মিযান কাকে বলে?

মিযান শব্দটি আরবি। এর অর্থ মাপযন্ত্র, পরিমাপক বা দাঁড়িপাল্লা। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায়, হাশরের দিন আল্লাহ বান্দার পাপপুণ্যের হিসাব নেওয়ার জন্য যে যন্ত্র বা মাপকাঠি ব্যবহার করবেন তাকে মিযান বলে। মিযান সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, "সেদিন (কিয়ামতের দিন) সত্য সত্যই আমল পরিমাপ করা হবে। যাদের নেক আমলের ওজন ভারী হবে তারা সফলকাম হবে।"

মিযানের কথা কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন,

"সেদিন প্রত্যেক ব্যক্তি তার আমলের হিসাব নিয়ে আসবে।" (সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: 40)

"সেদিন প্রত্যেক ব্যক্তির আমল তার সামনে পেশ করা হবে।" (সূরা আল-ইনসান, আয়াত: 19)

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

"কিয়ামতের দিন, আল্লাহ তাআলা একটি মিযান স্থাপন করবেন, যার একটি দিক হবে দয়া, আর অন্য দিক হবে কঠিনতা। যে ব্যক্তির দয়া কঠিনতার চেয়ে বেশি হবে, সে জান্নাতে যাবে। আর যে ব্যক্তির কঠিনতা দয়ার চেয়ে বেশি হবে, সে জাহান্নামে যাবে।" (বুখারি)

মিযানের আকৃতি ও বর্ণ সম্পর্কে কোনো নির্দিষ্ট বর্ণনা নেই। তবে, হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে, এটি একটি বিরাট দাঁড়িপাল্লা হবে, যার ওজন হবে পাহাড়ের চেয়েও বেশি।

মিযানের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা মানুষের আমল ও পাপের হিসাব-নিকাশ ন্যায়সঙ্গতভাবে করবেন। আমল ও পাপের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে মানুষকে জান্নাত বা জাহান্নামে পাঠানো হবে।

মিযান সম্পর্কে সাধারণ জিজ্ঞাসা

১. মিযানের মাধ্যমে কীভাবে আমল ও পাপের হিসাব-নিকাশ করা হবে?

মিযানের মাধ্যমে আমল ও পাপের হিসাব-নিকাশ নিম্নরূপ করা হবে:

  • ভালো আমলগুলোকে একটি পাল্লায় রাখা হবে।
  • মন্দ আমলগুলোকে অন্য পাল্লায় রাখা হবে।
  • যে পাল্লায় ভালো আমলের পরিমাণ বেশি হবে, সে ব্যক্তি জান্নাতে যাবে।
  • যে পাল্লায় মন্দ আমলের পরিমাণ বেশি হবে, সে ব্যক্তি জাহান্নামে যাবে।

২. মিযানের মাধ্যমে ন্যায় বিচার করা হবে কি?

হ্যাঁ, মিযানের মাধ্যমে ন্যায় বিচার করা হবে। আল্লাহ তাআলা অত্যন্ত ন্যায়পরায়ণ। তিনি কারো সাথে অন্যায় করবেন না। তাই, মিযানের মাধ্যমে প্রত্যেকের আমল ও পাপের হিসাব-নিকাশ ন্যায়সঙ্গতভাবে করা হবে।

৩. মিযানের মাধ্যমে কী কী আমল ও পাপের হিসাব-নিকাশ করা হবে?

মিযানের মাধ্যমে সকল প্রকার আমল ও পাপের হিসাব-নিকাশ করা হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

  • ইবাদত, যেমন নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত ইত্যাদি।
  • সৎকর্ম, যেমন ভালোবাসা, সহানুভূতি, সাহায্য-সহযোগিতা ইত্যাদি।
  • মন্দ কাজ, যেমন মিথ্যা বলা, চুরি করা, হিংসা করা ইত্যাদি।

৪. মিযানের মাধ্যমে পাপ কমানো যায় কি?

হ্যাঁ, মিযানের মাধ্যমে পাপ কমানো যায়। এর জন্য তওবা ও ইস্তেগফার করা জরুরি। তওবা হলো আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া। ইস্তেগফার হলো আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।

৫. মিযানের মাধ্যমে জান্নাত বা জাহান্নামের ভাগ্য নির্ধারিত হবে কি?

হ্যাঁ, মিযানের মাধ্যমে জান্নাত বা জাহান্নামের ভাগ্য নির্ধারিত হবে। আমল ও পাপের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে মানুষকে জান্নাত বা জাহান্নামে পাঠানো হবে।

৬. মিযানের মাধ্যমে আল্লাহর ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে কি?

হ্যাঁ, মিযানের মাধ্যমে আল্লাহর ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে। আল্লাহ তাআলা অত্যন্ত ন্যায়পরায়ণ। তিনি কারো সাথে অন্যায় করবেন না। তাই, মিযানের মাধ্যমে প্রত্যেকের আমল ও পাপের হিসাব-নিকাশ ন্যায়সঙ্গতভাবে করা হবে।

৭. মিযানের মাধ্যমে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া যায় কি?

হ্যাঁ, মিযানের মাধ্যমে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এর জন্য বেশি বেশি নেক আমল করা এবং পাপ থেকে বিরত থাকা জরুরি।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url