জীববিজ্ঞানের শাখাগুলো

জীবের যে দুটি ধরন আমরা চারপাশে তাকালেই দেখতে পাই, সেগুলাে হলাে উদ্ভিদ এবং প্রাণী। তাই বহুদিন পর্যন্ত জীববিজ্ঞান পাঠের সুবিধার জন্য একে দুটি শাখায় ভাগ করে নেওয়ার প্রচলন ছিল: উদ্ভিদবিজ্ঞান এবং প্রাণিবিজ্ঞান। এ রীতি এখনও কিছুটা চালু আছে। যদিও জীববিজ্ঞান আজ এতটাই | বিস্তৃতি লাভ করেছে যে শুধু দুটি শাখায় ভাগ করে এখন এর পাঠ আর চলবে না। এমন অনেক জীব আছে যা উদ্ভিদ বা প্রাণী কোনােটাই নয়। যেমন: ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ইত্যাদি। আবার কখনাে কখনাে প্রাণী, উদ্ভিদ, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, ভাইরাস প্রভৃতির কোনাে সাধারণ বৈশিষ্ট্যকে একসাথে বিশ্লেষণ করার দরকার হয়, তখন আর জীবের ধরনভিত্তিক শাখা লাগসই হয় না। তাই প্রয়োজনের তাগিদে জীববিজ্ঞান এখন বহুসংখ্যক শাখায় বিভক্ত হয়েছে। জ্ঞানের প্রায় প্রতিটি বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত শাখাগুলােকে ভৌত বা মৌলিক এবং ফলিত এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। জীববিজ্ঞানও তার ব্যতিক্রম নয়। ভৌত শাখা বলতে সেসব শাখা বােঝানাে হয়, যেখানে তার তাত্ত্বিক ভিত্তি অনুসন্ধান করাটা প্রয়ােগ সংক্রান্ত দিকের তুলনায় বেশি গুরুত্ব পায়। আর যেখানে প্রয়ােগটাই বড়, সেটা হচ্ছে ফলিত শাখা।

ভৌত জীববিজ্ঞান

ভৌত জীববিজ্ঞান শাখায় তত্ত্বীয় বিষয় নিয়ে আলােচনা করা হয়ে থাকে। এতে সাধারণত নিচে উল্লিখিত বিষয়গুলাে আলােচনা করা হয়।

(a) অঙ্গসংস্থান (Morphology): জীবের সার্বিক অঙ্গসংস্থানিক বা দৈহিক গঠন বর্ণনা এ শাখার আলােচ্য বিষয়। দেহের বাহ্যিক বর্ণনার বিষয়কে বহিঃঅঙ্গসংস্থান (External Morphology) এবং দেহের অভ্যন্তরীণ বর্ণনার বিষয়কে অন্তঃঅজ্ঞাসংস্থান (Internal Morphology) বলা হয়।

(b) শ্রেণিবিন্যাসবিদ্যা বা ট্যাক্সোনমি (Taxonomy): জীবের শ্রেণিবিন্যাস এবং তার রীতিনীতিগুলাে এ শাখার আলােচিত বিষয়।

(c) শারীরবিদ্যা (Physiology): জীবদেহের নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গের জৈব রাসায়নিক কার্যাদি, যেমন: শ্বসন, রেচন, সালােকসংশ্লেষণ ইত্যাদি বিষয় এ শাখায় আলােচিত হয়। এছাড়া জীবের যাবতীয় শারীরবৃত্তীয় কাজের বিবরণ এ শাখায় পাওয়া যায়।

(d) হিস্টোলজি (Histology): জীবদেহের টিস্যুসমূহের গঠন, বিন্যাস এবং কার্যাবলি এ শাখায় আলােচনা করা হয়।

(e) ভূণবিদ্যা (Embryology): জনন কোষের উৎপত্তি, নিষিক জাইগােট থেকে ভ্রুণের সৃষ্টি, গঠন, পরিস্ফুটন, বিকাশ প্রভৃতি নিয়ে আলােচনা এ শাখার প্রধান বিষয়।

(f) কোষবিদ্যা (Cytology): জীবদেহের কোষের গঠন, কার্যাবলি ও বিভাজন সম্পর্কে যাবতীয় আলোচনা এ শাখার বিষয়।

(g) বংশগতিবিদ্যা বা জেনেটিক্স (Genetics): জিন ও জীবের বংশগতিধারা সম্পর্কে এ শাখায় আলােচনা করা হয়।

(h) বিবর্তনবিদ্যা (Evolution): পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশ, জীবের বিবর্তন এবং ক্রমবিকাশের তথ্যসমূহের আলােচনা এ শাখার বিষয়।

(i) বাস্তুবিদ্যা (Ecology): এ শাখায় প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে জীবের আন্তঃসম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করা হয়।

(j) এন্ডােক্রাইনোলজি (Endocrinology): জীবদেহে হরমােনের (hormone) কার্যকারিতা বিষয়ক আলােচনা এ শাখার বিষয়।

(k) জীবভূগােল (Bio-geography): এ শাখায় পৃথিবীর বিভিন্ন ভৌগােলিক সীমারেখায় জীবের বিস্তৃতি এবং অভিযােজন সম্পর্কে আলােচনা করা হয়। জীবের ভৌগােলিক বিদ্যার সাথে ভূমণ্ডলের শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কিত বিদ্যা।

ফলিত জীববিজ্ঞান

এ শাখায় রয়েছ জীবন সংশ্লিষ্ট প্রায়ােগিক বিষয়গুলাে। কয়েকটি উল্লেখযােগ্য শাখার কথা নিচে উল্লেখ করা হলােঃ

(a) জীবাশবিজ্ঞান (Palaeontology): প্রাগৈতিহাসিক জীবের বিবরণ এবং জীবাশ্ম সম্পর্কিত বিজ্ঞান।

(b) জীবপরিসংখ্যানবিদ্যা (Biostatistics): জীবপরিসংখ্যান বিষয়ক বিজ্ঞান।

(c) পরজীবীবিদ্যা (Parasitology): পরজীবি, পরজীবী জীবের জীবনপ্রণালি এবং রােগ সম্পর্কিত বিজ্ঞান।

(d) মৎস্যবিজ্ঞান (Fisheries): মাছ, মাছ উৎপাদন, মৎস্য সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ সম্পর্কিত বিজ্ঞান।

(e) কীটতত্ত্ব (Entomology): কীটপতঙ্গের জীবন, উপকারিতা, অপকারিতা, ক্ষয়ক্ষতি, দমন ইত্যাদি সম্পর্কিত বিজ্ঞান।

(f) অণুজীববিজ্ঞান (Microbiology): ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, আণুবীক্ষণিক ছত্রাক এবং অন্যান্য অণুজীব সম্পর্কিত বিজ্ঞান।

(g) কৃষিবিজ্ঞান (Agriculture): কৃষিবিষয়ক বিজ্ঞান।

(h) চিকিৎসাবিজ্ঞান (Medical science): মানবদেহ, রােগ, চিকিৎসা ইত্যাদি সম্পর্কিত বিজ্ঞান।

(i) জিনপ্রযুক্তি (Genetic Engineering): জিনপ্রযুক্তি ও এর ব্যবহার সম্পর্কিত বিজ্ঞান।

(j) প্রাণরসায়ন (Biochemistry): জীবের প্রাণরাসায়নিক কার্যপ্রণালি, রােগ ইত্যাদি সম্পর্কিত বিজ্ঞান।

(k) পরিবেশবিজ্ঞান (Environmental science): পরিবেশ সম্পর্কিত বিজ্ঞান।

(l) সামুদ্রিক জীববিজ্ঞান (Oceanography): সামুদ্রিক জীব সম্পর্কিত বিজ্ঞান।

(m) বনবিজ্ঞান (Forestry): বন, বন সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং সংরক্ষণ সম্পর্কিত বিজ্ঞান।

(n) জীবপ্রযুক্তি (Biotechnology): মানব এবং পরিবেশের কল্যাণে জীব ব্যবহারের প্রযুক্তি সম্পর্কিত বিজ্ঞান।

(o) ফার্মেসি (Pharmacy): ঔষধশিল্প ও প্রযুক্তিবিষয়ক বিজ্ঞান।

(p) বন্য প্রাণিবিদ্যা (wildlife): বন্যপ্রাণী বিষয়ক বিজ্ঞান।

(q) বায়ােইনফরমেটিকস্ (Bioinformatics): কম্পিউটার প্রযুক্তি নির্ভর জীববিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য, যেমন ক্যান্সার বিশ্লেষণ বিষয়ক বিজ্ঞান।

আরো পড়ুনঃ

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url