শৈত্যপ্রবাহ কাকে বলে? কারণ, বিভিন্ন ক্ষয়-ক্ষতি ও ক্ষতি রক্ষার উপায়

শৈত্যপ্রবাহ কি? শৈত্যপ্রবাহের কারণ ও ক্ষয়-ক্ষতি এবং উক্ত ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে করণীয় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে।

শৈত্যপ্রবাহ কাকে বলে?

শৈত্যপ্রবাহ হলো এমন একটি আবহাওয়ার অবস্থা যেখানে কোনো অঞ্চলের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে অনেক কমে যায়। সাধারণত, কোনও অঞ্চলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা যদি ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যায় এবং স্বাভাবিকের থেকে তার পার্থক্য ন্যূনতম ৫ ডিগ্রি হয়, তাহলে সেই আবহাওয়ার পরিস্থিতিকে শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।

শৈত্যপ্রবাহের কারণ

শৈত্যপ্রবাহের কারণগুলি নিম্নরূপ:

  • আঞ্চলিক বায়ুমণ্ডলীয় চাপের পার্থক্য: উচ্চচাপ বলয়ের প্রসারণ বা নিম্নচাপ বলয়ের সংকোচনের কারণে শৈত্যপ্রবাহ সৃষ্টি হতে পারে। উচ্চচাপ বলয়ের প্রসারণের ফলে বায়ু উষ্ণ অঞ্চল থেকে শীতল অঞ্চলে প্রবাহিত হয়। এতে শীতল অঞ্চলের তাপমাত্রা আরও কমে যায়। নিম্নচাপ বলয়ের সংকোচনের ফলে বায়ু শীতল অঞ্চল থেকে উষ্ণ অঞ্চলে প্রবাহিত হয়। এতে উষ্ণ অঞ্চলের তাপমাত্রা কমে যায়।
  • অ্যান্টিসাইক্লোন ও সাইক্লোন: অ্যান্টিসাইক্লোন হল উচ্চচাপ বলয়ের কেন্দ্র। সাইক্লোন হল নিম্নচাপ বলয়ের কেন্দ্র। অ্যান্টিসাইক্লোনের কেন্দ্রে বায়ু নিচের দিকে নেমে আসে। এতে বায়ুর উষ্ণতা কমে যায়। সাইক্লোনের কেন্দ্রে বায়ু উপরের দিকে উঠে যায়। এতে বায়ুর তাপমাত্রা কমে যায়।
  • শীতল বায়ুর প্রবাহ: শীতল বায়ু প্রবাহের কারণে শৈত্যপ্রবাহ সৃষ্টি হতে পারে। শীতকালে উত্তর গোলার্ধের মেরু অঞ্চলের শীতল বায়ু দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়। এতে দক্ষিণ গোলার্ধের তাপমাত্রা কমে যায়।
  • মৌসুমী বায়ুর প্রবাহ: মৌসুমী বায়ুর প্রবাহের কারণে শৈত্যপ্রবাহ সৃষ্টি হতে পারে। গ্রীষ্মকালে মৌসুমী বায়ু দক্ষিণ থেকে উত্তরে প্রবাহিত হয়। এতে উত্তর গোলার্ধের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। শীতকালে মৌসুমী বায়ু উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়। এতে দক্ষিণ গোলার্ধের তাপমাত্রা কমে যায়।
  • এল নিনো ও লা নিনা: এল নিনো ও লা নিনা হল প্যাসিফিক মহাসাগরের জলবায়ুগত ঘটনা। এল নিনো ঘটনার সময় প্যাসিফিক মহাসাগরের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে। এতে বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। লা নিনা ঘটনার সময় প্যাসিফিক মহাসাগরের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকে। এতে বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা হ্রাস পায়।
  • জলবায়ু পরিবর্তন: জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শৈত্যপ্রবাহের তীব্রতা ও প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বাংলাদেশে শৈত্যপ্রবাহের প্রধান কারণ হল উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে আগত শীতল বায়ু প্রবাহ। এই বায়ুপ্রবাহের কারণে বাংলাদেশে শীতকালে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নেমে যায়।

শৈত্যপ্রবাহের কারণে বিভিন্ন ক্ষয়-ক্ষতি

শৈত্যপ্রবাহের কারণে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি হতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে:

  • মানব স্বাস্থ্যের ক্ষতি: শৈত্যপ্রবাহের কারণে মানুষের শরীরের তাপমাত্রা কমে যায়। এটি হাইপোথার্মিয়ার কারণ হতে পারে, যা প্রাণঘাতী হতে পারে। শৈত্যপ্রবাহের কারণে শ্বাসযন্ত্রের রোগ, সর্দি-কাশি, জ্বর, মাথাব্যথা ইত্যাদি রোগও হতে পারে।
  • ফসলের ক্ষতি: শৈত্যপ্রবাহের কারণে ফসলের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। ফলে ফসলের ফলন কমে যায়। শৈত্যপ্রবাহের কারণে ফসল জমে যাওয়া, পাতা ঝরে যাওয়া, ফুল ও ফল ঝরে যাওয়া ইত্যাদি ক্ষতি হতে পারে।
  • জলের সম্পদের ক্ষতি: শৈত্যপ্রবাহের কারণে নদী, হ্রদ, পুকুর ইত্যাদির পানি জমে যায়। এতে পানি সরবরাহ ব্যাহত হয়।
  • পরিবহন ব্যবস্থার ক্ষতি: শৈত্যপ্রবাহের কারণে রাস্তাঘাট বরফে ঢাকা পড়ে যায়। এতে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয়।
  • বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষতি: শৈত্যপ্রবাহের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলিতে সমস্যা হতে পারে। এতে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হয়।
  • অন্যান্য ক্ষতি: শৈত্যপ্রবাহের কারণে ঘরবাড়ি, স্থাপনা ইত্যাদির ক্ষতি হতে পারে। এছাড়াও, শৈত্যপ্রবাহের কারণে পশুপাখির মৃত্যুও হতে পারে।

শৈত্যপ্রবাহের ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা

শৈত্যপ্রবাহের ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে নিম্নলিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে:

  • উষ্ণ পোশাক পরুন।
  • গরম পানীয় পান করুন।
  • বাইরে বের হওয়ার সময় সতর্কতা অবলম্বন করুন।
  • ফসলের যত্ন নিন।
  • জলের সম্পদের সঠিক ব্যবহার করুন।
  • পরিবহন ব্যবস্থার বিষয়ে সচেতন থাকুন।
  • বিদ্যুৎ সরবরাহের বিষয়ে সচেতন থাকুন।
  • ঘরবাড়ি, স্থাপনা ইত্যাদির যত্ন নিন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url