এককেন্দ্রিক সরকার কাকে বলে? বৈশিষ্ট্য, সুবিধা ও অসুবিধা

এককেন্দ্রিক সরকার কি?

এককেন্দ্রিক সরকার হলো এমন একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা যেখানে কেন্দ্রীয় সরকার সকল ক্ষমতার অধিকারী। এই ব্যবস্থায়, স্থানীয় সরকার বা প্রশাসনিক বিভাগগুলি কেবলমাত্র কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক প্রদত্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী উইলোবী যথার্থই বলেছেন, "এককেন্দ্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে সরকারের সংগঠন সমস্যা অত্যন্ত সহজ হয়ে পড়ে।"

এককেন্দ্রিক সরকারের বৈশিষ্ট্য

  • ক্ষমতার কেন্দ্রিকরণ এককেন্দ্রিক সরকারের প্রথম ও প্রধান বৈশিষ্ট্য। এ ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতা কেন্দ্রের উপর ন্যস্ত থাকে।
  • কেন্দ্রের মাধ্যমে ক্ষমতার বন্টন এককেন্দ্রিক সরকারের বৈশিষ্ট্য। এ ব্যবস্থায় আঞ্চলিক বা স্থানীয় সরকার থাকতে পারে। কিন্তু তারা ক্ষমতা লাভ করে কেন্দ্রের কাছ থেকে। কেন্দ্র তার ইচ্ছামত এ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে বা কমাতে পারে।
  • আঞ্চলিক বা স্থানীয় সরকারের নিজস্ব কোন ক্ষমতা থাকে না। সাংবিধানিক ভাবে এরা কোন ক্ষমতা উপভোগ করে না। সরকারের প্রতিনিধি হিসাবে ক্ষমতা ব্যবহার করে।
  • এককেন্দ্রিক সরকারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য এর ঐক্য। যেহেতু এ ধরনের সরকারের ক্ষমতার বিভাজন নেই, তাই জটিলতাও কম। শাসন ব্যবস্থায় সাংগঠনিক সারল্য বিদ্যমান এবং নীতি প্রণয়নের সমস্যা কম।

এককেন্দ্রিক সরকারের সুবিধা

  • একটি মাত্র কেন্দ্রথেকে শাসন ক্ষমতা প্রয়োগ ও পরিচালনা হয় বলে যে কোন সমস্যা মোকাবেলায় এ ধরনের সরকার নমনীয়ভাবে সমাধানে আসতে পারে। প্রয়োজনে অতি বিপদেও সমঝোতার মাধ্যমে সমস্যা নিরসন করতে পারে।
  • এককেন্দ্রিক সরকার কম ব্যয়বহুল। কারণ এ ধরণের ব্যবস্থায় নীতি প্রণয়ন, নীতি প্রয়োগ ও নীতি পর্যবেক্ষণে কোন সমস্যা হয় না। সরকার একটি মাত্র কেন্দ্রথেকে সবধরনের কাজ পরিচালনা করতে পারে।
  • এককেন্দ্রিক সরকার সহজে কার্যকর হতে পারে। কারণ এ ধরনের ব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা একটি কেন্দ্রে ন্যস্তথাকে। তাই যে কোন সমস্যার সমাধান দ্রুত করা যায়।
  • এককেন্দ্রিক সরকারের অন্যতম গুণ হল এর সাংগঠনিক সরলতা। এ সরকার খুব সহজেই সংগঠিত হতে পারে। প্রয়োজন শুধুএককেন্দ্রিক সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্তের ফলেই সরকার গঠনের জটিল সমস্যাটি সহজ হয়ে ওঠে।
  • এককেন্দ্রিক সরকার খুব দ্রুত যে কোন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিপদ ও সংকটের মোকাবিলা করতে পারে।
  • এককেন্দ্রিক সরকার বিশেষত ছোট রাষ্ট্রের জন্য বেশী উপযোগী। এছাড়াও যে সব রাষ্ট্রেভৌগোলিক, জাতীয়, সাংস্কৃতিক ঐক্য আছে সে সব রাষ্ট্রের এ ধরনের সরকার ব্যবস্থা উপযোগী।
  • শাসনতান্ত্রিক যে কোন সংস্কার সাধনের জন্য এককেন্দ্রিক সরকার অত্যন্ত উপযোগী। কারণ দ্রুত কোন সংস্কারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও প্রয়োগের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ও জনগণের উন্নয়ন এ ধরনের সরকার ব্যবস্থায় সহজসাধ্য। 

এককেন্দ্রিক সরকারের অসুবিধা

অনেকগুলো সুবিধার পাশাপাশি এককেন্দ্রিক সরকারের কতকগুলো অসুবিধাও আছে, যে অসুবিধাগুলোর কারণে এ ধরনের সরকার ব্যবস্থার প্রয়োগযোগ্যতা কিছুটা হলেও সীমিত হয়েছে। 

  • এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা স্বৈরতন্ত্রের ক্ষেত্রে প্রস্তুত করে। কারণ এখানে ক্ষমতা কেন্দ্রের হাতে কেন্দ্রীভূত থাকে বলে শাসক সহজে স্বৈরশাসকে পরিণত হতে পারেন।
  • এ ধরনের সরকার ব্যবস্থায় আঞ্চলিক বা প্রাদেশিক সরকারের হাতে ক্ষমতা সাংবিধানিক ভাবে অর্পিত হয় না ফলে আঞ্চলিক বা স্থানীয় সমস্যার অনেক সময়ই সমাধান করা সম্ভব হয় না। স্থানীয় সমস্যা উপেক্ষিত থাকে।
  • এককেন্দ্রিক সরকার ব্যবস্থা বড় বড় রাষ্ট্রের জন্য উপযোগী নয়। ছোট ভুখন্ড, ক্ষুদ্রজনগোষ্ঠী এককেন্দ্রিক সরকার ব্যবস্থাকে সাফল্য দিতে পারে। বৃহৎ রাষ্ট্র বা বৃহৎ জনগোষ্ঠীতে এর প্রয়োগ হলে শাসনকার্য দূরূহ হয়ে পড়ে।
  • এককেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থায় শাসন পরিচালনার সম্পূর্ণ দায়িত্ব থাকে কেন্দ্রের হাতে। ফলে কেন্দ্রের ওপর নির্ভরতা ও কাজের চাপ বৃদ্ধি পায়। তাই কোন কোন সময় কেন্দ্রসুষ্ঠুভাবে কাজ সম্পাদনে সক্ষম হয় না।
  • এককেন্দ্রিক সরকার ব্যবস্থায় আমলাতান্ত্রিক জটিলতা খুব বেশী দেখা যায়। যেহেতু শাসনক্ষমতা কেন্দ্রীভূত থাকে, তাই এ ধরনের ব্যবস্থায় আমলাদের ক্ষমতা ও প্রভাব খুব বৃদ্ধি পেতে পারে।

দ্রুত উন্নয়ন ও কর্মপন্থা বাস্তবায়নের জন্য এককেন্দ্রিক সরকার অত্যন্ত উপযোগী। কারণ এক্ষেত্রে কেন্দ্রক্ষমতা লাভ করে সংবিধানের মাধ্যমে আর স্থানীয় সরকার ক্ষমতা লাভ করে কেন্দ্রের কাছ থেকে। ফলে সিদ্ধান্তবাস্তবায়নে কেন্দ্রকে কোন বাঁধার সম্মুখীন হতে হয় না। সরকার গঠন করাও খুবই সহজসাধ্য।

আরো পড়ুনঃ

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url