎ, ভোক্তারা তাদের পছন্দ অনুযায়ী পণ্য এবং পরিষেবা ক্রয়-বিক্রয় ও ভোগ করতে পারে।

৫. প্রতিযোগিতামূলক বাজার

মিশ্র অর্থনীতিতে, বাজার প্রতিযোগিতামূলক থাকে। অর্থাৎ, বাজারে অনেকগুলি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকে এবং তারা পণ্য এবং পরিষেবা সরবরাহের জন্য প্রতিযোগিতা করে। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে, পণ্যের দাম কম থাকে এবং ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষা হয়।

৬. অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা

মিশ্র অর্থনীতিতে, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা হয়। অর্থাৎ, অর্থনীতিতে মন্দা, মুদ্রাস্ফীতি ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।

৭. উৎপাদনশীলতা এবং উদ্ভাবন বৃদ্ধি

মিশ্র অর্থনীতি উৎপাদনশীলতা এবং উদ্ভাবন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। বেসরকারি খাতের প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এছাড়াও, সরকারের সামাজিক কল্যাণমূলক কর্মসূচি এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি খাতে বিনিয়োগ উদ্ভাবন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

মিশ্র অর্থনীতির সুবিধা

মিশ্র অর্থনীতির সুবিধাগুলি হল:

১. উৎপাদনশীলতা এবং উদ্ভাবন বৃদ্ধি

মিশ্র অর্থনীতি উৎপাদনশীলতা এবং উদ্ভাবন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। বেসরকারি খাতের প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এছাড়াও, সরকারের সামাজিক কল্যাণমূলক কর্মসূচি এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি খাতে বিনিয়োগ উদ্ভাবন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

২. অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা

মিশ্র অর্থনীতি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। অর্থাৎ, অর্থনীতিতে মন্দা, মুদ্রাস্ফীতি ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।

৩. সামাজিক কল্যাণ নিশ্চিতকরণ

মিশ্র অর্থনীতি সামাজিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে সহায়তা করে। সরকারের সামাজিক কল্যাণমূলক কর্মসূচির মাধ্যমে দরিদ্র, অসহায় ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়।

৪. ভোক্তার স্বাধীনতা

মিশ্র অর্থনীতি ভোক্তার স্বাধীনতা নিশ্চিত করে। ভোক্তারা তাদের পছন্দ অনুযায়ী পণ্য এবং পরিষেবা ক্রয়-বিক্রয় ও ভোগ করতে পারে।

৫. বাজারের প্রতিযোগিতা

মিশ্র অর্থনীতি বাজারের প্রতিযোগিতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। বেসরকারি খাতের প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ বাজারের প্রতিযোগিতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

মিশ্র অর্থনীতির অসুবিধা

মিশ্র অর্থনীতির অসুবিধাগুলি হল:

১. সরকারী হস্তক্ষেপের কারণে জটিলতা

মিশ্র অর্থনীতিতে, সরকার অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করে। এই হস্তক্ষেপের কারণে অর্থনীতি জটিল হয়ে ওঠে।

২. বেসরকারি উদ্যোগ হ্রাস

মিশ্র অর্থনীতিতে, সরকার অর্থনীতির কিছু ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ এবং হস্তক্ষেপ করে। এই হস্তক্ষেপের কারণে বেসরকারি উদ্যোগ হ্রাস পেতে পারে।

৩. দারিদ্র্য হ্রাসের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা

মিশ্র অর্থনীতি দারিদ্র্য হ্রাসের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা রাখে। সরকারের সামাজিক কল্যাণমূলক কর্মসূচির মাধ্যমে দরিদ্র, অসহায় ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নত করা গেলেও, দারিদ্র্য পুরোপুরি দূর করা সম্ভব হয় না।

৪. অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা

মিশ্র অর্থনীতি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা রাখে। সরকারের অর্থনৈতিক নীতিগুলির কারণে অর্থনীতিতে মন্দা, মুদ্রাস্ফীতি ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৫. বাজারের প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা

মিশ্র অর্থনীতিতে, সরকারের হস্তক্ষেপের কারণে বাজারের প্রতিযোগিতা হ্রাস পেতে পারে।

৬. সরকারী ব্যয় বৃদ্ধি

মিশ্র অর্থনীতিতে, সরকারের সামাজিক কল্যাণমূলক কর্মসূচি এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি খাতে বিনিয়োগের কারণে সরকারী ব্যয় বৃদ্ধি পায়।

বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের অর্থনীতি মিশ্র অর্থনীতির অন্তর্ভুক্ত। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, ভারত, বাংলাদেশ ইত্যাদি দেশের অর্থনীতি মিশ্র অর্থনীতি।

বাংলাদেশের অর্থনীতিও একটি মিশ্র অর্থনীতি। এই অর্থনীতিতে বেসরকারি খাত অর্থনীতির বৃহত্তম অংশ হলেও, সরকারেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, পরিবহন, বিদ্যুৎ, পানি ইত্যাদি খাত। সরকার এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক কল্যাণমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে।

আরো পড়ুনঃ কল্যাণমূলক রাষ্ট্র কাকে বলে? কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url