রূপান্তরিত শিলা কাকে বলে? রূপান্তরিত শিলার বৈশিষ্ট্য | রূপান্তরিত শিলার প্রকারভেদ | রূপান্তরিত শিলার রূপান্তর প্রক্রিয়া

রূপান্তরিত শিলা কাকে বলে?

অনেক সময় প্রচন্ড তাপ ও চাপের জন্য রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় আগ্নেয় ও পাললিক শিলা নতুন এক ধরনের শিলায় রূপান্তরিত হয় এবং আগের তুলনায় কঠিন ও কেলাসিত হয়, এই শিলাকে রূপান্তরিত শিলা বলে। পূর্বের রূপ ও অবস্থার পরিবর্তন হয় বলে একে রূপান্তরিত শিলা বলে। রূপান্তরিত শিলা মূলত আগ্নেয় ও পাললিক শিলার পরিবর্তিত রূপ। যেমন- চুনাপাথর পরিবর্তিত হয়ে মার্বেল, বেলেপাথর পরিবর্তিত হয়ে কোয়ার্টজাইট, কাঁদা পরিবর্তিত হয়ে শ্লেট, গ্রানাইট পরিবর্তিত হয়ে নীসে, কয়লা পরিবর্তিত হয়ে গ্রাফাইটে পরিণত হয় ।

রূপান্তরিত শিলা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি আগ্নেয় শিলার সাথে একত্রে ভূ-ভাগের শতকরা প্রায় ৮৫ ভাগ গঠন করেছে। ভূ-ত্বাত্তিক সময় ব্যাপী মহাদেশের যে সঞ্চারণ এবং ঊত্থান-পতন হয়েছে এ শিলা থেকে তা জানা যায়। এ শিলা সূদুর অতীতকালের প্লেট সঞ্চারণের সাক্ষ্য বহন করে। রূপান্তরিত শিলা মার্বেল পাথর, শ্লেট , গার্নেট ইত্যাদির মত মূল্যবান খনিজ সম্পদ ধারণ করে।

রূপান্তরিত শিলার রূপান্তর প্রক্রিয়া

শিলার রূপান্তরের তাপ, চাপ ও রাসায়নিক ক্রিয়া প্রধান ভূমিকা রাখে। নিম্নে এগুলো বর্ণনা করা হলোঃ

তাপ : শিলার তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে খনিজ এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় পরিবর্তিত হতে শুরু করে। এ অবস্থায় শিলার ভিতর তরলের পরিমাণ বাড়তে থাকে এবং রাসায়নিক ক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। এ অবস্থায় স্ফটিকের আদি গঠন কাঠামো ভেঙ্গে যায় এবং নতুন করে ভিন্নভাবে তা সংগঠিত হতে থাকে। এভাবেই নতুন শিলার সৃষ্টি হয়।

চাপ : ভূ-পৃষ্ঠস্থ শিলার ভারে এর তলদেশের শিলার চাপ বৃদ্ধি পায়। ফলে শিলার খনিজসমূহ সংকুচিত হয়। এ অবস্থায় খনিজ আবার কেলাসিত হয়ে আরো ঘন সনিড়ববেসিত পরমাণু কাঠামো বিশিষ্ট নতুন শিলার সৃষ্টি করে।

রাসায়নিক ক্রিয়া : রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় নিম্ন তাপমাত্রাসম্পন্ন খনিজসমূহ গলতে থাকে। এ অবস্থায় পরমাণু সহজেই এ সমস্ত তরলের মাধ্যমে স্থানান্তরিত হতে পারে। যদিও শিলার বেশির ভাগ অংশই কঠিন অবস্থায় থাকে। অধিকতর তাপ ও চাপের কারণে খনিজের বহু পরমাণু কেলাস কাঠামো থেকে মুক্ত হয়ে খনিজ কণায় তরলের মাধ্যমে স্থানান্তরিত হয়ে পরমাণুর এ প্রক্রিয়া ক্রমাগত চলতে থাকে। এ অবস্থায় পুরানো কেলাস কাঠামো ভেঙ্গে নতুন কেলাস গঠন হয়। এভাবে রূপান্তরিত শিলা গঠিত হয়।

রূপান্তরিত শিলার বৈশিষ্ট্য

ক) কেলাসিত : তাপ ও চাপে আগ্নেয় ও পাললিক শিলার পরিবর্তন হয়ে রূপান্তরিত শিলায় পরিণত হয় বলে এটি সাধারণত কেলসিত। 

খ) কাঠিন্য : তাপ ও চাপে আগ্নেয় এবং পাললিক শিলা পরিবর্তিত হয়ে রূপান্তরিত শিলায় পরিণত হয় বলে এই শিলার কাঠিন্য অন্যান্য শিলার চেয়ে বেশি। ফলে এটি অধিকতর শক্ত ও মজবুত।

গ) জীবাশ্মহীন: পাললিক শিলার জীবাশ্ম রূপান্তরের ফলে বিলুপ্ত হয়ে যায়। অন্যদিকে, আগ্নেয় শিলায় থেকে রূপান্তরিত হলেও জীবাশ্ম থাকে।

ঘ) সমান্তরাল: রূপান্তরিত শিলার উপাদানগুলো সাধারণত সমান্তরাল অবস্থান করে বলে এটি সমান্তরাল শিলা। এই সমান্তরাল, আনুভূমিক, তির্যক বা বক্র যে কোনোভাবেই হতে পারে।

ঙ) তরঙ্গচিত্র: তাপ ও চাপে এ শিলা তৈরি হয় বলে তরঙ্গচিত্র থাকে না।

রূপান্তরিত শিলার প্রকারভেদ

রূপান্তরিত শিলাকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

ক. উৎসের উপর ভিত্তি করে : এ শিলা আবার দুই প্রকার। যথা-

  • ১. আগ্নেয় রূপান্তরিত শিলা : আগ্নেয় শিলা থেকে রূপান্তরিত হয়ে এই শিলায় পরিণত হলে একে আগ্নেয় রূপান্তরিত শিলা বলে। যেমন- গ্রানাইট থেকে নিস বা নাইস।
  • ২. পাললিক রূপান্ততির শিলা : পাললিক শিলা থেকে রূপারিত হয়ে এই শিলায় পরিণত হয় বলে একে পাললিক রূপান্তরিত শিলা বলে। যেমন- বেলেপাথর থেকে কোয়ার্টজাইট।

খ. খনিজের বুনট ও গঠন উপাদানের উপর ভিত্তি করে : এ শিলা দুই প্রকার। যথা-

  • ১. পত্রায়িত শিলা : আগ্নেয় ও পাললিক শিলা তাপ ও চাপে পরিবর্তিত হয়ে সমান্তরাল পাতার মত চ্যাপ্টা আকৃতি বিশিষ্ট হলে তাকে পত্রায়িত শিলা বলে। এ ধরনের শিলা খনিজ পাতার মত চ্যাপ্টা বুনট বিশিষ্ট। যেমন- সিস্ট, শ্লেট ইত্যাদি।
  • ২. অপত্রায়িত শিলা : আগ্নেয় ও পাললিক শিলা রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় পরিবর্তিত হয়ে পাতার মত চ্যাপ্টা আকৃতি ধারণ না করলে তাকে অপত্রায়িত শিলা বলে। এ ধরনের শিলার খনিজের বিন্যাসে কোনো দল থাকে না। যেমন- মার্বেল, কোয়ার্টজাইট ইত্যাদি।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url