মালভূমি কাকে বলে? মালভূমির প্রকারভেদ, চ্যুতি বিশিষ্ট মালভূমি, পর্বত মধ্যবর্তী মালভূমি, ক্ষয়জাত মালভূমি, আগ্নেয়জাত মালভূমি

মালভূমি কাকে বলে?

সমুদ্র সমতল থেকে অতি উচ্চ বিস্তৃর্ণ সমভূমিকে মালভূমি বলে। সমুদ্র পৃষ্ট হতে এর উচ্চতা কয়েক শত মিটার হতে কয়েক হাজার মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। ভূ-অভ্যন্তরস্থ ও ভূ-পৃষ্ঠস্থ বিভিন্ন প্রক্রিয়ার কারণে মালভূমির সৃষ্টি হতে পারে। যেমনঃ পাত সঞ্চালন, ভূ-আন্দোলন, ভূ-পৃষ্ঠের ক্ষয়সাধন, আগ্নেয় তৎপরতা ও লাভা সঞ্চয়ের মাধ্যমে মালভূমি গঠিত হয়ে থাকে। পৃথিবীর মোটভূমির শতকরা পাঁচ ভাগ মালভূমি। 

উদাহরণ : কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার শিল্ড।

চ্যুতি বিশিষ্ট মালভূমি

চ্যুতির ফলে কোন এলাকার বিরাট অংশ অসমানভাবে ওপরে উঠে গিয়ে এ ধরণের মালভূমির সৃষ্টি করে। 

উৎপত্তিঃ ভূ-পৃষ্ঠের কোন বিস্তৃত স্থান এর দুই পার্শ্বে অপেক্ষাকৃত দুর্বল অঞ্চলে ভূ-অভ্যন্তরস্থ যেখানে দুটি নাজুক অবস্থার মাঝে অবস্থান করে এবং প্রবল চাপে ফাটল সৃষ্টি হয়। এই ফাটলগুলো পাশাপাশি আসে বরাবর।

বৈশিষ্ট্যঃ

১. চ্যুতির কারণে এ মালভূমির সৃষ্টি হয়।

২. বিস্তৃত এলাকা চ্যুতি বরাবর উপরে উঠে যায়।

উদাহরণ : স্পেনের মেসেটা।

পর্বত মধ্যবর্তী মালভূমি

ভঙ্গিল পর্বত গঠিত হবার সময় পর্বত দ্বারা বেষ্টিত নিম্নস্থান সমূহ উঁচু হয়ে যে মালভূমি সৃষ্টি করে তাই পর্বত মধ্যবর্তী মালভূমি। পরবর্তীতে মালভূমির উচ্চতা সাধারণত ৩০০০-৫০০০ মিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। 

উৎপত্তি : সংকোচনজনিত চাপের ফলে ভঙ্গিল পর্বতের মাঝে এ ধরণের মালভূমি সৃষ্টি হয়। এছাড়া পাত সঞ্চালন এবং ভূ-আলোড়নের সময় কখনও কখনও ভূ-পৃষ্ঠের ভঙ্গিল পর্বত শ্রেণী তাদের মধ্যবর্তী অপেক্ষাকৃত নিম্ন স্থানসমূহকে ওপরে তুলে আনে এবং মালভূমিতে পরিণত করে। এভাবে গঠিত মালভূমি পর্বত বেষ্টিত থাকে বলে পর্বতবেষ্টিত মালভূমি বলে।

উদাহরণ : তিব্বত মালভূমি। এটি পৃথিবীর বৃহত্তম ও উচ্চমত মালভূমি। তিব্বত মালভূমির গড় উচ্চতা ৪০০০ মিটারের বেশি। এর আয়তন ৫২ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার।

এছাড়া এশিয়ার আল তিতাস ও তিয়েনশান পর্বতমালার মধ্যে তারিম মালভূমি, এলুবর্জ ও জাগ্রোস পর্বত শ্রেণীর মধ্যে ইরানের মালভূমি পর্বত মধ্যবর্তী মালভূমির উদাহরণ।

ক্ষয়জাত মালভূমি

কোন পার্বত্য অঞ্চল বা উঁচু ভূখন্ড নদী, হিমবাহ, বৃষ্টিপাত, বায়ু প্রবাহ প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত হলে তার উচ্চতা হ্রাস পায় এবং মালভূমিতে পরিণত হয়। এ ধরণের মালভূমিকে ক্ষয়জাত বা অবশিষ্ট মালভূমি বলে।

উৎপত্তি : এ ধরণের মালভূমির পুরাতন উঁচু ভূ-ভাগ ক্ষয় প্রাপ্ত হয়ে সৃষ্টি হয়। এই শিলার ক্ষয় প্রকৃতি এর বন্ধুরতা নিয়ন্ত্রণ করে। যেখানে ক্ষয়কাজ বেশী হয় সেখানে ভূমির বন্ধুরতা বেশী দেখা যায়।

বৈশিষ্ট্য :

১. ক্ষয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সৃষ্টি হয়। 

২. সাধারণত এ মালভূমি স্বল্প উচ্চতা বিশিষ্ট হয়।

৩. সহজে ক্ষয়প্রাপ্ত শিলাসমূহ ক্ষয় হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন ক্ষয়জাত ভূমিরূপ দেখা যায়। যেমন-

মেসা, পিলার, বুটি, পিনাকল।

উদাহরণ : দক্ষিন ভারতের মালভূমি, সৌদি আরবের মালভূমি, সাইবেরিয়ার পূর্ব মালভূমি, আফ্রিকার দক্ষিণ মালভূমি, সাইবেরিয়ার পূর্ব মালভূমি, আফ্রিকার দক্ষিণ মালভূমি ক্ষয়জাত মালভূমি। ইউরোপের ক্যালিডোনিয়ান পর্বতশ্রেণী ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ফিজেল্ড মালভূমির সৃষ্টি করেছে।

আগ্নেয়জাত মালভূমি

আগ্নেয় লাভা প্রবাহ থেকে এ ধরণের মালভূমির সৃষ্টি।

উৎপত্তি : ভূ-ত্বকের কোন ফাটল বা আগ্নেয়গিরির ছিদ্র পথে ভূ-গর্ভ হতে লাভা প্রবাহ ভূ-পৃষ্টে উঁচু হয়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং ক্রমশ: ঠান্ডা ও কঠিন হয়ে মালভূমির সৃষ্টি করে।

বৈশিষ্ট্য :

১. আগ্নেয় লাভা ভিত্তিক।

২. বিস্তীর্ণ এলাকায় লাভা ছড়িয়ে পড়ে এ ধরণের মালভূমির সৃষ্টি হয়।

৩. এ ধরণের মালভূমি বন্ধুর ভূ-প্রকৃতি সম্পন্ন।

৪. শুষ্ক জলাবায়ুর আওতাভূক্ত থাকায় জনবসতি খুব কম।

৫. আগ্নেয়জাত লাভা দ্বারা গঠিত তাই ক্ষয় ক্রিয়ার মাধ্যমে উর্বর মৃত্তিকা সৃষ্টি করে।

৬. এ প্রকার মালভূমিতে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ যেমন টিন, তামা পাওয়া যায়। 

৭. মালভূমির খরস্রোতা নদীতে বাঁধের মাধ্যমে পানিবিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়।

উদাহরণ : ভারতের দাক্ষিণাত্যের মালভূমি। উর্বর মৃত্তিকার কারণে এখানে ভারতের সবচেয়ে বেশী তুলা উৎপাদন হয়।

আরো পড়ুনঃ পৃথিবীর ছাদ কাকে বলে? পামির মালভূমিকে পৃথিবীর ছাদ বলা হয় কেন?

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url