জনমত কি? জনমত কাকে বলে? জনমত বলতে কি বুঝ? জনমতের সংজ্ঞা, জনমত গঠনে গণমাধ্যমের ভূমিকা

জনমত কি? জনমত কাকে বলে?


সাধারণভাবে জনসাধারণের মতমতকেই বলে জনমত। কিন্তু রাষ্ট্রবিজ্ঞানে জনমতকে বিশেষ অর্থে ব্যবহার করা হয়। সমাজের এক বা একাধিক বিষয়ে জনসাধারণের সুস্পষ্ট মতামতকে জনমত বলে। জনমত সম্পর্কে বিভিন্ন রাষ্ট্র দার্শনিক বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। অধ্যাপক লাওয়েল বলেন, " জনমতের জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠতাই যথেষ্ট নয় অথবা একমত হওয়ারও প্রয়োজন নেই। যুক্তিভিত্তিক জ্ঞান, পূর্ণ ও কল্যাণকামী এবং সর্বোপরি জাতীয় মঙ্গলের জন্য গঠিত মতামতকেই জনমত বলে।"

লর্ড ব্রাইস বলেন, "জনমত হচ্ছে সম্প্রদায়ের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জনগণের অভিতের সমষ্টি।"

জিনসবার্গের মতে, "জনমত হচ্ছে সমাজের বিভিন্ন মতের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ফল।"

মার্কিন মনস্তত্ত্ববিদ কিমবল ইয়ং বলেন, "কোন নির্দিষ্ট সময়ে জনগণ যে মতামত প্রকাশ করে তাই জনমত।"

কিন্তু জনমত বলতে জনসাধারণের সাধারণ মতামতকে বুঝায় না। কারণ প্রতিদিন জনগণ বিচ্ছিন্নভাবে হাজারো রকমের মতামত ব্যক্ত করে। এই সব মতামতের সবগুলো জনমত নয়। জনসাধারণের যে মতামত প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণে প্রভাব বিস্তার করে তাই জনমত হিসেবে বিবেচিত হয়।

জনমত গঠনে গণমাধ্যমের ভূমিকা

জনমত গঠনে গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম। গণমাধ্যম হল তথ্য এবং ধারণাগুলির একটি মাধ্যম যা জনগণের কাছে পৌঁছায়। এটি জনগণকে বিভিন্ন বিষয়ে অবহিত করে এবং তাদের চিন্তাভাবনা এবং বিশ্বাস গঠনে সাহায্য করে।

গণমাধ্যম জনমত গঠনে বিভিন্ন উপায়ে ভূমিকা পালন করে। 

প্রথমত, গণমাধ্যম তথ্য সরবরাহ করে। এটি জনগণকে বর্তমান ঘটনা, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ সম্পর্কে অবহিত করে। 

দ্বিতীয়ত, গণমাধ্যম মতামত প্রকাশের সুযোগ প্রদান করে। এটি জনগণকে তাদের চিন্তাভাবনা এবং বিশ্বাস প্রকাশ করার সুযোগ দেয়, যা অন্যদের চিন্তাভাবনাকে প্রভাবিত করতে পারে। 

তৃতীয়ত, গণমাধ্যম ধারণা তৈরি করে। এটি জনগণকে নতুন ধারণা এবং দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে অবহিত করে, যা তাদের চিন্তাভাবনা এবং বিশ্বাসকে পরিবর্তন করতে পারে।

গণমাধ্যম জনমত গঠনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে কারণ এটি জনগণের কাছে তথ্য এবং ধারণাগুলির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে। 

গণমাধ্যম কী তথ্য প্রকাশ করে এবং কীভাবে তা প্রকাশ করে তা জনগণের চিন্তাভাবনা এবং বিশ্বাসকে গঠন করতে পারে।

গণমাধ্যম জনমত গঠনে ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয় প্রভাব ফেলতে পারে। ইতিবাচকভাবে, গণমাধ্যম জনগণকে সঠিক তথ্য সরবরাহ করে এবং তাদের চিন্তাভাবনা এবং বিশ্বাস গঠনে সহায়তা করে। নেতিবাচকভাবে, গণমাধ্যম ভুল তথ্য বা বিভ্রান্তিকর ধারণা প্রচার করতে পারে, যা জনগণের চিন্তাভাবনা এবং বিশ্বাসকে প্রভাবিত করতে পারে।

গণমাধ্যমের জনমত গঠনে ভূমিকা থাকার কারণে এটিকে দায়িত্বশীলতার সাথে পালন করা উচিত। গণমাধ্যম অবশ্যই সঠিক এবং নিরপেক্ষ তথ্য সরবরাহ করতে এবং জনগণকে চিন্তাভাবনা এবং বিশ্বাস গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য এবং ধারণা সরবরাহ করতে হবে।

গণমাধ্যম জনমত গঠনে ভূমিকা পালনের কিছু নির্দিষ্ট উদাহরণ হল:

  • একটি সংবাদপত্র একটি নির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এই প্রতিবেদনটি জনগণের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট প্রার্থী বা দলের জন্য সমর্থন তৈরি করতে পারে।
  • একটি টেলিভিশন চ্যানেল একটি সামাজিক সমস্যা সম্পর্কে একটি তথ্যমূলক ডকুমেন্টারি প্রচার করে। এই ডকুমেন্টারিটি জনগণের মধ্যে এই সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারে এবং এটি সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য জনগণকে অনুপ্রাণিত করতে পারে।
  • একটি রেডিও অনুষ্ঠান একটি নতুন আইন বা নীতি সম্পর্কে একটি আলোচনা প্রচার করে। এই আলোচনাটি জনগণের মধ্যে এই আইন বা নীতি সম্পর্কে বিতর্ক তৈরি করতে পারে এবং এটি সম্পর্কে জনমত গঠনে সাহায্য করতে পারে।

গণমাধ্যম জনমত গঠনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি জনগণের কাছে তথ্য এবং ধারণাগুলির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে, যা জনগণের চিন্তাভাবনা এবং বিশ্বাসকে গঠন করতে পারে। গণমাধ্যম অবশ্যই সঠিক এবং নিরপেক্ষ তথ্য সরবরাহ করতে এবং জনগণকে চিন্তাভাবনা এবং বিশ্বাস গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য এবং ধারণা সরবরাহ করতে হবে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url