উৎপাদন উপকরণের ধারণা

উৎপাদন উপকরণের ধারণা 

উৎপাদন বলতে কোন কিছু সৃষ্টি করাকে বুঝায়। কিন্তু বাস্তবে মানুষ কোনো কিছু সৃষ্টি বা ধ্বংস করতে পারে না। সে শুধু প্রকৃতি প্রদত্ত বস্তুর আকার-আকৃতি পরিবর্তন করে ব্যবহার উপযোগী পণ্যে রূপান্তর করে মাত্র। মানুষ কর্তৃক এরূপ রূপান্তরকেই উৎপাদন বলা হয়। তবে যেকোনো বস্তু আপনা আপনিই উৎপাদিত হয় না। 

উৎপাদন করতে হলে কতকগুলো উপকরণ বা উপাদান ব্যবহার করা হয়। যেমনঃ ফসল উৎপাদন করতে হলে কেবলমাত্র জমি হলেই চলবে না, সেখানে কৃষকের শ্রম, মূলধন ও সংগঠন লাগবে, আবার কারখানায় উৎপাদন করতে হলে শুধুমাত্র মেশিন (মূলধন) থাকলেই চলবে না, সেখানে ভূমি, শ্রম ও সংগঠনের প্রয়োজন পড়বে।

অর্থনীতির দৃষ্টিকোণ হতে উৎপাদনের উপাদান চারটি। এগুলো হলো- ভূমি, শ্রম, মূলধন এবং সংগঠন। এদের মধ্যে কোনো কোনোটি প্রাকৃতিক এবং কোনো কোনোটি অপ্রাকৃতিক। উৎপাদনের এ সকল উপকরণ সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ

ভূমি (Land)

সাধারণভাবে পৃথিবীর উপরিভাগকে ভূমি বলে। কিন্তু অর্থনীতিতে ভূমির অর্থ আরো ব্যাপক। এখানে ভূমি বলতে শুধুমাত্র পৃথিবীর উপরিভাগ অর্থাৎ জমিকে না বুঝিয়ে প্রাকৃতিক সকল সম্পদকে বুঝায়। মাটির ঊর্বরাশক্তি, আবহাওয়া, বৃষ্টিপাত, জলবায়ু, তাপ, জল, বাতাস, সূর্যের আলো, খনিজ সম্পদ, মৎস্য ক্ষেত্র, নদ-নদী ইত্যাদি ভূমির অন্তর্গত। ভূমি উৎপাদনের একটি আদি ও মৌলিক উপাদান।

শ্রম (Labor)

উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত মানুষের যাবতীয় শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমই হলো শ্রম। তবে অর্থনীতিতে মানুষের সকল পরিশ্রমকে শ্রম বলে না। কোনরূপ অর্থ লাভের উদ্দেশ্য ছাড়া কেবল আনন্দ লাভের জন্য পরিশ্রম করলে তা শ্রম হিসেবে গণ্য হয় না। অর্থনীতির ভাষায় তাই বলা যায়, মানুষের যে পরিশ্রমের বিনিময়ে কোন কিছু অর্জন করা যায়, তাই হলো শ্রম। উৎপাদনের ক্ষেত্রে শ্রম হলো একটি আদি ও অপরিহার্য উপাদান।

মূলধন (Capital)

সাধারণ দৃষ্টিকোণ হতে মূলধন বলতে ব্যবসায়ে নিয়োজিত অর্থকে বুঝায়। তবে অর্থনীতিতে মূলধনকে এত সংকীর্ণ অর্থে ব্যবহার করা হয় না। উৎপন্ন দ্রব্যের যে অংশ উৎপাদন কার্যে ব্যবহৃত হয় তাকে অর্থনীতির ভাষায় মূলধন বলে। এ দৃষ্টিকোণ হতে অর্থ ছাড়াও যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল, কলকারখানা প্রভৃতি মানুষের উৎপাদিত দ্রব্য যা উৎপাদন কার্যে ব্যবহৃত হয় বলে তা মূলধন হিসেবে গণ্য করা হয়।

সংগঠন (Organization)

বর্তমানে সংগঠনকে উৎপাদনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে প্রাচীনকালে সংগঠনকে তত গুরুত্ব দেওয়া হত না। কারণ তখন উৎপাদন কার্য ছিল অত্যন্ত সীমিত ও সহজ। কিন্তু শিল্প বিপ্লবের পরবর্তী সময়ে উৎপাদনের পরিসর একদিকে যেমন ব্যাপক হতে থাকে সেই সাথে জটিলতাও বাড়াতে থাকে। তাই উৎপাদন কার্যে সংগঠনের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। উৎপাদন কার্যে ব্যবহৃত অন্যান্য উপাদানকে একত্রিত করে উৎপাদন কাজ পরিচালনা করাকে সংগঠন বলে।

পরিশেষে বলা যায়, নানান দৃষ্টিকোণ হতে উৎপাদনের বিভিন্ন উপকরণ থাকলেও অর্থনীতির দৃষ্টিকোণ হতে উপরে উল্লেখিত চারটি উপাদান অর্থাৎ ভূমি, শ্রম, মূলধন এবং সংগঠন উৎপাদনের উপকরণ হিসেবে গণ্য হয়।

আরো পড়ুনঃ

উৎপাদন উপকরণের ধারণা

উৎপাদনশীলতার ধারণা | উৎপাদনশীলতার গুরুত্ব | উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির উপায়

উৎপাদনের ধারণা | উৎপাদনের গুরুত্ব | উৎপাদনের আওতা

খাদ্য শৃঙ্খলে লেডের অণুপ্রবেশ ও তার প্রভাব

কীভাবে পণ্যের স্থানগত উপযোগ সৃষ্টি হয়?

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url