পৃথিবীর ছাদ কাকে বলে? পামির মালভূমিকে পৃথিবীর ছাদ বলা হয় কেন?

পৃথিবীর ছাদ কাকে বলে?

পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু মালভূমি হলো পামির মালভূমি। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে পামির মালভুমির উচ্চতা ৭ হাজার ৬৪৯ মিটার বা প্রায় ১৬ হাজার ফুট, মধ্য এশিয়ার বিস্তৃত পামির পর্বত শ্রেণীকে কেন্দ্র করে এ মালভূমিটির অবস্থান। এ অঞ্চলটি মূলত বহু উঁচু পর্বতের মিলনস্থল, পৃথিবীর সর্বোচ্চ কয়েকটি পর্বতের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত হওয়ায় এটি পৃথিবীর সর্বোচ্চ মালভূমি হওয়ার মর্যাদা লাভ করেছে।

উঁচুতে অবস্থিত সমতলভূমিকে বলে মালভূমি।

মালভূমি মানে হল এক বা একাদিক পাহাড়ের চূড়ায় সৃষ্টি হওয়া সমতল অঞ্চল, অর্থাৎ কয়েকটি পাহাড়ের সম্মিলিত স্থানে যে সমতল অঞ্চল তৈরি হয় তাই মালভূমি।

শুধু পৃথিবীর সর্বোচ্চই নয় তিব্বত মালভূমির সাথে সম্মিলিত ভাবে পামির পর্বত শ্রেণীর সংলগ্ন মালভূমিটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মালভূমি অঞ্চল, তাই একে পৃথিবীর ছাদ বলা হয়।

পামির মালভূমির পাশে ছড়িয়ে আছে বহু উঁচু নিচু মালভূমি। বছরের অধিকাংশ সময় তুষারে আবৃত থাকে। এ অঞ্চলে বছরে গড়ে প্রায় পাঁচ ইঞ্চি তুষারপাত হয়। তবে প্রতি বছর অল্প সময়ের জন্যে এখানে গ্রীষ্মকাল দেখা যায়। গ্রীষ্মকালে এ বিস্তীর্ণ অঞ্চল ঘাসে ঢাকা থাকে, এ সময় এটি তৃণচারন ভূমি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। স্থানীয় অধিবাসীরা তাঁদের গবাদি পশু পালনের জন্য এই স্বল্প স্থায়ী গ্রীষ্মকালের উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল।

মধ্য এশিয়ায় অবস্থিত এমনই এক অঞ্চল পামির মালভূমি পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু এবং সবচেয়ে বড় মালভূমি হিসেবে পরিচিত। পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু মালভূমি হলো পামির। স্থানীয় ভাষায় এর উচ্চারন হলো ‘পমির’। যার অর্থ ‘সূর্যের পা’। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে পামির মালভূমির উচ্চতা প্রায় ষোল হাজার ফুট। মধ্য এশিয়ার বিস্তৃত পর্বত শ্রেণীকে কেন্দ্র করে এই মালভূমিটির অবস্থান। তাজিকিস্তান, আফগানিস্তান, তিব্বত, চিন এবং পাকিস্তানের কিছু অংশ পর্যন্ত মালভূমিটি বিস্তৃত। এই অঞ্চলটি মূলত বহু উঁচু পর্বতের মিলনস্থল। পৃথিবীর কয়েকটি পর্বতের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত হওয়ায় এটি পৃথিবীর সর্ব্বোচ্চ মালভূমির মর্যাদা লাভ করেছে। শুধু পৃথিবীর সর্ব্বোচ্চই নয়, তিব্বত মালভূমির সাথে সম্মিলিতভাবে পামির পর্বতশ্রেণী সংলগ্ন মালভূমিটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মালভূমি অঞ্চল। আর তাই একে ‘পৃথিবীর ছাদ’ বলা হয়।

প্রাচীণকালের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যি পথ ‘সিল্ক রোড’ পামির পর্বতমালাকে অতিক্রম করেছে। অতীতে বিশ্ববাণিজ্য পরিচালনার পথ হিসেবে এই ‘সিল্ক রোড’ অত্যন্ত বিখ্যাত ছিল। এই রাস্তাটি চিনের প্রাচীণ রাজধানী জিয়ান থেকে পামির পর্বতমালার উপর দিয়ে অতিবাহিত হয়ে জিনজিয়ান রাজ্যের সবচেয়ে বড় শহর কাশগড়কে সংযুক্ত করেছে। বিভিন্ন সময় এই রাজ্যের দখল নিয়ে পার্শ্ববর্তী রাজ্যের মধ্যে একাধিক লড়াই হয়েছে। পামির মালভূমি অঞ্চলে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন এবং খনিজ সম্পদ আহরনকে ঘিরে একাধিক বিবাদ তৈরি হয়েছে। বর্তমানে মধ্য এশিয়ার দেশ গুলোর সাথে চিন তাদের বিবাদ অনেকটাই মিটিয়ে ফেলেছে।

পামির মালভূমির পশ্চিম প্রান্তে কয়লা খনি আবিষ্কৃত হয়েছে। এছাড়া ১৯৮০ সালের দিকে এখানে ‘ক্লিনোহিউমাইট’ নামে এক ধরনের রত্ন পাথরের সন্ধান মিলে। পামির মালভূমির দক্ষিণ-পূর্ব পাশ ঘেঁষে রয়েছে ‘চায়না কারাকোরাম হাইওয়ে’। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু মহাসড়ক। এ মহাসড়কটির মাধ্যমে চায়না ও পাকিস্তান সংযুক্ত হয়েছে। এছাড়া এ অঞ্চলে রয়েছে ‘পামির হাইওয়ে’। যা পৃথিবীর দ্বিতীয় উচ্চতম মহাসড়ক। এ রাস্তাটি তাজিকিস্তানের দুশানমে থেকে কিরগিজিস্তানের ওশ শহরে যাওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url