মধ্য দ্রাঘিমা রেখা কাকে বলে? মধ্য দ্রাঘিমা রেখার গুরুত্ব

দ্রাঘিমা রেখা কাকে বলে?

দ্রাঘিমা রেখা হল পৃথিবীর উপর দিয়ে কল্পিত কতকগুলি নির্দিষ্টভাবে বিন্যস্ত মহাবৃত্তের অর্ধেক। এদের বিস্তার উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত অর্থাৎ এরা উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত। একটি দ্রাঘিমার উপরিস্থিত সমস্ত বিন্দুর দ্রাঘিমাংশ সমান হয়।

দ্রাঘিমা রেখাগুলির দৈর্ঘ্য পরস্পর সমান, কারণ এদের প্রতিটিই পৃথিবীর উপরিস্থিত এক একটি মহাবৃত্তের অর্ধেক। এদের দৈর্ঘ্য ২০,০০৩.৯৩ কিমি (১২,৪২৯.৯ মাইল)।

দ্রাঘিমা রেখাগুলিকে ডিগ্রি, মিনিট ও সেকেন্ডে বিভক্ত করা হয়। একটি দ্রাঘিমার ডিগ্রি সংখ্যা হলো এটি মূল মধ্যরেখা থেকে পূর্ব বা পশ্চিমে কত ডিগ্রি দূরে অবস্থিত।

মধ্য দ্রাঘিমা রেখা কি?

পৃথিবীর উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত বিস্তৃত, বিষুবরেখাকে লম্বভাবে ছেদ করে যে দ্রাঘিমারেখাটি পৃথিবীকে দুটি সমান ভাগে বিভক্ত করে, তাকে মধ্য দ্রাঘিমা রেখা বলে। এটি ০° দ্রাঘিমাংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।

মধ্য দ্রাঘিমা রেখার দুপাশে ১৮০° দ্রাঘিমাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকাকে পূর্বাঞ্চল বলা হয় এবং এর বিপরীত দিকের এলাকাকে পশ্চিমাঞ্চল বলা হয়।

মধ্য দ্রাঘিমা রেখার গুরুত্ব

মধ্য দ্রাঘিমা রেখার গুরুত্ব নিম্নরূপ:

১. ভৌগোলিক স্থানাঙ্ক: মধ্য দ্রাঘিমা রেখা হলো পৃথিবীর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক স্থানাঙ্ক। এটি পৃথিবীকে দুটি সমান ভাগে বিভক্ত করে। মধ্য দ্রাঘিমা রেখার পূর্ব দিকের অংশকে পূর্বাঞ্চল এবং পশ্চিম দিকের অংশকে পশ্চিমাঞ্চল বলা হয়।

২. ভূপ্রকৃতি: মধ্য দ্রাঘিমা রেখার বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন ধরনের ভূপ্রকৃতি দেখা যায়। যেমন, ইউরোপের মধ্য দ্রাঘিমা রেখার অংশে মালভূমি, পর্বতমালা এবং সমভূমি দেখা যায়। আফ্রিকার মধ্য দ্রাঘিমা রেখার অংশে মরুভূমি, বনভূমি এবং মালভূমি দেখা যায়।

৩. জলবায়ু: মধ্য দ্রাঘিমা রেখার বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন ধরনের জলবায়ু দেখা যায়। যেমন, ইউরোপের মধ্য দ্রাঘিমা রেখার অংশে নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু, আফ্রিকার মধ্য দ্রাঘিমা রেখার অংশে শুষ্ক জলবায়ু এবং গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ু দেখা যায়।

৪. দ্বিতীয় মেরু: মধ্য দ্রাঘিমা রেখাকে দ্বিতীয় মেরুরূপে বিবেচনা করা হয়। এটিকে পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দুতে আঁকা একটি কল্পিত রেখার সাথে তুলনা করা হয়।

৫. আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা: মধ্য দ্রাঘিমা রেখার বিপরীত দিকে অবস্থিত আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা। এই রেখার দুপাশে একই দিন না হয়ে দুটি ভিন্ন দিন থাকে।

৬. সময় নির্ধারণ: মধ্য দ্রাঘিমা রেখাকে মূল মধ্যরেখা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটিকে কেন্দ্র করে সময় নির্ধারণ করা হয়।

৭. নাবিকদের পথনির্দেশনা: নাবিকরা মধ্য দ্রাঘিমা রেখাকে পথনির্দেশ হিসেবে ব্যবহার করে থাকে।

৮. ভূমি জরিপ: মধ্য দ্রাঘিমা রেখাকে ভূমি জরিপে একটি গুরুত্বপূর্ণ রেখা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

৯. যোগাযোগ: মধ্য দ্রাঘিমা রেখা যোগাযোগ ব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

১০. জ্যোতির্বিজ্ঞান: জ্যোতির্বিজ্ঞানে মধ্য দ্রাঘিমা রেখা একটি গুরুত্বপূর্ণ রেখা হিসেবে বিবেচিত হয়।

প্রমাণ দ্রাঘিমা রেখা কাকে বলে?

প্রমাণ দ্রাঘিমা রেখার ধারণা হলো কোন দেশ বা অঞ্চলের অসংখ্য দ্রাঘিমারেখার মধ্যে প্রায় মাঝখানে অবস্থিত একটি দ্রাঘিমারেখাকে প্রমাণ দ্রাঘিমারেখা হিসেবে বিবেচনা করা। এই দ্রাঘিমারেখাকে কেন্দ্র করে সেই দেশ বা অঞ্চলের সময় নির্ধারণ করা হয়।

প্রমাণ দ্রাঘিমা রেখার ধারণার উদ্দেশ্য হলো একটি দেশ বা অঞ্চলের সময় নির্ধারণকে সহজতর করা। পৃথিবীতে প্রায় ১৮০টি দ্রাঘিমা রেখা রয়েছে। প্রতিটি দ্রাঘিমারেখার দৈর্ঘ্য প্রায় ২০,০০০ কিলোমিটার। এই দূরত্বের উপর নির্ভর করে একটি স্থানের সময় নির্ধারণ করা একটি জটিল কাজ। তাই, কোন দেশ বা অঞ্চলের অসংখ্য দ্রাঘিমারেখার মধ্যে প্রায় মাঝখানে অবস্থিত একটি দ্রাঘিমারেখাকে প্রমাণ দ্রাঘিমারেখা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই দ্রাঘিমারেখাকে কেন্দ্র করে সেই দেশ বা অঞ্চলের সময় নির্ধারণ করা হয়।

প্রমাণ দ্রাঘিমা রেখার ধারণা বিভিন্ন দেশে ব্যবহৃত হয়। যেমন, বাংলাদেশের প্রমাণ দ্রাঘিমা রেখা হলো ৯০° পূর্ব। এর অর্থ হলো বাংলাদেশের সময় হলো গ্রিনিচ সময়ের থেকে ৬ ঘণ্টা বেশি। অর্থাৎ, যখন গ্রিনিচে রাত ১২টা হয়, তখন বাংলাদেশে দুপুর ৬টা হয়।

প্রমাণ দ্রাঘিমা রেখার ধারণা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক ধারণা। এটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

দ্রাঘিমা রেখার বৈশিষ্ট্য

  • দ্রাঘিমা রেখাগুলি পৃথিবীর উপর দিয়ে কল্পিত কতকগুলি নির্দিষ্টভাবে বিন্যস্ত মহাবৃত্তের অর্ধেক।
  • এদের বিস্তার উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত অর্থাৎ এরা উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত।
  • একটি দ্রাঘিমার উপরিস্থিত সমস্ত বিন্দুর দ্রাঘিমাংশ সমান হয়।
  • দ্রাঘিমা রেখাগুলির দৈর্ঘ্য পরস্পর সমান, কারণ এদের প্রতিটিই পৃথিবীর উপরিস্থিত এক একটি মহাবৃত্তের অর্ধেক। এদের দৈর্ঘ্য ২০,০০৩.৯৩ কিমি (১২,৪২৯.৯ মাইল)।
  • দ্রাঘিমা রেখাগুলিকে ডিগ্রি, মিনিট ও সেকেন্ডে বিভক্ত করা হয়। একটি দ্রাঘিমার ডিগ্রি সংখ্যা হলো এটি মূল মধ্যরেখা থেকে পূর্ব বা পশ্চিমে কত ডিগ্রি দূরে অবস্থিত।
  • দ্রাঘিমা রেখাগুলি ভৌগোলিক স্থানাঙ্ক নির্ধারণে ব্যবহৃত হয়। একটি স্থানের দ্রাঘিমাংশ নির্ধারণ করে সেই স্থানটি পৃথিবীতে কত ডিগ্রি পূর্ব বা পশ্চিমে অবস্থিত তা জানা যায়।
  • দ্রাঘিমা রেখাগুলি সময় নির্ধারণে ব্যবহৃত হয়। মূল মধ্যরেখাকে ০° দ্রাঘিমাংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং এর পূর্বদিকের স্থানগুলিতে পূর্ব দিকের সময় এবং পশ্চিমদিকের স্থানগুলিতে পশ্চিম দিকের সময় নির্ধারণ করা হয়।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url