দ্বিপদ নামকরণ পদ্ধতি

একটি জীবের বৈজ্ঞানিক নাম দুটি অংশ বা পদ নিয়ে গঠিত হয়। প্রথম অংশটি তার গণের নাম এবং দ্বিতীয় অংশটি তার প্রজাতির নাম। যেমন: গোল আলুর বৈজ্ঞানিক নাম Solanum tuberosam। এখানে solanum গণ নাম এবং tuberosum প্রজাতির নাম বুঝায়, এরুপ দুটি পদ নিয়ে গঠিত নামকে দ্বিপদ নাম এবং নামকরণের প্রক্রিয়াকে দ্বিপদ নামকরণ (binomial nomenclature) পদ্ধতি বলে।

দ্বিপদ নামকরণ পদ্ধতির লক্ষ্য একটাই, তা হচ্ছে এই বৈচিত্র্যময় জীবজগতের প্রতিটি জীবকে আলাদা নামে সঠিকভাবে জানা। আন্তর্জাতিকভাবে কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়মনীতি মেনে জীবের বৈজ্ঞানিক নাম নির্ধারণ করা হয়। উদ্ভিদের নাম International Code of Botanical Nomenclature (ICBN) কর্তৃক এবং প্রাণীর নাম International Code of Zoological Nomenclature (ICZN) কর্তৃক স্বীকৃত নিয়মানুসারে হতে হবে। প্রকৃত পক্ষে এই code পুস্তকাকারে লিখিত একটি দলিল। নামকরণ ল্যাটিন শব্দে হওয়ায় কোনাে জীবের বৈজ্ঞানিক নাম সারা বিশ্বে একই নামে পরিচিত হয়।

1753 সালে সুইডিশ বিজ্ঞানী ক্যারােলাস লিনিয়াস Species plantarum বইটি রচনা করেন। এই বইটি উদ্ভিদবিজ্ঞানের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সূচনা করে, কারণ এর প্রকাশনার মাধ্যমে তিনি দ্বিপদ নামকরণ পদ্ধতির প্রবর্তন করেন এবং গণ ও প্রজাতির সংজ্ঞা দেন। তিনিই প্রথম ঐ গ্রন্থে জীবের শ্রেণি, বর্গ, গণ এবং প্রজাতি ধাপগুলাে ব্যবহার করেন। লিনিয়াসের এই দ্বিপদ নামকরণ পদ্ধতি নিঃসন্দেহে একটি চমৎকার উদ্ভাবন। 

ক্যারোলাস লিনিয়াস

এ পদ্ধতি অনুযায়ী প্রতিটি জীবের :

(a) নামকরণ ল্যাটিন ভাষায় কিংবা ল্যাটিন ভাষার মতাে করে উপস্থাপন করতে হবে। (তরুণ প্রাণিবিজ্ঞানী সাজিদ আলী হাওলাদার সম্প্রতি নতুন প্রজাতির এক ব্যাঙ আবিষ্কার করেছেন, যা কেবল ঢাকায় পাওয়া যায়। ব্যাঙটির বৈজ্ঞানিক নামকরণ হয়েছে Zakeruna dhaka। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা কাজী জাকের হােসেনের প্রতি সম্মান দেখিয়ে এই গণের নাম জাকেরানা রাখা হয়েছে।)

(b) বৈজ্ঞানিক নামের দুটি অংশ থাকবে, প্রথম অংশটি গণ নাম এবং দ্বিতীয় অংশটি প্রজাতি নাম যেমনঃ Labeo rohita। এটি রুই মাছের বৈজ্ঞানিক নাম, এখানে Labeo গণ এবং rohita প্রজাতিক পদ।

(c) জীবজগতের প্রতিটি বৈজ্ঞানিক নামকে অনন্য (unique) হতে হয়। কারণ, একই নাম দুটি পৃথক জীবের জন্য ব্যবহারের অনুমতি নেই।

(d) বৈজ্ঞানিক নামের প্রথম অংশের প্রথম অক্ষর বড় অক্ষর হবে, বাকি অক্ষরগুলাে ছােট অক্ষর হবে এবং দ্বিতীয় অংশটির নাম ছােট অক্ষর দিয়ে লিখতে হবে। যেমন- পিঁয়াজ Allium cepa,  সিংহ Panthera leo

(e) বৈজ্ঞানিক নাম মুদ্রণের সময় সর্বদা ইটালিক অক্ষরে লিখতে হবে। যেমন; ধান Oryza sativa, কাতল মাছ Catla catla

(f) হাতে লেখার সময় গণ ও প্রজাতিক নামের নিচে আলদা আলাদা দাগ দিতে হবে। যেমন: Oryza sativa, Catla catla

(g) যদি কয়েকজন বিজ্ঞানী একই জীবকে বিভিন্ন নামকরণ করেন, তবে অগ্রাধিকার আইন অনুসারে প্রথম বিজ্ঞানী কর্তৃক প্রদত্ত নামটি গৃহীত হবে।

(h) যিনি প্রথম কোনাে জীবের বিজ্ঞানসম্মত নাম দিবেন। তাঁর নাম প্রকাশের সালসহ উক্ত জীবের বৈজ্ঞানিক নামের শেষে সংক্ষেপে সংযোজন করতে হবে। যেমন: Homo sapiens L., 1758, Oryza sativa L.,1753 (এখানে L লিনিয়াসের নামের সংক্ষিপ্ত রূপ, তবে দৈনন্দিন গবেষণা ও পাঠে এটুকু অনেক সময় লেখা হয় না)।

কয়েকটি জীবের দ্বিপদ নাম

সাধারণ নাম : বৈজ্ঞানিক নাম


ধান : Oryza sativa 


পাট : Corchorus capsularis 


আম : Mangifera indica 


কাঠাল : Artocarpus heterophyllus 


শাপলা : Nymphaea nouchali 


জবা : Hibiscus rosa-sinensis 


কলেরা জীবাণু : Vibrio cholerae 


ম্যালেরিয়া জীবাণু : Plasmodium vivax 


আরশোলা : Periplaneta americana 


মৌমাছি : Apis indica 


ইলিশ : Tenualosa ilisha 


কুনাে ব্যাঙ : Duttaphrynus melanostictus (Bufo melanostictus) 


দোয়েল : Copsychus saularis 


রয়েল বেঙ্গল টাইগার : Panthera tigris 


মানুষ : Homo sapiens 


আরো পড়ুনঃ

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url