সংবিধান কাকে বলে?

সংবিধান বলতে কোন সংগঠন পরিচালনার নিয়ম-কানুন বা বিধি-ব্যবস্থাকে বুঝায়। কোন সমিতি যেমন কতগুলো নিয়ম-বিধি দ্বারা পরিচালিত হয়, তেমনি রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য কতগুলো নিয়ম-কানুন ও বিধি রয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনার এ সকল নিয়ম ও বিধি-ব্যবস্থার সমষ্টি হল সংবিধান।

সংবিধান কাকে বলে?

প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে সংবিধানের বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। যেমন− 

এরিষ্টটলের মতে, “রাষ্ট্র কর্তৃক পছন্দকৃত জীবন ব্যবস্থাই হল সংবিধান।” (The way of life the state has chosen for itself)

কে, সি হুইয়ারের ভাষায়, “যে উদ্দেশ্য এবং যে সমস্ত বিভাগ দ্বারা সরকারের শাসন ক্ষমতা পরিচালিত হয়, সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার নিয়মাবলীকে সংবিধান বলে।” 

সি.এফ.স্ট্রং বলেন, “সংবিধান হল ঐ সকল নিয়ম-বিধির সমষ্টি যা দ্বারা সরকারের ক্ষমতা, শাসিতের অধিকার এবং এ দুয়ের মধ্যে সম্পর্ক নির্ধারিত হয়।”

সংবিধানের সবচেয়ে আধুনিক সংজ্ঞা প্রদান করেছেন, অধ্যাপক হারমন ফাইনার। তার মতে “মৌলিক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সুষম সম্পর্কের ব্যবস্থাই সংবিধান।” 

ফাইনার আরও বলেন, “ক্ষমতা সম্পর্কের আত্মচরিত হল সংবিধান।”

সংবিধান কাকে বলে?

সংবিধান হলো রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলিক দলিল।

শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে সমাজে জীবন যাপন করতে হলে দৈনন্দিন জীবনে যেমন কতকগুলো বিধি-নিষেধ ও নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয়, তেমনি রাষ্ট্রীয় কার্যকলাপ ও শাসন ব্যবস্থাকে সুসংহত ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য কতিপয় বিধি-নিষেধ ও আইন-কানুন অনুসরণ করতে হয়। এই বিধি-নিষেধগুলো না থাকলে রাষ্ট্রে অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। তাই এসব বিধিনিষেধ ও আইন-কানুন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য অপরিহার্য। আর এটাই হচ্ছে রাষ্ট্রের সংবিধান।

সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা পরিচালিত হয়। আইন, শাসন ও বিচার বিভাগ কিভাবে গঠিত হবে, এদের গঠন ও ক্ষমতা কী হবে, জনগণ রাষ্ট্র প্রদত্ত কী কী অধিকার ভোগ করবে এবং জনগণ ও সরকারের সম্পর্ক কেমন হবে এসব বিষয় সংবিধানে উল্লেখ থাকে। 

অর্থাৎ যেসব নিয়মের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালিত হয়, তাকে সংবিধান বলে।

আরো জানুনঃ সংবিধানলিখিত সংবিধানঅলিখিত সংবিধানসুপরিবর্তনীয় সংবিধানদুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান

সচরাচর জিজ্ঞাস্য

১। বাংলাদেশের সংবিধান কবে ও কোথায় গৃহীত হয়?

উত্তর: বাংলাদেশের সংবিধান ১৯৭২ সালের ৪ঠা নভেম্বর গৃহীত হয়। এটি ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে গৃহীত হয়।

২। বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতিগুলো কী কী?

উত্তর: বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতিগুলো হলো:

  • ধর্মনিরপেক্ষতা
  • গণতন্ত্র
  • সমাজতন্ত্র
  • জাতীয়তাবাদ
  • মানবতাবাদ

৩। বাংলাদেশের সংবিধানের রাষ্ট্রধর্ম কী?

উত্তর: বাংলাদেশের সংবিধানের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। তবে, সকল ধর্ম ও ধর্মাবলম্বীদের সমান অধিকার প্রদান করা হয়েছে।

৪। বাংলাদেশের সংবিধানের সর্বোচ্চ আইন কোনটি?

উত্তর: বাংলাদেশের সংবিধানই সর্বোচ্চ আইন। সংবিধানের বিধানাবলীর পরিপন্থী কোন আইন বা বিধান প্রণয়ন করা বা কার্যকর করা যায় না।

৫। বাংলাদেশের সংবিধানে কতটি অনুচ্ছেদ রয়েছে?

উত্তর: বাংলাদেশের সংবিধানে ১৬০টি অনুচ্ছেদ রয়েছে।

৬। বাংলাদেশের সংবিধানের কোন অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতির পদবী নির্ধারিত হয়েছে?

উত্তর: বাংলাদেশের সংবিধানের ৫৮ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতির পদবী নির্ধারিত হয়েছে। এ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির পদবী হবে ‘সরকারপ্রধান’।”

৭। বাংলাদেশের সংবিধানের কোন অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্যদের সংখ্যা নির্ধারিত হয়েছে?

উত্তর: বাংলাদেশের সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্যদের সংখ্যা নির্ধারিত হয়েছে। এ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “সংসদে ৩৫০ জন সংসদ সদস্য থাকবে।”

৮। বাংলাদেশের সংবিধানের কোন অনুচ্ছেদে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে?

উত্তর: বাংলাদেশের সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। এ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “বিচার বিভাগ রাষ্ট্রের অন্য সকল শাখা থেকে পৃথক থাকবে এবং তা সার্বভৌমত্বের ধারক ও রক্ষক হিসেবে আচরণ করবে।”

৯। বাংলাদেশের সংবিধানের কোন অনুচ্ছেদে বাংলাদেশের নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের কথা বলা হয়েছে?

উত্তর: বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৫ থেকে ৪৭ অনুচ্ছেদে বাংলাদেশের নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের কথা বলা হয়েছে। এসব অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সকল নাগরিকের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে।

১০। বাংলাদেশের সংবিধানের কোন অনুচ্ছেদে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার কথা বলা হয়েছে?

উত্তর: বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫৩ অনুচ্ছেদে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার কথা বলা হয়েছে। এ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা হবে সবুজ রঙের পটভূমিতে লাল বৃত্ত, যার মাঝে সাদা চাঁদ ও তারা।”

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url