ধাতব বন্ধন (Metallic Bonds)

ধাতব বন্ধন (Metallic Bonds)

একটি ধাতু অপর একটি অধাতুর মধ্যে আয়নিক বন্ধন এবং দুটি অধাতব পরমাণুর মধ্যে সমযোজী বন্ধন গঠিত হয়। কিন্তু দুটি ধাতব পরমাণু কাছাকাছি এলে তাদের মধ্যে যে বন্ধন গঠিত হয় সেটাকে ধাতব বন্ধন বলে।

অর্থাৎ এক খণ্ড ধাতুর মধ্যে পরমাণুসমূহ যে আকর্ষণের মাধ্যমে যুক্ত থাকে তাকেই ধাতব বন্ধন বলে।

চিত্রঃ ধাতব বন্ধন

ধাতব বন্ধন কীভাবে তৈরি হয়?

প্রত্যেক ধাতব পরমাণুর ইলেকট্রন বিন্যাসে সর্বশেষ শক্তিস্তরে সাধারণত 1 টি, 2 টি কিংবা 3 টি ইলেকট্রন থাকে এবং এদের আকার একই পর্যায়ের অধাতব পরমাণুর চেয়ে বড় হওয়ায় ধাতব পরমাণুর সর্বশেষ শক্তিস্তরের ইলেকট্রনের প্রতি নিউক্লিয়াসের আকর্ষণ অনেক কম হয়। ফলে ধাতুতে পরমাণুসমূহ তার সর্বশেষ শক্তিস্তরের এক বা একাধিক ইলেকট্রনকে ত্যাগ করে ধনাত্মক আয়নে পরিণত হয়। এই ধনাত্মক আয়নকে পারমাণবিক শাঁস (Atomic core) বলা হয়।

ধাতব স্ফটিকে পারমাণবিক শাঁসগুলো সুনির্দিষ্ট ত্রিমাত্রিকভাবে বিন্যস্ত থাকে। আর ধাতব পরমাণু কর্তৃক ত্যাগকৃত ইলেকট্রনগুলো উক্ত পারমাণবিক শাঁসের মধ্যবর্তী স্থানে মুক্তভাবে ঘোরাফেরা করে। এই ধরনের ইলেকট্রনকে সঞ্চরণশীল (Delocalized Electron) ইলেকট্রন বলে। এই ইলেকট্রনগুলো কোনো নির্দিষ্ট পরমাণুর অধীনে থাকে না। পুরো ধাতব খণ্ডের সবগুলো ধাতব আয়নের ইলেকট্রন হয়ে যায়।

বলা যেতে পারে ইলেকট্রনের সাগরে পারমাণবিক ধাতব আয়নগুলো স্ফটিকের আকারে সুবিন্যস্তভাবে সজ্জিত থাকে। ধাতব স্ফটিকে দুটো ধাতব আয়নের মধ্যবর্তী স্থানে যখন একটি সঞ্চরণশীল ইলেকট্রন অবস্থান করে তখন ইলেকট্রনের প্রতি উভয় ধাতব আয়নই স্থির বৈদ্যুতিক আকর্ষণে অকর্ষিত হয়। এ কারণে ধাতব আয়ন দুটি পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারে না। এটিই মূলত ধাতব বন্ধনের মূল কারণ। ধাতুর মধ্যে সঞ্চরণশীল এই ইলেকট্রনগুলোই তাপ এবং বিদ্যুৎ পরিবহনের জন্য দায়ী। অনুরূপে ধাতুর নমনীয়, ঘাতসহতা ধাতব ঔজ্জ্বল্য ইত্যাদি ধর্ম সঞ্চরণশীল এই ইলেকট্রনের কারণেই ঘটে থাকে।

ধাতুর বিদ্যুৎ পরিবাহিতা

সকল ধাতুই বিদ্যুৎ সুপরিবাহী। ধাতুর স্ফটিকে মুক্তভাবে বিচরণশীল ইলেকট্রনগুলো বিদ্যুৎ পরিবহনের কাজটি করে থাকে। একটি ধাতব খণ্ডের দুই প্রান্তের সাথে ব্যাটরির ধনাত্মক (+) ও ঋণাত্মক (-) প্রান্ত সংযুক্ত করলে ইলেকট্রনগুলো ঋণাত্মক প্রান্ত থেকে ধনাত্মক প্রান্তের দিকে প্রবাহিত হবে। অর্থাৎ ধনাত্মক প্রান্ত থেকে ঋণাত্মক প্রান্তের দিকে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হবে। সঞ্চরণশীল ইলেকট্রন না থাকলে ধাতুর মধ্যে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতো না।

চিত্রঃ ধাতুর বিদ্যুৎ পরিবহনের কৌশল

ধাতুর তাপ পরিবাহিতা

এক খণ্ড ধাতব পাতের এক প্রান্তকে আগুনের উপর রেখে উত্তপ্ত করলে দেখতে পাবে অপর প্রান্তটি বেশ তাড়াতাড়ি গরম হতে শুরু করেছে। এর অর্থ ধাতুগুলো তাপ পরিবাহীতাও প্রদর্শন করে। এর কারণও সঞ্চরণশীল ইলেকট্রন। তাপ প্রদানের সাথে সাথে সঞ্চরণশীল ইলেকট্রনগুলো শক্তি গ্রহণ করে এবং তাদের গতিবেগ বেড়ে যায় এবং ইলেকট্রনগুলো অধিক তাপমাত্রার প্রান্ত থেকে কম তাপমাত্রার প্রান্তের দিকে স্থানান্তরিত হয়। এর ফলে ধাতুতে এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে তাপের পরিবহন ঘটে।


এসএসসি || রসায়ন || SSC || Chemistry

অধ্যায় - ০২ : পদার্থের অবস্থা
অধ্যায় - ০৩ : পদার্থের গঠন
অধ্যায় - ০৪ : পর্যায় সারণি
অধ্যায় - ০৫ : রসায়নিক বন্ধন
অধ্যায় - ০৬ : মোলের ধারণা ও রাসায়নিক গণনা
অধ্যায় - ০৭ : রাসায়নিক বিক্রিয়া
অধ্যায় - ০৮ : রসায়ন ও শক্তি
অধ্যায় - ০৯ : এসিড-ক্ষারক সমতা
অধ্যায় - ১০ : খনিজ সম্পদ ধাতু-অধাতু
অধ্যায় - ১১ : খনিজ সম্পদ- জীবাশ্ম
অধ্যায় - ১২ : আমাদের জীবনে রসায়ন
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url