কণার গতিতত্ত্ব

কণার গতিতত্ত্ব (Kinetic Theory of Particles)


কণার গতিতত্ত্ব কাকে বলে?

সকল পদার্থই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা দ্বারা গঠিত। এই কলাগুলো একে অপরকে আকর্ষণ করে যাকে আন্তঃকণা আকর্ষণ শক্তি বলা হয়। আবার কণাগুলোর গতিশক্তিও রয়েছে। আন্তঃকণা আকর্ষণ শক্তি এবং কণাগুলোর গতিশক্তি দিয়ে পদার্থের কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় অবস্থা ব্যাখ্যা করার তত্ত্বকেই কণার গতিতত্ত্ব বলা হয়।

কণার গতিতত্ত্বের ব্যাখ্যাঃ

যখন কণাগুলোর ভেতরকার আকর্ষণ শক্তি বা আন্তঃকণা আকর্ষণ শক্তি খুব বেশি থাকে তখন কণাগুলো খুব কাছাকাছি অবস্থান করে এবং নিজেদের অবস্থান থেকে নড়তে পারে না। এই অবস্থা হচ্ছে কঠিন অবস্থা।

কণার গতিশক্তি

কঠিন পদার্থকে তাপ দেওয়া হলে কণাগুলো তাপশক্তি গ্রহণ করে কাঁপতে থাকে। যদি আরও বেশি তাপ দেওয়া হয় তাহলে কণাগুলো এত বেশি কাঁপতে থাকে যে আন্তঃকণা আকর্ষণ শক্তি কমে যায় এবং কিছুটা গতিশক্তি প্রাপ্ত হয়। পদার্থের এই অবস্থাকে তরল অবস্থা বলে। 

তরলের নির্দিষ্ট আয়তন থাকলেও নির্দিষ্ট আকার থাকে না। তরল অবস্থায় পদার্থকে আরো বেশি তাপ দেওয়া হলে কণাগুলো তাপশক্তি নিয়ে গতিশক্তি বৃদ্ধি করতে থাকে এবং একসময় গতিশক্তি এত বেড়ে যায় যে কণাগুলো আন্তঃকণা আকর্ষণ শক্তি থেকে প্রায় মুক্ত হয়ে বিক্ষিপ্তভাবে ছুটতে থাকে। এই অবস্থাকে বলে গ্যাসীয় অবস্থা।

গ্যাসীয় অবস্থায় পদার্থের আর কোনো নির্দিষ্ট আয়তন থাকে না। তাকে যে আয়তনের পাত্রে রাখা হবে কণাগুলো সেই আয়তনেই ছোটাছুটি করতে পারবে। গ্যাসীয় অবস্থায় পৌঁছানোর পর যদি আরও তাপ দেওয়া হয় তখন কণাগুলো আরও জোরে ছুটতে থাকবে অর্থাৎ গতিশক্তি আরও বেড়ে যাবে।

তাপ প্রয়োগে পদার্থের অবস্থার পরিবর্তন

কঠিন পদার্থ : কঠিন পদার্থে তাপ প্রয়োগ করলে উহা তরলে পরিণত হয়। কারণ যখন পদার্থ কঠিন অবস্থায় থাকে তখন উহার অণুগুলো পরস্পরের কাছাকাছি থাকে। এই অবস্থায় তাপ প্রয়োগ করা হলে কঠিনের অণুগুলো তরলের ন্যায় প্রসারিত হয়। বিধায় কঠিন পদার্থে তাপ প্রয়োগ করলে তা তরলে পরিণত হয়।

তরল পদার্থ : তরল পদার্থে তাপ প্রয়োগ করা হলে তরল পদার্থ বায়বীয় পদার্থে পরিণত হয়। কারণ তরলে তাপ প্রয়োগ করলে তরলের অণুসমূহ গ্যাসীয় পদার্থের ন্যায় মুক্তভাবে বিচরণ করতে থাকে।

বায়বীয় পদার্থ : স্বাভাবিক অবস্থায় বায়বীয় পদার্থের কণাসমূহের মধ্যে আকর্ষণ খুবই কম থাকে। বায়বীয় পদার্থে তাপ প্রয়োগ করলে বায়বীয় পদার্থের কণাগুলো আরও গতিশীল হয় এবং পরস্পর থেকে প্রায় ছিন্ন হয়ে চলে যেতে চায়।

কণার গতি অনুযায়ী কঠিন, তরল ও বায়বীয় পদার্থের কণার গতির বর্ণনা

কণার গতিতত্ত্ব অনুযায়ী কঠিন, তরল ও বায়বীয় পদার্থের কণার গতির বিবরণ নিম্নে দেওয়া হলো -

পদার্থ যখন কঠিন অবস্থায় থাকে তখন তার গতিশক্তি সবচেয়ে কম থাকে। কারণ কঠিন অবস্থায় পদার্থের অণুসমূহ পরস্পরের অতি নিকটে থাকে। বিধায় অণু সমূহের মাঝে আন্তঃআণবিক আকর্ষণ শক্তি সবচেয়ে বেশি এবং আন্তঃআণবিক দূরত্ব সবচেয়ে কম। তাই এ অবস্থায় অণুসমূহ চলাচল করতেই পারে না। কাজেই কঠিন অবস্থায় অণুসমূহের গতিশক্তি সবচেয়ে কম অর্থাৎ নেই বললেই চলে।

তরল অবস্থায় পদার্থের অণুসমূহের গতি কঠিনের চেয়ে বেশি এবং বায়বীয় পদার্থের চেয়ে কম। কারণ এ অবস্থায় অণুসমূহ কঠিনের চেয়ে একটু দূরে এবং বায়বীয় পদার্থের চেয়ে একটু কম দূরে অবস্থান করে। তাই এ অবস্থায় অণুসমূহের আন্তঃআণবিক আকর্ষণ কঠিনের চেয়ে কম এবং বায়বীয় পদার্থের চেয়ে বেশি। আবার আন্তঃআণবিক দূরত্ব কঠিনের চেয়ে বেশি এবং বায়বীয় পদার্থের চেয়ে কম। তাই এ অবস্থায় অণুসমূহ কঠিন ও বায়বীয় পদার্থের মাঝামাঝি অবস্থান করে। তরল পদার্থের কণার গতি কঠিন ও বায়বীয় পদার্থের মাঝামাঝি।

বায়বীয় পদার্থের গতিশক্তি সবচেয়ে বেশি। এ অবস্থায় অণুসমূহের আন্তঃআণবিক আকর্ষণ নেই বললেই চলে এবং আন্তঃআণবিক দূরত্ব সবচেয়ে বেশি। কারণ এ অবস্থায় পদার্থের অণুসমূহ মুক্তভাবে বিচরণ করে অর্থাৎ স¦াধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে।

তাপমাত্রার পরিবর্তনে কোনো পদার্থের অবস্থা পরিবর্তন হয় কেন?

একই পদার্থ ভিন্ন ভিন্ন তাপমাত্রায় ভিন্ন অবস্থা প্রদর্শন করার কারণ হলো পদার্থে অণুসমূহ সর্বদা কম্পমান অবস্থায় থাকে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে অণুসমূহের কম্পনও ততো বৃদ্ধি পায়। তাপ শক্তির কারণে পদার্থে অণুসমূহের কম্পন তথা গতি সঞ্চার হয় বলে অণুসমূহ পরস্পর হতে বিচ্ছিন্ন হতে চায়। আন্তঃআণবিক শক্তির তুলনায় অণুসমূহের কম্পন অনেক কম হলে অণুসমূহ নির্দিষ্ট অবস্থানে বিরাজ করে। তখন কঠিন অবস্থার সৃষ্টি হয়।

তাপমাত্রা বৃদ্ধি করলে কম্পন শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং এমন অবস্থায় পৌঁছায় যে, অণুসমূহ নির্দিষ্ট স্থানে বিরাজ না করে চলাচল করে। তখন তরল অবস্থার সৃষ্টি হয়। তাপমাত্রা আরও বাড়ালে অণুসমূহের কম্পন শক্তি এতো বৃদ্ধি পায় যে, তারা পরস্পর হতে অনেক দূরে সরে যায় এবং প্রায় মুক্তভাবে চলাচল করে। তখন গ্যাসীয় অবস্থার সৃষ্টি হয়। উপরোক্ত কারণে একই পদার্থ ভিন্ন ভিন্ন তাপমাত্রায় ভিন্ন অবস্থা প্রদর্শন করে।

তাপ প্রয়োগের ফলে অণুসমূহের গতিশক্তি বৃদ্ধি পায় কেন?

পদার্থ যেসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণার সমন্বয়ে গঠিত সে কণাগুলো যেকোনো তাপমাত্রায় চলাচল করে। ক্ষুদ্র কণাগুলোর চলাফেরার ফলে পদার্থ এক ধরনের শক্তি লাভ করে। পদার্থের এ শক্তিই গতিশক্তি। তাপ প্রয়োগের ফলে ক্ষুদ্র কণাগুলোর চলাচলের গতি বৃদ্ধি পায়। এ কারণে গতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।

আন্তঃআণবিক শক্তি কি?

কোনো নির্দিষ্ট পদার্থের অণুসমূহ যে শক্তি দ্বারা পরস্পরকে আকর্ষণ করে তাকে আন্তঃআণবিক শক্তি বলে। এই আকর্ষণ বল বস্তুর প্রকৃতির উপর নির্ভর করে।

আন্তঃআণবিক দূরত্ব কাকে বলে?

পদার্থের অণুসমূহের মধ্যবর্তী দূরত্বকে আন্তঃআণবিক দূরত্ব বলে।

ডিপ ফ্রিজে পানি রাখলে তা কিভাবে বরফে পরিণত হয়?

ডিপ ফ্রিজে পানি রাখলে কম্প্রেসার পানি থেকে তাপশক্তি গ্রহণ করে বাইরে তাপশক্তি ত্যাগ করে। ফলে পানির তাপশক্তি হ্রাস পেতে থাকে এবং এক সময় পানি অবস্থা পরিবর্তন করে তরল থেকে বরফে পরিণত হয়। পানি বরফে পরিণত হওয়ার কারণ হলো পানির অণুসমূহের গতিশক্তি হ্রাস।

গ্যাসের চাপ কাকে বলে?

কোনো আধারের গায়ে গ্যাসীয় কণাসমূহ যে চাপ প্রদান করে তাকে গ্যাসের চাপ বলে।


এসএসসি || রসায়ন || SSC || Chemistry

অধ্যায় - ০২ : পদার্থের অবস্থা
অধ্যায় - ০৩ : পদার্থের গঠন
অধ্যায় - ০৪ : পর্যায় সারণি
অধ্যায় - ০৫ : রসায়নিক বন্ধন
অধ্যায় - ০৬ : মোলের ধারণা ও রাসায়নিক গণনা
অধ্যায় - ০৭ : রাসায়নিক বিক্রিয়া
অধ্যায় - ০৮ : রসায়ন ও শক্তি
অধ্যায় - ০৯ : এসিড-ক্ষারক সমতা
অধ্যায় - ১০ : খনিজ সম্পদ ধাতু-অধাতু
অধ্যায় - ১১ : খনিজ সম্পদ- জীবাশ্ম
অধ্যায় - ১২ : আমাদের জীবনে রসায়ন 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url