কারবার কাকে বলে? কারবারের পরিধি | কারবারের মৌলিক সাধারণ বৈশিষ্ট্য

কারবার কাকে বলে?

ইংরেজি Business শব্দটির বাংলা প্রতিরূপ হলো কারবার। Business শব্দটি Bussyness শব্দ থেকে এসেছে। Busyness কথাটির অর্থ হল ব্যস্ত থাকা। তবে যে কোনো কাজে ব্যস্ত থাকাকেই আমরা কারবার বলব না। সেই কাজ পুনঃপুনঃ উৎপাদন ও বিক্রয়-সংক্রান্ত হওয়া চাই এবং এর মাধ্যমে মুনাফা অর্জন হওয়া চাই।


Business শব্দটির বিভিন্ন অর্থ আছে। Business শব্দটির অভিধানগত অর্থ হল পেশা। তত্ত্বগতভাবে Business শব্দটির অর্থ হল কোনো কিছুতে ব্যস্ত থাকা। অর্থনীতির দিক দিয়ে কথাটির অর্থ হল টাকাকড়ি রোজগারের কাজে ব্যস্ত থাকা। বাণিজ্যিক দিক দিয়ে কথাটির অর্থ হল পণ্য বা সেবার পুনঃপুনঃ ক্রয়বিক্রয়। 

অর্থাৎসাধারণভাবে কারবার বলতে আমরা বুঝি বারবার ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে ক্রেতা-বিক্রেতার পারস্পরিক সুবিধা লাভের বিষয়টিকে।

কারবারের সংজ্ঞাকে প্রধানত দুইটি দিক দিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে।

ক) প্রতিষ্ঠানিক সংজ্ঞা

খ) ক্রিয়াগত সংজ্ঞা

কারবারের প্রতিষ্ঠানভিত্তিক সংজ্ঞা

অধ্যাপক Norman Richard Ownes-এর মতে, যে প্রতিষ্ঠান বাজারে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে পণ্য উৎপাদন ও বণ্টন কাজে লিপ্ত থাকে বা দামের বিনিময়ে সেবা পরিবেশন করে, তাকে কারবার বলে।

কারবারের ক্রিয়াগত সংজ্ঞা

অধ্যাপক M.C. Shukla-র মতে, কারবার মানুষের সেই সকল কার্যকলাপ বা পণ্য উৎপাদন বা ক্রয় সংক্রান্ত কাজে লিপ্ত থাকে এবং তা মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে বিক্রয় করে।

কারবারের পরিধি

কারবারের পরিধি বলতে কারবারের বিস্তৃতি বোঝায়। সেক্ষেত্রে বলা যায় যে-

১) প্রকৃতি থেকে আমরা নির্দিষ্ট জায়গা থেকে কাঁচামাল আনা।

২) সেই কাঁচামালগুলোকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দ্রব্যে রূপান্তরিত করা।

৩) উৎপাদিত দ্রব্য বাজারে নিয়ে গিয়ে বিক্রির মাধ্যমে মুনাফা অর্জন কর।

কারবারের মৌলিক সাধারণ বৈশিষ্ট্য

কারবার আয়তনে যে রকমই হোক না কেন, ছোট, মাঝারী বা বড়, কিংবা কারবার একমালিকী প্রতিষ্ঠানই হোক বা হিন্দু পারিবারিক কারবার, কিংবা অংশীদারী বা যৌথ মূলধনী কোম্পানী যে কোনো প্রকার কারবারেই কিছু মৌলিক সাধারণ বৈশিষ্ট্য বর্তমান। কারবারের মৌলিক সাধারণ বৈশিষ্ট্য বলতে বোঝায় কোনো একটি প্রতিষ্ঠান কারবার কিনা তা চেনার কয়েকটি লক্ষণ। 

কারবারের মৌলিক সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি এইভাবে আলোচনা করা যায়ঃ

১) যেকোনো কারবারই অর্থনৈতিক কাজঃ যেকোনো কারবারের প্রতিটি কাজই অর্থনৈতিক অর্থাৎ বারংবার ক্রয়বিক্রয়ের মাধ্যমে মুনাফা অর্জনের যাবতীয় অর্থনৈতিক কাজই কারবারের অন্তর্গত।

২) বারংবার উৎপাদন ও বিনিময়ঃ কেবলমাত্র একবার ক্রয় বা বিক্রয় করলেই সেই কাজ কারবার বলে গণ্য হবে না। এই ক্রয়বিক্রয়ের কাজ বারবার হওয়া চাই। যদি কোনো ব্যবসায়ী নিজে উৎপাদন না করে তবে তার ক্ষেত্রে দ্রব্য বিক্রি নিয়মিত ও বারবার হওয়া চাই। এই বারবার ক্রয়বিক্রয়ের মাধ্যমে দ্রব্য বা সেবাকর্মের মালিকানার হস্তান্তর হয়।

৩) ক্রেতা-বিক্রেতার পারস্পরিক সুবিধাঃ কারবারের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় কথা হল এই ক্রয় ও বিক্রয় কাজের মধ্য দিয়ে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েই কিছু সুবিধা লাভ করবে। বিক্রেতা যেমন দ্রব্য বিক্রয় করে মুনাফা অর্জন করবে সেই রকমই ক্রেতাও দ্রব্য ব্যবহার করে উপযোগিতা লাভ করবে অর্থাৎ ক্রেতা তার অভাব পূরণ করবে।

৪) পূর্বানুমানঃ পূর্বানুমান বলতে বোঝায় বর্তমান অবস্থা থেকে অতীতের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে আঁচ করা। ভবিষ্যতের আনুমানিক চাহিদা যদি সঠিকভাবে অনুমান করা যায় তবেই ব্যবসায়ী উপযুক্ত পরিমাণ দ্রব্য উৎপাদন করে সেই অভাব পূরণে সমর্থ হবে।

৫) ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তাঃ বলা হয় "No risk, no gain." অর্থাৎ ঝুঁকি না নিলে লাভের মুখ দেখা সম্ভরপর নাও হতে পারে। যেহেতু ভবিষ্যত অনিশ্চিত তাই ভবিষ্যতের চাহিদার অনুমানেরও হেরফের হতে পারে। তাই বলা হয় কারবারে ঝুঁকি বর্তমান। ঝুঁকির পরিমাণ আন্দাজ করে যদি কোনো কারবারী উৎপাদন করতে গিয়ে দ্বিধাগ্রস্থ হন তবে তিনি সাফল্য লাভ করতে পারবেন না।

৬) সংগঠনঃ যেকোনো কারবারে ক্ষেত্রেই সংগঠন অপরিহার্য। সংগঠন ছাড়া কারবার অচল। কারবারের আকার বা আয়তন যাই হোক না কেন, বলিষ্ঠ সংগঠন যেকোনো কারবারের হৃদস্পন্দন। কারবারের ক্ষেত্রে সংগঠনের গুরুত্ব মানুষের ক্ষেত্রে প্রাণের গুরুত্বের মতোই।

৭) মূলধনঃ প্রয়োজনীয় মূলধন ছাড়া কারবার চালু হতে পারে না। কারবারের আকার বা আয়তন ও গুরুত্ব অনুযায়ী মূলধনের পরিমাণ বিভিন্ন হতে পারে। কারবারে উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনা, কর্মচারীদের মাইনে দেবার জন্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় খরচ মেটাবার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে মূলধন প্রয়োজন হয়। প্রয়োজনীয় পরিমাণ মূলধন কারবারকে সতেজ ও সজীব রাখতে সাহায্য করে।

৮) মুনাফাঃ বলা হয় মুনাফা যোগ্যতার মাপকাঠি - সাফল্যের মানদণ্ড। মুনাফা সৃষ্টি যেকোনো কারবারেরই একটি প্রধান উদ্দেশ্য। কারবারের আয় থেকে প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যয় বাদ দিলে অবশিষ্ট অংশই মুনাফা। মুনাফা কারবারের প্রাণস্বরূপ। মুনাফা না হলে কোনো কারবার বাঁচতে পারে না। কারবারের স্থায়িত্ব লাভের জন্য অবিরাম মুনাফা সৃষ্টি একটি অবশ্য প্রয়োজনীয় কাজ।

৯) সেবার মনোভাবঃ কারবারের সমাজের প্রতি দায়িত্ব আছে কারণ সমাজের জন্যই কারবার বেঁচে থাকে। সমাজের সর্বস্তরের মানুষের নিকট কারবার দায়বদ্ধ। সঠিক মানের, সঠিক মূল্যের দ্রব্য সঠিক সময়ে পরিবশেন করাই কারবারের কাজ।

১০) প্রবর্তকঃ কোনো কারবার যাদের প্রাথমিক পরিশ্রমের মাধ্যমে গড়ে ওঠে তাদের প্রবর্তক বলে। বাজারের চাহিদা নির্ণয় করে কারবারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা স্থির করাই প্রবর্তকের প্রধান কাজ।

Our another educational Site in Englsih.. www.shadowpower24.com

আরো পড়ুনঃ

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url