জলোচ্ছ্বাস কাকে বলে? জলোচ্ছ্বাসের কারণ | জলোচ্ছ্বাসের প্রভাব | জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষার গৃহীত পদক্ষেপ

জলোচ্ছ্বাস কাকে বলে?

জলোচ্ছ্বাস হল এমন একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেখানে সমুদ্রের জল উপকূলের উপর দিয়ে উঁচু হয়ে আঘাত হানে। এটি সাধারণত ঘূর্ণিঝড়, সুনামির কারণে ঘটে। সুনামির ক্ষেত্রে সমুদ্রের জল সর্বোচ্চ প্রায় ৬৫ মিটার উঁচু হয়ে উপকূলে আঘাত হানতে পারে।

জলোচ্ছ্বাসের কারণ

জলোচ্ছ্বাসের কারণগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • ঘূর্ণিঝড়: ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সমুদ্রের জলের স্তর বৃদ্ধি পায় এবং উপকূলে আঘাত হানে। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে বায়ুর চাপ কম থাকে। ফলে সমুদ্রের জল কেন্দ্রের দিকে টেনে নেওয়া হয়। এতে সমুদ্রের জলের স্তর বৃদ্ধি পায়। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র উপকূলের কাছাকাছি আসার সাথে সাথে সমুদ্রের জল উপকূলের উপর দিয়ে উঁচু হয়ে আঘাত হানে।
  • সুনামি: সুনামি হল সমুদ্রের তলদেশে ভূমিকম্প, পাহাড় ধস বা আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের কারণে সৃষ্ট বিশাল ঢেউ। সুনামি ঢেউ সমুদ্রের তলদেশ থেকে কয়েক হাজার কিলোমিটার দূর পর্যন্ত ভ্রমণ করতে পারে এবং উপকূলে আঘাত হানে। সুনামি ঢেউের উচ্চতা কয়েক মিটার থেকে কয়েকশো মিটার পর্যন্ত হতে পারে।

  • অতিরিক্ত জোয়ার: অতিরিক্ত জোয়ারের কারণেও জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। অতিরিক্ত জোয়ারের কারণগুলির মধ্যে রয়েছে:
    • পূর্ণিমা বা অমাবস্যার সময় সূর্য ও চন্দ্রের আকর্ষণ শক্তির কারণে সমুদ্রের জলের স্তর বৃদ্ধি পায়। একে মহাকর্ষীয় জোয়ার বলা হয়।
    • পৃথিবীর অক্ষের হেলে থাকার কারণে সমুদ্রের জলের স্তর বৃদ্ধি পায়। একে ঋতুভিত্তিক জোয়ার বলা হয়।
    • ভূপৃষ্ঠের ভারসাম্যহীনতার কারণে সমুদ্রের জলের স্তর বৃদ্ধি পায়। একে ভূ-জোয়ার বলা হয়।

  • নদীর বন্যার কারণে: নদীর বন্যার কারণেও জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। নদীর পানি উপকূলীয় অঞ্চলে প্রবেশ করলে জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়।
  • মানুষের কর্মকাণ্ডের কারণে: মানুষের কর্মকাণ্ডের কারণেও জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে:
    • বন উজাড়: বন উজাড়ের ফলে ভূমি ক্ষয় হয় এবং নদীর গভীরতা বৃদ্ধি পায়। ফলে বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
    • জলাভূমি ধ্বংস: জলাভূমি ধ্বংসের ফলে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হয়। ফলে বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
    • উপকূলীয় এলাকায় অবকাঠামো নির্মাণ: উপকূলীয় এলাকায় অবকাঠামো নির্মাণের ফলে জলোচ্ছ্বাসের ক্ষয়ক্ষতি বৃদ্ধি পায়।

জলোচ্ছ্বাসের কারণগুলির মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ও সুনামি হল সবচেয়ে মারাত্মক কারণ। এগুলির ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।

জলোচ্ছ্বাসের প্রভাব

জলোচ্ছ্বাসের প্রভাবগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • মানুষের মৃত্যু ও আহত: জলোচ্ছ্বাসের কারণে মানুষ মারা যেতে পারে বা আহত হতে পারে। জলোচ্ছ্বাসের তীব্রতা ও স্থায়িত্বের উপর নির্ভর করে মৃত্যু ও আহতের সংখ্যা নির্ধারিত হয়।
  • বসতবাড়ি ও সম্পত্তির ক্ষতি: জলোচ্ছ্বাসের কারণে বসতবাড়ি ও সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। জলোচ্ছ্বাসের তীব্রতা ও স্থায়িত্বের উপর নির্ভর করে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারিত হয়।
  • কৃষি ও শিল্পের ক্ষতি: জলোচ্ছ্বাসের কারণে কৃষি ও শিল্পের ক্ষতি হতে পারে। জলোচ্ছ্বাসের কারণে ফসল নষ্ট হতে পারে, কলকারখানা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং পণ্যসামগ্রী নষ্ট হতে পারে।
  • পরিবেশগত ক্ষতি: জলোচ্ছ্বাসের কারণে পরিবেশগত ক্ষতি হতে পারে। জলোচ্ছ্বাসের কারণে উপকূলীয় পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে, বন্যপ্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং জলাভূমি ধ্বংস হতে পারে।
  • সামাজিক সমস্যা: জলোচ্ছ্বাসের কারণে সামাজিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। জলোচ্ছ্বাসের কারণে বাস্তুচ্যুতি, দারিদ্র্য বৃদ্ধি, অপরাধ বৃদ্ধি ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • অর্থনৈতিক ক্ষতি: জলোচ্ছ্বাসের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতি হতে পারে। জলোচ্ছ্বাসের কারণে সরকারের বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি, ঋণ গ্রহণ, কর বৃদ্ধি ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • জাতীয় নিরাপত্তা হুমকি: জলোচ্ছ্বাসের কারণে জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে। জলোচ্ছ্বাসের কারণে সামরিক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হতে পারে এবং অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।

জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষার গৃহীত পদক্ষেপ

জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি নেওয়া যেতে পারে:

  • বাঁধ নির্মাণ: বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে সমুদ্রের জল উপকূলে আসার পথ বন্ধ করা যেতে পারে।
  • উঁচু ভবন নির্মাণ: উপকূলীয় এলাকায় উঁচু ভবন নির্মাণের মাধ্যমে জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা করা যেতে পারে।
  • জনসচেতনতা বৃদ্ধি: জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকি সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা যেতে পারে।

বাংলাদেশ একটি উপকূলীয় দেশ এবং এখানে জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকি রয়েছে। তাই জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষার জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবে, এটি একটি জটিল সমস্যা এবং এর সম্পূর্ণ সমাধানের জন্য আরও সময় এবং প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url