জীববৈচিত্র্য কাকে বলে? জীববৈচিত্র্যের প্রকারভেদ | জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব | জীববৈচিত্র্যের অবনতির কারণ

জীববৈচিত্র্য কাকে বলে?

ইংরেজি পরিভাষায় জীববৈচিত্র্যকে বায়োডাইভারসিটি বলা হয়। 1980 সালে ইংরেজি বায়োডাইভারসিটি শব্দটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করা হয়।

পৃথিবী পৃষ্ঠের জল ও স্থলভাগে বসবাসকারী সকল প্রকার জীবের মধ্যে বিরাজমান জীনগত, প্রজাতিগত ও বাস্তুতান্ত্রিক বিভিন্নতা ও সংখ্যা প্রাচুর্যতা রয়েছে এবং কালের ক্রমধারায় পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিজেদের বৈচিত্র্যময় অবস্থার পরিবর্তন ও বিকাশ ঘটানোকে বলা হয় জীববৈচিত্র্য।

জীববৈচিত্র্যের প্রকারভেদ

জীববৈচিত্র্যকে প্রধানত তিনভাগে ভাগ করা যায়। যথা -

১) জীনগত

২) প্রজাতিগত এবং 

৩) বাস্তুতান্ত্রিক।

জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব

পৃথিবীর জীবকূল এবং অজীব উপাদান পারস্পরিক আদান-প্রদানের মাধ্যমে জীব প্রবাহকে অক্ষুন্ন রাখে। সুতরাং জীবকূলের মধ্যে বৈচিত্র্যের আধিক্য অজীব উপাদানের সাথে আদান-প্রদানের মাত্রাকে বাড়িয়ে দেয়। ফলে জীবজগতের শক্তির প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। এতে মানুষসহ সকল জীবই বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পায়। এছাড়া মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বিভিন্ন প্রজাতির জীবকে ব্যবহার করে উপকৃত হয়। এভাবে বহুমুখী দিক থেকে জীবজগতের প্রতিটি জীবেরই রয়েছে স্বকীয় ভূমিকা। সুতরাং বলা যায় যে, জীববৈচিত্র্যের বাস্তুতান্ত্রিক এবং অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম।

জীব বৈচিত্র্যের অর্থনৈতিক গুরুত্ব

জীববৈচিত্র্যের অর্থনৈতিক গুরুত্ব বহুবিধ। যথা -

  • উদ্ভিদ প্রজাতি দিবালোকে পরিবেশ থেকে সংগৃহীত জল, কার্বন ডাইঅক্সাইড এবং খনিজ দ্বারা সালোকসংশ্লেষ পদ্ধতিতে খাদ্য উৎপাদন করে নিজের কোশে সংরক্ষণ করে। মানুষ ও বেশির ভাগ প্রাণী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই খাদ্যের ওপর নির্ভরশীল।
  • উদ্ভিদ প্রজাতি বা বনজ সম্পদ থেকে মানুষের দৈনন্দিন ব্যবহারের নানাবিধ পোশাক প্রস্তুত করা হয়। বর্তমানে আধুনিক ও সূক্ষ্ম মসৃণ, উন্নত গুণমানের জামাকাপড় এই উদ্ভিদ প্রজাতি থেকেই অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে তৈরি করা হচ্ছে।
  • জীববৈচিত্র্য থেকে বিভিন্ন জীবনদায়ী ওষুধ প্রস্তুত করা হয়। জটিল ক্যান্সার রোগের প্রতিষেধক এই জীববৈচিত্র্য থেকেই বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন। বর্তমানে বিজ্ঞানীরা 90 টি উদ্ভিদ প্রজাতি থেকে 120 রকমের অতিপ্রয়োজনীয় ওষুধ তৈরি করেছেন। এমনকি অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলি প্রায় 80 শতাংশ মানুষ ভেষজ ওষুদের জন্য প্রত্যক্ষভাবে গাছপালার ওপর নির্ভর করে। বর্তমানে উন্নত দেশগুলি তার ভৌগলিক সীমানার বাইরে বিভিন্ন চুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ থেকে বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশ থেকে বিভিন্ন বনজ সম্পদগুলি (উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি) 'Bio-piracy'- এর মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্বার্থে নিজেদের দেশে নিয়ে গিয়ে আধুনিক পদ্ধতির মাধ্যমে দুরারোগ্য ব্যাধির ওষুধ প্রস্তুত করছে, যার প্রকৃতমূল্য সাধারণ মানুষের হাতের নাগালের বাইরে। এর ফলে প্রকৃত উৎপাদনশীল দেশ এই মূল্যবান সম্পদ উৎপাদন করেও এর উপযোগিতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
  • জীববৈচিত্র্য থেকে বিভিন্ন জ্বালানি ও কাঠ উৎপাদিত হচ্ছে। শিল্পের বিভিন্ন কাঁচামাল এই জীববৈচিত্র্য থেকে সরবরাহ করা হয়। খেলাধুলার বিভিন্ন সাজসরঞ্জাম জীববৈচিত্র্য থেকে বিভিন্ন অত্যাধুনিক পদ্ধতির মাধ্যমে প্রস্তুত করা হয়।
  • পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে এই জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ স্থানগুলিকে সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বর্তমানে Eco-Tourism- এর জন্যও স্থানগুলি নির্বাচিত হয়েছে।

জীববৈচিত্র্যের বাস্তুতান্ত্রিক গুরুত্ব

জীববৈচিত্র্যের বহুমুখী বাস্তুতান্ত্রিক উপযোগিতা রয়েছে। এই উপযোগিতাগুলি নিচে আলোচনা করা হলোঃ

১) জীববৈচিত্র্য জলজ সম্পদ সংরক্ষণ ও জলদূষণ থেকে প্রতিরোধ করে।

২) বায়ুদূষণ থেকে মুক্ত করে ও দূষিত বায়ুকে পরিশোধন করে।

৩) আবহাওয়া ও জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করে ও জলবায়ুর অবাধ পরিবর্তনকে প্রতিরোধ করে।

৪) জলচক্রের অস্তিত্ব ও কার্যকারিতাকে বহুলাংশে পরিচালিত করে।

৫) মৃত্তিকা সৃষ্টি, সংরক্ষণ এবং মৃত্তিকা ক্ষয় রোধ করে।

৬) জৈব ভূ-রাসায়নিক চক্রকে সঠিকভাবে পরিচালিত করে।

৭) বাস্তুতান্ত্রিক স্থিতাবস্থাকে বজায় রাখে।

৮) জীববৈচিত্র্য মনুষ্যসৃষ্ট অধিক কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করে বায়ুমন্ডলকে বৃহৎ অর্থে পরিবেশকে পরিশোধিত করে।

জীববৈচিত্র্য প্রকৃতপক্ষে প্রকৃতি সৃষ্ট জাদুঘর, যার বাস্তুতান্ত্রিক ও পরিবেশগত সংরক্ষণের জন্য নৈতিক মূল্যবোধের প্রয়োজন রয়েছে।

জীববৈচিত্র্যের অবনতির কারণ

ক. প্রাকৃতিক কারণ : জীববৈচিত্র্য অবনতির প্রাকৃতিক কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, ভ‚মিকম্প, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা, দাবানল প্রভৃতি।

খ. মানব সৃষ্ট কারণ : মানুষের বিভিন্ন কর্মকান্ড এবং এসব কর্মকান্ডের প্রতিক্রিয়া জীববৈচিত্র্যের অবনতি ঘটায়। যেমন- দূষণ, এসিড বৃষ্টি, খনিজ সম্পদের অনুসন্ধান, জৈবিক সম্পদের অতিমাত্রায় ব্যবহার, হাইব্রিড প্রজাতি, জনসচেতনতার অভাব প্রভৃতি।

আরো পড়ুনঃ

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url