বিভিন্ন গ্রুপে উপস্থিত মৌলগুলোর বিশেষ নাম

বিভিন্ন গ্রুপে উপস্থিত মৌলগুলোর বিশেষ নাম (The Special Names of Elements Present in Various Groups)

মৌলসমূহের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন সময়ে তাদের বিশেষ নাম দেওয়া হয়েছিল।

ক্ষার ধাতুঃ পর্যায় সারণির 1 নং গ্রুপে 7 টি মৌল আছে। এদের মধ্যে হাইড্রোজেন ছাড়া বাকি 6 টি মৌলকে (লিথিয়াম, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, রুবিডিয়াম, সিজিয়াম এবং ফ্রানসিয়াম) ক্ষার ধাতু বলে। এই ছয়টি মৌলের প্রত্যেকটি পানিতে দ্রবীভূত হয়ে হাইড্রোজেন গ্যাস এবং ক্ষার তৈরি করে বলে এদেরকে ক্ষার ধাতু (Alkali Metals) বলা হয়।

মৃৎক্ষার ধাতুঃ পর্যায় সারণির 2 নং গ্রুপে বেরিলিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, স্ট্রনসিয়াম, বেরিয়াম এবং রেডিয়াম এই 6 টি মৌল আছে। এই মৌলগুলোকে মৃৎক্ষার ধাতু বলে। এই ধাতুগুলোকে মাটিতে বিভিন্ন যৌগ হিসেবে পাওয়া যায়। আবার, এরা ক্ষার তৈরি করে। এজন্য সামগ্রিকভাবে এদের মৃৎক্ষার ধাতু (Alkaline Earth Metals) বলা হয়।

মুদ্রা ধাতুঃ গ্রুপ-11 এর 4 টি মৌল আছে কপার, সিলভার, গোল্ড এবং রন্টজেনিয়াম। এই চারটি মৌলের মধ্যে প্রথম 3 টি মৌলকে মুদ্রা ধাতু (Coin Metals) বলা হয়, কারণ এই গ্রুপের সবচেয়ে নিচের মৌল রন্টজেনিয়াম (Rg) ছাড়া অন্য যে 3 টি মৌল আছে তা দিয়ে প্রাচীনকালে মুদ্রা তৈরি হতো এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিময় মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হতো।

হ্যালোজেন গ্রুপঃ গ্রুপ-17 এর 6 টি মৌলকে হ্যালোজেন (Halogen) বলা হয়। এই হ্যালোজেন গ্রুপের 6 টি মৌল হচ্ছে: ফ্লোরিন (F), ক্লোরিন (Cl), ব্রোমিন (Br), আয়োডিন (I), অ্যাস্টাটিন (As) এবং টেনোসিন (Ts)। এ সকল হ্যালোজেন মৌলকে X দ্বারা প্রকাশ করা হয়। হ্যালোজেন মানে লবণ উৎপাদনকারী এবং এর মূল উৎস সামুদ্রিক লবণ। হ্যালোজেন মৌলগুলোর সাথে ধাতু যুক্ত হয়ে লবণ গঠিত হয়। যেমন: F এর সাথে Na যুক্ত হয়ে সোডিয়াম ফ্লোরাইড লবণ কিংবা Cl এর সাথে Na যুক্ত হয়ে সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl) বা খাদ্য লবণ গঠিত হয়। এরা নিজেরাই নিজেদের মধ্যে ইলেকট্রন ভাগাভাগি করে দ্বিমৌল অণু তৈরি করে। যেমন: Cl2, I2 ইত্যাদি।

নিষ্ক্রিয় গ্যাসঃ পর্যায় সারণির 18 নং গ্রুপের মৌলসমূহকে নিষ্ক্রিয় গ্যাস (Inert Gases) বলা হয়। মৌলগুলো হলো হিলিয়াম (He), নিয়ম (Ne), আর্গন (Ar), ক্রিপ্টন (Kr), জেনন (Xe), রেডন (Rn) এবং ওগানেসন (Og)। এই মৌলগুলোর সবচেয়ে বাইরের শক্তিস্তরে প্রয়োজনীয় ইলেকট্রন দিয়ে পূর্ণ থাকে বলে এরা ইলেকট্রন বিনিময় বা ভাগাভাগি করে কোনো যৌগ গঠন করতে চায় না। রাসায়নিক বন্ধন গঠন বা রাসায়নিক বিক্রিয়ায় এরা নিষ্ক্রিয় থাকে বলে এদেরকে নিষ্ক্রিয় মৌল বা নিষ্ক্রিয় গ্যাস বলে। নিষ্ক্রিয় গ্যাসগুলো সাধারণ তাপমাত্রায় গ্যাস হিসেবে থাকে।

অবস্থান্তর মৌলঃ পর্যায় সারণির 3 নং গ্রুপ থেকে 12 নং গ্রুপের মৌলগুলো অবস্থান্তর মৌল থাকে। অবস্থান্তর মৌলগুলো যে সকল যৌগ গঠন করে সে সকল যৌগ রঙিন হয়। অবস্থান্তর মৌল বিভিন্ন বিক্রিয়ার প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। যেমন: 10 নং গ্রুপের মৌল নিকেল একটি অবস্থান্তর মৌল। নিকেল বিভিন্ন জৈব বিক্রিয়ার প্রভাবক হিসেবে কাজ করে।

Ca কে মৃৎক্ষার ধাতু বলা হয় কেন?

Ca ধাতুর বিভিন্ন যৌগ মাটিতে পাওয়া যায়। অতএব, ক্যালসিয়াম মৃৎক্ষার ধাতু। আবার Ca ধাতুর হাইড্রোক্সাইড যৌগ Ca(OH)2 একটি ক্ষার। অতএব Ca একটি ক্ষারধাতু। সামগ্রিকভাবে Ca কে মৃৎক্ষার ধাতু বলা হয়।

He কেন নিষ্ক্রিয় গ্যাস? ব্যাখ্যা কর।

He নিজেদের সাথে যুক্ত হয় না আবার অন্য মৌলের সাথে যুক্ত হয় না। এজন্য হিলিয়াম নিষ্ক্রিয় মৌল। আবার হিলিয়াম মৌল গ্যাস হিসেবে অবস্থান করে। এজন্যই সামগ্রিকভাবে He কে নিষ্ক্রিয় গ্যাস বলা হয়।


এসএসসি || রসায়ন || SSC || Chemistry

অধ্যায় - ০২ : পদার্থের অবস্থা
অধ্যায় - ০৩ : পদার্থের গঠন
অধ্যায় - ০৪ : পর্যায় সারণি
অধ্যায় - ০৫ : রসায়নিক বন্ধন
অধ্যায় - ০৬ : মোলের ধারণা ও রাসায়নিক গণনা
অধ্যায় - ০৭ : রাসায়নিক বিক্রিয়া
অধ্যায় - ০৮ : রসায়ন ও শক্তি
অধ্যায় - ০৯ : এসিড-ক্ষারক সমতা
অধ্যায় - ১০ : খনিজ সম্পদ ধাতু-অধাতু
অধ্যায় - ১১ : খনিজ সম্পদ- জীবাশ্ম
অধ্যায় - ১২ : আমাদের জীবনে রসায়ন 
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url