সেমিকন্ডাক্টর কাকে বলে? সেমিকন্ডাক্টর কত প্রকার ও কি কি? সেমিকন্ডাক্টরের ব্যবহার
শিক্ষার্থী বন্ধুরা, আমাদের আজকের এই আলোচনায় আমরা জানবো সেমিকন্ডাক্টরের সংজ্ঞা, সেমিকন্ডাক্টরের প্রকারভেদ, ব্যবহার, ইন্ট্রিন্সিক ও এক্সন্ট্রিন্সিক সেমিকন্ডাক্টর,পি-টাইপ ও এন-টাইপ সেমিকন্ডাক্টর।
সেমিকন্ডাক্টর কাকে বলে?
সেমিকন্ডাক্টর হল এমন একটি পদার্থ যার পরিবাহিতা পরিবাহী ও অন্তরকের মাঝামাঝি। সেমিকন্ডাক্টর পদার্থগুলি সাধারণত তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে তাদের পরিবাহিতা বৃদ্ধি পায়। সেমিকন্ডাক্টর পদার্থগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সিলিকন, জার্মেনিয়াম, গ্যালিয়াম আর্সেনাইড, ইনডিয়াম ফসফাইড ইত্যাদি।
সেমিকন্ডাক্টর পদার্থগুলির ব্যবহার ইলেকট্রনিক্স শিল্পে ব্যাপক। সেমিকন্ডাক্টর পদার্থগুলি দিয়ে ট্রানজিস্টর, ডায়োড, রেজিস্টর, ক্যাপাসিটর ইত্যাদি তৈরি করা হয়। এই যন্ত্রগুলি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি তৈরি করা হয়, যেমন- টেলিভিশন, রেডিও, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন ইত্যাদি।
সেমিকন্ডাক্টর পদার্থগুলির ব্যবহার ইলেকট্রনিক্স শিল্পের বিকাশে ব্যাপক অবদান রেখেছে। সেমিকন্ডাক্টর পদার্থগুলির ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে এমন ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতিগুলি আমাদের জীবনকে অনেক সহজ ও আরামদায়ক করে তুলেছে।
সেমিকন্ডাক্টরের প্রকারভেদ
সেমিকন্ডাক্টরগুলির দুটি প্রধান প্রকার হল:
ইন্ট্রিন্সিক সেমিকন্ডাক্টর: যেসব সেমিকন্ডাক্টরে কোনও অপদ্রব্য মিশ্রিত নেই, সেগুলিকে ইন্ট্রিন্সিক সেমিকন্ডাক্টর বলা হয়। জার্মেনিয়াম এবং সিলিকন হল দুটি গুরুত্বপূর্ণ ইন্ট্রিন্সিক সেমিকন্ডাক্টর।
এক্সট্রিন্সিক সেমিকন্ডাক্টর: যেসব সেমিকন্ডাক্টরে অপদ্রব্য মিশ্রিত আছে, সেগুলিকে এক্সট্রিন্সিক সেমিকন্ডাক্টর বলা হয়। এক্সট্রিন্সিক সেমিকন্ডাক্টরগুলিকে ডোপিং করে তৈরি করা হয়। ডোপিং হল এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একটি অপদ্রব্যকে একটি সেমিকন্ডাক্টরে মিশ্রিত করা হয়।
অপদ্রব্যের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে, এক্সট্রিন্সিক সেমিকন্ডাক্টরগুলিকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়:
পি-টাইপ সেমিকন্ডাক্টর: যেসব এক্সট্রিন্সিক সেমিকন্ডাক্টরে ত্রিযোজী অপদ্রব্য মিশ্রিত থাকে, সেগুলিকে পি-টাইপ সেমিকন্ডাক্টর বলা হয়।
এন-টাইপ সেমিকন্ডাক্টর: যেসব এক্সট্রিন্সিক সেমিকন্ডাক্টরে পঞ্চযোজী অপদ্রব্য মিশ্রিত থাকে, সেগুলিকে এন-টাইপ সেমিকন্ডাক্টর বলা হয়।
সেমিকন্ডাক্টরের ব্যবহার
সেমিকন্ডাক্টরগুলির বৈদ্যুতিক পরিবাহিতা পরিবর্তন করে বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি তৈরি করা যেতে পারে, যেমন:
ট্রানজিস্টর: ট্রানজিস্টর হল একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্র যা একটি ইলেকট্রিক সিগন্যালকে বাড়িয়ে বা কমিয়ে দিতে পারে। ট্রানজিস্টরগুলি কম্পিউটার, টেলিফোন এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতিগুলিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
ডিজিটাল বর্তনী: ডিজিটাল বর্তনীগুলি হল এমন ইলেকট্রনিক বর্তনী যা কেবলমাত্র দুটি অবস্থায় থাকতে পারে, ১ এবং ০। ডিজিটাল বর্তনীগুলি কম্পিউটার, টেলিফোন এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতিগুলিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
অপ্টোইলেকট্রনিক্স: অপ্টোইলেকট্রনিক্স হল এমন একটি ক্ষেত্র যা আলো এবং ইলেকট্রনগুলির মধ্যে মিথস্ক্রিয়া নিয়ে কাজ করে। অপ্টোইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতিগুলিতে সেমিকন্ডাক্টরগুলি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়, যেমন:
- লেজার: লেজার হল এমন একটি যন্ত্র যা আলোর একটি সংকীর্ণ, একমুখী মরীচি তৈরি করতে পারে। লেজারগুলি বিভিন্ন ধরনের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়, যেমন: যোগাযোগ, চিকিৎসা এবং শিল্প।
- ফটোডায়াড: ফটোডায়াড হল এমন একটি যন্ত্র যা আলোর উপস্থিতিতে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে পারে। ফটোডায়াডগুলি বিভিন্ন ধরনের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়, যেমন: আলোর পরিমাপ, স্পেকট্রোস্কোপি এবং রাডার।
সেমিকন্ডাক্টরগুলি ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতিগুলির বিকাশে একটি বিপ্লব ঘটিয়েছে। আজকের বিশ্বে, সেমিকন্ডাক্টরগুলি ছাড়া আমাদের জীবন কল্পনা করাই কঠিন।
আরো পড়ুনঃ