উৎপাদনশীলতার ধারণা | উৎপাদনশীলতার গুরুত্ব | উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির উপায়

উৎপাদনশীলতার ধারণা (Productivity)

উৎপাদনশীলতা হচ্ছে সম্পদের ব্যবহার করে পণ্য বা সেবা উৎপাদনের পরিমাণ। অর্থাৎ কতটুকু ইনপুট বা কাঁচামাল ব্যবহার করে কি পরিমাণ আউটপুট বা পণ্য উৎপাদন করা যায় তার অনুপাত হচ্ছে উৎপাদনশীলতা। অন্যভাবে উৎপাদনশীলতা বলতে উৎপাদনের দক্ষতাকে বোঝায়। সমপরিমাণ উপকরণ ব্যবহার করে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারলে বা কম পরিমাণ উপকরণ ব্যবহার করে সমপরিমাণ উৎপাদন করতে পারলে উৎপাদনশীলতা বাড়বে।

উৎপাদনশীলতাকে নিম্নোক্ত সমীকরণের মাধ্যমে প্রকাশ করা যায় -


অর্থনীতিবিদ Samuelson বলেন, “উৎপাদনশীলতা হচ্ছে একটি শব্দ যা ইনপুটের প্রেক্ষিতে আউটপুটের অনুপাত বুঝায়।”

International Labor Organization (ILO) এর মতে, “ব্যাপক অর্থে, কোনো দল, সমাজ, বা দেশে প্রাপ্ত দ্রব্য এবং সেবার সাথে কার্যকর সম্পদের অনুপাত হলো উৎপাদনশীলতা।”

উপরোক্ত সংজ্ঞার আলোকে উৎপাদনশীলতা সম্পর্কে বলা যায় যে -

১. উৎপাদনশীলতা হলো উৎপাদন ও উপকরণের অনুপাত

২. উপকরণের তুলনায় উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধির হার

৩. শ্রমের দক্ষতা মূল্যায়ন এবং

৪. এটি মুনাফা বৃদ্ধি করে।

সুতরাং, পরিশেষে বলা যায় যে, নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ ব্যয় করে বা কাজে লাগিয়ে যে পরিমাণ ফলাফল অর্জিত হয় তার অনুপাতই হলো উৎপাদনশীলতা। আধুনিক উৎপাদন ব্যবস্থাপনায় উৎপাদন বৃদ্ধির চেয়েও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির প্রতি বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। কারণ উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি হলে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক আয় বৃদ্ধি পায়।

উৎপাদনশীলতার গুরুত্ব (Importance of Productivity)

উৎপাদনশীলতা হলো আউটপুট ও ইনপুটের অনুপাত। কী পরিমাণ উৎপাদন বা ফল পেতে কী পরিমাণ উপকরণ খরচ বা ব্যয় করতে হচ্ছে তার অনুপাতকে উৎপাদনশীলতা বলে। উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি একটা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা দক্ষতা ও ইতিবাচক অগ্রগতির প্রমাণ দেয়। নিম্নে এর গুরুত্ব সংক্ষেপে তুলে ধরা হলোঃ

১. মুনাফা বৃদ্ধি (Increase in Profit): উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির কারণে ঐ প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে এবং অপচয় রোধের মাধ্যমে খরচ কমে আসবে। ফলে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রতিষ্ঠানের মুনাফা বৃদ্ধি পাবে। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে মুনাফার পরিমাণ বৃদ্ধিই তার সফলতার পরিচায়ক।

২. ব্যবসায় সম্প্রসারণ (Expansion of Business): উৎপাদনশীলতা বাড়লে প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় ও মুনাফা বাড়ে। ফলে প্রতিষ্ঠান নতুন বিনিয়োগের সুযোগ পায়। ফলে ব্যবসা সম্প্রসারণে উৎপাদনশীলতা গুরুত্বপূর্ণ । ব্যবসায় সম্প্রসারণ প্রতিটা ব্যবসায়ীরই একটা অন্যতম লক্ষ্য।

৩. সম্পদের সদ্ব্যব্যবহার (Utilization of Resources): প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত মানুষ, যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল ইত্যাদিসহ উৎপাদনের সকল উপকরণের যথাযথ ব্যবহারের উপর উৎপাদনশীলতা নির্ভর করে। যতবেশী উপকরণের কার্যকর ব্যবহার করা যায় ততই উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়। ফলে উৎপাদনশীলতার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার করা সম্ভব হয়।

৪. চাহিদা পুরণ (Fulfillment of Demand): সম্পদের পরিমাণ সীমিত কিন্তু মানুষের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই স্বল্প পরিমাণ সম্পদ দিয়ে অধিক পরিমাণ দ্রব্য উৎপাদন করা প্রয়োজন। এ কারণে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা অপরিহার্য।

৫. প্রতিযোগিতায় সাফল্য অর্জন (Success in Competition): প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা এবং সাফল্য অর্জন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উৎপাদনশীলতার মাধ্যমে কম খরচে, কম সময়ে সর্বোচ্চ উৎপাদন করা সম্ভব হয় ফলে প্রতিযোগিতায় সাফল্য অর্জন করা অনেক সহজ হয়ে যায়।

৬. অর্থনৈতিক উন্নয়ন (Economic Development): একটি প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি শুধু ঐ প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেই নয় বরং সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রভাব ফেলে। ব্যবস্থাপনার দক্ষতা যখন বৃদ্ধি পায় তা দেশের সকল ক্ষেত্রেই ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। প্রতিটা উপকরণের কার্যকর ব্যবহার নিঃসন্দেহে জাতীয় উন্নয়নকে নিশ্চিত করে।

প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির চারটি উপায়

প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির চারটি উপায় হলোঃ

১) ইনপুটের পরিমাণ ঠিক রেখে আউটপুট বুদ্ধ

২) আউটপুট ঠিক রেখে ইনপুট কমানো

৩) আউটপুট বৃদ্ধি ও ইনপুট হ্রাস ও

৪) ইনপুট বৃদ্ধির তুলনায় আউটপুটের অধিক বৃদ্ধি।

আরো পড়ুনঃ

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url