অংশীদারি ব্যবসায়ের গঠন প্রণালী

 অংশীদারি ব্যবসায় হলো দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যে বৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জনের নিমিত্তে যে ব্যবসায় গড়ে ওঠে। অংশীদারি ব্যবসায় গঠনের জন্য কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম ও প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। এই নিবন্ধে অংশীদারি ব্যবসায় গঠনের সমস্ত প্রয়োজনীয় তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

অংশীদারি ব্যবসায়ের সংজ্ঞা

বাংলাদেশের অংশীদারি আইন, ১৯৩২ অনুসারে, অংশীদারি বলতে বোঝায় দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যে এমন চুক্তি, যার মাধ্যমে তারা একত্রে কোনো ব্যবসায়ের জন্য নিজেদের অর্থ, সম্পত্তি বা শ্রম বিনিয়োগ করে এবং ঐ ব্যবসায়ের লাভ-লোকসানের জন্য সম্মিলিতভাবে দায়ী হয়।

অংশীদারি ব্যবসায়ের প্রকারভেদ

বাংলাদেশের অংশীদারি আইনে অংশীদারি ব্যবসায়ের দুটি প্রধান প্রকারভেদ রয়েছে:

  • সাধারণ অংশীদারি
  • বিশেষ অংশীদারি

সাধারণ অংশীদারি

সাধারণ অংশীদারি হলো এমন অংশীদারি, যেখানে অংশীদারগণ সমানভাবে মালিকানার অধিকারী এবং লাভ-লোকসানের জন্য সমানভাবে দায়ী।

বিশেষ অংশীদারি

বিশেষ অংশীদারি হলো এমন অংশীদারি, যেখানে অংশীদারগণ মালিকানার অধিকার বা লাভ-লোকসানের দায়িত্বের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্নভাবে চুক্তিবদ্ধ হয়।

অংশীদারি ব্যবসায় গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়সমূহ

অংশীদারি ব্যবসায় গঠনের জন্য নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ প্রয়োজন:

  • অংশীদারগণের সংখ্যা: অংশীদারি ব্যবসায়ের সদস্য সংখ্যা সর্বনিম্ন ২ জন এবং সর্বোচ্চ ২০ জন হতে পারে।
  • অংশীদারগণের মালিকানার অংশ: অংশীদারগণ তাদের মালিকানার অংশ লিখিত চুক্তিতে উল্লেখ করতে হবে।
  • অংশীদারগণের দায়িত্ব: অংশীদারগণ তাদের দায়িত্ব লিখিত চুক্তিতে উল্লেখ করতে হবে।
  • ব্যবসায়ের নাম: অংশীদারি ব্যবসায়ের একটি নাম থাকতে হবে।
  • ব্যবসায়ের ঠিকানা: অংশীদারি ব্যবসায়ের একটি ঠিকানা থাকতে হবে।
  • ব্যবসায়ের প্রকৃতি: অংশীদারি ব্যবসায়ের প্রকৃতি লিখিত চুক্তিতে উল্লেখ করতে হবে।

অংশীদারি ব্যবসায় গঠনের প্রক্রিয়া

অংশীদারি ব্যবসায় গঠনের জন্য নিম্নলিখিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়:

১. অংশীদারগণকে একটি লিখিত চুক্তি সম্পাদন করতে হবে। এই চুক্তিতে অংশীদারগণের মালিকানার অংশ, দায়িত্ব, ব্যবসায়ের নাম, ঠিকানা, প্রকৃতি ইত্যাদি উল্লেখ থাকতে হবে।

২. ব্যবসায়ের জন্য একটি ট্রেড লাইসেন্স নিতে হবে।

৩. ব্যবসায়ের জন্য একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে।

অংশীদারি ব্যবসায়ের সুবিধা

অংশীদারি ব্যবসায়ের অনেক সুবিধা রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি হল:

  • অধিক পুঁজির সংস্থান: অংশীদারি ব্যবসায়ে একাধিক অংশীদার থাকেন। তাই তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে পুঁজি সংগ্রহ করা সম্ভব হয়। ফলে ব্যবসায়ের জন্য অধিক পুঁজি সংগ্রহ করা সহজ হয়।
  • দলবদ্ধ প্রচেষ্টা: অংশীদারি ব্যবসায়ে একাধিক অংশীদার থাকেন। তাই তারা একসাথে কাজ করে ব্যবসায়ের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারেন।
  • সম্মিলিত সিদ্ধান্ত: অংশীদারি ব্যবসায়ে অংশীদাররা মিলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ফলে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা হয় না।
  • দক্ষ পরিচালনা: অংশীদারি ব্যবসায়ে বিভিন্ন পেশার ও অভিজ্ঞতার অংশীদার থাকতে পারেন। তাই তারা তাদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়ের পরিচালনাকে আরও দক্ষ করে তুলতে পারেন।
  • বৃহদায়তন ব্যবসায়ের সুবিধা ভোগ: অংশীদারি ব্যবসায়ে অধিক পুঁজির সংস্থান ও দলবদ্ধ প্রচেষ্টার সুবিধা থাকায় বৃহদায়তন ব্যবসায়ের সুবিধা ভোগ করা সম্ভব হয়।
  • গবেষণা কাজে অর্থ ব্যয়: অংশীদারি ব্যবসায়ে অধিক পুঁজির সংস্থান থাকায় গবেষণা কাজে অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হয়। ফলে নতুন পণ্য ও সেবা উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়।
  • প্রতিটি অংশীদারের প্রতিভার সর্বোত্তম ব্যবহার: অংশীদারি ব্যবসায়ে বিভিন্ন পেশার ও অভিজ্ঞতার অংশীদার থাকতে পারেন। তাই তারা তাদের প্রতিভার সর্বোত্তম ব্যবহার করে ব্যবসায়ের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারেন।

 অংশীদারি ব্যবসায়ের কিছু অসুবিধা

 অংশীদারি ব্যবসায়ের কিছু অসুবিধাও রয়েছে। এই অসুবিধাগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • গোপনীয়তা বজায় রাখার অসুবিধা: অংশীদারি ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ের গোপনীয়তা বজায় রাখা কঠিন হতে পারে। কারণ, ব্যবসায়ের সব তথ্য অংশীদারদের সাথে শেয়ার করতে হয়।
  • দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমস্যা: অংশীদারি ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা কঠিন হতে পারে। কারণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য অংশীদারদের মধ্যে একমত হতে হয়।
  • স্থায়ীত্বের সমস্যা: অংশীদারি ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে স্থায়ীত্বের সমস্যা হতে পারে। কারণ, অংশীদারদের মধ্যে মতবিরোধ হলে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

অংশীদারি ব্যবসায়ের অসুবিধাগুলি এড়ানোর উপায়

অংশীদারি ব্যবসায়ের অসুবিধাগুলি এড়ানোর জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি নেওয়া যেতে পারে:

  • ব্যবসার চুক্তিতে গোপনীয়তা রক্ষার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা।
  • ব্যবসার চুক্তিতে অংশীদারদের ক্ষমতা ও দায়িত্ব স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা।
  • ব্যবসার পরিচালনায় অংশীদারদের মধ্যে সুষ্ঠু যোগাযোগ ও সমন্বয় রক্ষা করা।

FAQ's

১) অংশীদারি ব্যবসায়ের অসুবিধাগুলি কী কী?

অংশীদারি ব্যবসায়ের অসুবিধাগুলি হল:

  • গোপনীয়তা বজায় রাখার অসুবিধা
  • দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমস্যা
  • স্থায়ীত্বের সমস্যা

২) অংশীদারি ব্যবসায়ের গোপনীয়তা বজায় রাখার অসুবিধা কী?

অংশীদারি ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ের সব তথ্য অংশীদারদের সাথে শেয়ার করতে হয়। এর ফলে, প্রতিযোগীদের কাছে ব্যবসায়ের গোপনীয়তা ফাঁস হয়ে যেতে পারে।

৩) অংশীদারি ব্যবসায়ের দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমস্যা কী?

অংশীদারি ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য অংশীদারদের মধ্যে একমত হতে হয়। এর ফলে, ব্যবসায়ের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা নষ্ট হতে পারে।

৪) অংশীদারি ব্যবসায়ের স্থায়ীত্বের সমস্যা কী?

অংশীদারি ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে অংশীদারদের মধ্যে মতবিরোধ হলে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url