বাণিজ্যিক ব্যাংক কাকে বলে? বাণিজ্যিক ব্যাংকের বৈশিষ্ট্য

বাণিজ্যিক ব্যাংক কাকে বলে?

বাণিজ্যিক স্বার্থে যে সকল ব্যাংক গঠিত, পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়, তাকে বাণিজ্যিক ব্যাংক বলে। ব্যাংক বলতে মূলত বাণিজ্যিক ব্যাংককেই বুঝায়। বাণিজ্যিক ব্যাংককে কেন্দ্র করেই আধুনিক ব্যাংক এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

অধ্যাপক রোজার বলেছেন, যে ব্যাংক মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে অর্থ এবং অর্থের মূল্য নিয়ে কারবার করে, তাকে বাণিজ্যিক ব্যাংক বলে। 

অধ্যাপক আর.এস সেয়ার্স এর মতে, বাণিজ্যিক ব্যাংক শুধু অর্থের কারবারই করে না, বরং অর্থের গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদকও বটে।

বাণিজ্যিক ব্যাংকের বৈশিষ্ট্য

বাণিজ্যিক ব্যাংকের সংজ্ঞাসমূহ বিশ্লেষণ করলে এর কতিপয় লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য ফুটে ওঠে। নিচে বৈশিষ্ট্যগুলোর বিবরণ দেওয়া হলোঃ

সংগঠনঃ বাণিজ্যিক ব্যাংক সাধারণত যৌথমূলধনী কিংবা সমবায় প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। অনেক দেশে রাষ্ট্রীয় আইন বলে বাণিজ্যিক ব্যাংক স্থাপিত হয়। 

মালিকানাঃ বাণিজ্যিক ব্যাংক বেসরকারী কিংবা সরকারী যেকোনো ধরনের মালিকানা বিশিষ্ট হতে পারে।

সদস্যের সীমাবদ্ধতাঃ যৌথ মালিকানায় বাণিজ্যিক ব্যাংকের ন্যূনতম সদস্য হলো সাত জন এবং সর্বোচ্চ সংখ্যা অনুমোদিত মূলধন ও প্রতিটি শেয়ারের মালিক মূল্য দ্বারা নির্ধারিত হয়। অংশীদারী বাণিজ্যিক ব্যাংকের সদস্য সংখ্যা দশ জনের বেশি হতে পারে না।

প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্যঃ বাণিজ্যিক ব্যাংক একাউন্ট ব্যাংকিং বা যেকোনো প্রকৃতি বিশিষ্ট হতে পারে। বর্তমানে একমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া আর কোথাও একক ব্যাংকিং ব্যবস্থার অস্তিত্ব নেই। পৃথিবীজোড়া শাখা ব্যাংকিং ব্যবস্থাই প্রসার লাভ করেছে। 

ঋণের ব্যবসায়ীঃ বাণিজ্যিক ব্যাংকে আরেকটি অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য হলো, এটি ঋণের ব্যবসায়ী, পণ্য দ্রব্যের ব্যবসায়ী নয়। এটি অর্থের কারবার করে, অন্য কিছুর নয়। ব্যাংক অর্থ ছাড়া অন্য কিছুর ব্যবসা করতে পারে না।

মুনাফা অর্জনঃ মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে মূলতঃ বাণিজ্যিক ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। অবশ্য রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক মুনাফার সাথে সাথে জনকল্যাণের প্রতিও যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করে। এ কারণে প্রায় বছর সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে মূলধন ভর্তুকি দিতে হয়।

ব্যবসা এর উপাদানঃ বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবসায়ের প্রধান উপাদান হলো টাকা পয়সা। টাকা-পয়সার লেনদেন করা এর মুখ্য কাজ। এজন্য বলা হয়, ব্যাংকের Input ও Output উভয়ই টাকা।

আমানত গ্রহণঃ বাণিজ্যিক ব্যাংক জনগণের কাছ থেকে টাকা পয়সা আমানত গ্রহণের পাশাপাশি ঋণ মঞ্জুর এর মাধ্যমে ঋণ সৃষ্টি করে।

বিনিময়ের মাধ্যম সৃষ্টিঃ বাণিজ্যিক ব্যাংক বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে চেক ইস্যু করে। চেক লেনদেনের একটি সহজ মাধ্যম। 

স্বল্পমেয়াদি ঋণ এর ব্যবসায়ঃ আমানতী টাকা চাহিবামাত্র পরিশোধ করতে হয় বলে বাণিজ্যিক ব্যাংক যে কোন দেশের মুদ্রাবাজারে স্বল্পমেয়াদি ঋণ সরকারি হিসাবে সমধিক পরিচিত। অবশ্য কোন দেশে আজকাল বাণিজ্যিক ব্যাংক স্বল্প পরিমাণে দীর্ঘমেয়াদী ঋণও দিয়ে থাকে।

ঝুঁকি গ্রহণঃ ঋণ মঞ্জুর, প্রত্যয় পত্র খোলা ইত্যাদি সবরকম ব্যাংকিং ঝুঁকি নিহিত। বাণিজ্যিক ব্যাংক এসব ঝুঁকি সম্বলিত কার্যাবলী সম্পাদন করে মুনাফা অর্জন করে।

আরো পড়ুনঃ

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url