রসায়নে অনুসন্ধান বা গবেষণা প্রক্রিয়া

রসায়নে অনুসন্ধান বা গবেষণা প্রক্রিয়া (The Process of Research in Chemistry)

অনুসন্ধান

কোনো বিষয় সম্বন্ধে জিজ্ঞাসাই হলো অনুসন্ধান।

রসায়নে অনুসন্ধান প্রক্রিয়ার ধাপ

রসায়নে অনুসন্ধান প্রক্রিয়ার ধাপ মোট ৭টি। ধারাবাহিকভাবে ধাপগুলো নিম্নরূপ -

১. বিষয়স্তু নির্ধারণ

২. বিষয়বস্তু সম্পর্কে সম্যক জ্ঞানার্জন

৩. কাজের পরিকল্পনা প্রণয়ন

৪. ফলাফল সম্পর্কে আগাম ধারণাকরণ

৫. পরীক্ষণ ও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ

৬. তথ্য-উপাত্ত এর সংগঠন ও বিশ্লেষণ

৭. বিজ্ঞান ও মানব কল্যাণে প্রভাব।

রসায়নে অনুসন্ধান প্রক্রিয়ার ধাপের বর্ণনা

রসায়নে অনুসন্ধান প্রক্রিয়ার ধাপ মোট ৭টি। পর্যায়ক্রমে ধাপগুলোর ধারাবাহিক বর্ণনা নিম্নরূপ -

বিষয়বস্তু নির্ধারণ : বিষয়স্তু নির্ধারণ বা সমস্যা চিহ্নিতকরণ গবেষণা বা অনুসন্ধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য যা সমাজ তথা মানবকল্যাণে দরকার যা ভবিষ্যতে দরকার হতে পারে- এমন চিন্তা করে অনুসন্ধ্যান ও গবেষণার বিষয় বস্তু নির্ধারণ করা হয়। যেমন- পৃথিবীতে খনিজ জ্বালানি যেমন- প্রকৃতিক গ্যাস, কয়লা, পেট্রোলিয়াম ইত্যাদির মজুদ কমে আসছে। ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে বিকল্প জ্বালানির অনুসন্ধান ও গবেষণা একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিষয়বস্তু নির্ধারণের সময় পরিবেশ, সামাজিক আচার বা ধর্মীয় অনুভূতির কথাও বিবেচনা করা হয়।

বিষয়বস্তু সম্পর্কে জ্ঞানার্জন : বিষয়বস্তু সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান অর্জন করা। অনুসন্ধান ও গবেষণার ফলে উদ্ভাবিত বস্তু মানবকল্যাণ ব্যতীত আর কোন কাজে ব্যবহৃত হতে পারে, প্রয়োজনীয় পরীক্ষার জন্য ব্যবহৃত পদার্থ স্বাস্থ্য ও পরিবেশের কী ক্ষতি করতে পারে, অনুসন্ধান ও গবেষণার বিভিন্ন ধাপের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সম্পর্কে ও পরীক্ষার সময় কোনো অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি সামাল দেয়ার মতো যথেষ্ট জ্ঞানার্জন ও দক্ষতা আবশ্যক। বিষয়বস্তু ও বিষয়বস্তুর উপর পরীক্ষণ সংক্রান্ত পূর্বে প্রকাশিত বৈজ্ঞানিক তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। যেমন- সাইট্রিক এসিড যুক্ত ফলের অনুসন্ধান করতে হলে, কোন্ জাতীয় ফলে সাইট্রিক এসিড থাকতে পারে তার ধারণা বইপত্র বা জার্নাল হতে সংগ্রহ করতে হবে। একই সাথে সাইট্রিকে এসিড সনাক্তকরণের তথ্যও সংগ্রহ করতে হবে।

কাজের পরিকল্পনা প্রণয়ন : বিষয়বস্তু সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান ও অনুমিত সিদ্ধান্ত গঠন কাজের পরিকল্পনা প্রণয়নকে সহজতর করে। অনুসন্ধান ও গবেষণা প্রক্রিয়ার সুবিধার্থে পরিকল্পনা প্রণয়ন এলোমেলো ভাবে না করে ক্রমানুসারে করা বাঞ্ছনীয়। অর্থাৎ যে কাজের ধারণা ছাড়া পরের কাজ শুরু বা কাজের ব্যাখ্যা করা যাবে না সেটাকে আগে রেখে পরের কাজটি পরিকল্পনায় নেয়া হয়।

ফলাফল সম্পর্কে আগাম ধারণাকরণ : কোনো পরীক্ষণের ফলাফল সম্পর্কে আগেই ধারণা থাকলে প্রাপ্ত ফলাফল নিয়ে অযথা কৌতূহল সৃষ্টি হবে না, তাতে করে কাজের পরের ধাপটিতে অগ্রসর হওয়া দ্রুত ও সহজ হবে। এছাড়াও ফলাফল সম্পর্কে আগাম ধারণা করতে পারলে কাজের পরিকল্পনা প্রণয়নেও সুবিধা হয়। অর্থাৎ কোনো কাজের ফলাফলের উপর ভিত্তি করে পরের কাজটির পরিকল্পনা কেমন হওয়া উচিত সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

পরীক্ষণ ও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ : পরীক্ষণ ও তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ সর্বজন গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি মেনে করা হয়। যাতে করে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত সবার কাছে বোধগম্য হয়।

তথ্য-উপাত্ত এর সংগঠন ও বিশ্লেষণ : প্রাপ্ত ফলাফলের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা প্রদানপূর্বক কোন অংশটি গ্রহনীয় আর কোন অংশটি বর্জনীয় তার একটি চিত্র তুলে ধরা হয় তথ্য-উপাত্তের সংগঠন ও বিশ্লেষণ অংশে।

বিজ্ঞান ও মানব কল্যাণে প্রভাব : অনুসন্ধান ও গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল বিজ্ঞান ও মানবকল্যাণে কী প্রভাব ফেলবে তার সম্পর্কে আলোচনা থাকা অনুসন্ধান ও গবেষণা প্রক্রিয়ার আরেকটি অংশ। প্রাপ্ত ফলাফল বিজ্ঞানের কোন মৌলিক বিষয়টির নতুন ব্যাখ্যা প্রদান করবে বা বিজ্ঞানের কোন অংশটির সহজে বুঝতে সহায়তা করবে তা উল্লেখ করতে হয়।

অনুসন্ধান ও গবেষণা প্রক্রিয়া সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে করা হয় এবং একটি ধাপ অপরটির সম্পূরক

কোনো বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা থেকেই অনুসন্ধানের জন্ম। আর অনুসন্ধান থেকেই গবেষণার জন্ম। অনুসন্ধান ও গবেষণা প্রক্রিয়া সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে করা হয় এবং একটি অপরটির পরিপূরক। কারণ যদি কেউ খনিজ পদার্থের বিকল্প জ্বালানি অনুসন্ধান করতে চায় তবে তাকে কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। আর এই সুনির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণে ৭টি ধাপ পর্যায়ক্রমে পালিত হয়। ধাপগুলো হলো- ১. বিষয়বস্তু নির্ধারণ করা, ২. বিষয়বস্তু সম্পর্কে সম্যক জ্ঞানার্জন, ৩. কাজের পরিকল্পনা প্রণয়ন করা, ৪. ফলাফল সম্পর্কে আগাম ধারণাকরণ, ৫. পরীক্ষণ ও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা, ৬. তথ্য-উপাত্ত এর সংগঠন ও বিশ্লেষণ করা এবং ৭. বিজ্ঞান ও মানব কল্যাণে প্রভাব।

অনুসন্ধান ও গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল বিজ্ঞান এবং মানবকল্যাণে কী প্রভাব ফেলবে তার সম্পর্কে আলোচনা থাকা অনুসন্ধান ও গবেষণা প্রক্রিয়ার আরেকটি অংশ। প্রাপ্ত ফলাফল বিজ্ঞানের কোন মৌলিক বিষয়টির নতুন ব্যাখ্যা প্রদান করবে বা বিজ্ঞানের কোন অংশটির সহজে বুঝতে সহায়তা করবে তা উল্লেখ করতে হয়। বিষয়বস্তুর নির্ধারণ মানুষের কোন কোন কল্যাণে আসবে সুনির্দিষ্টভাবে তার দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ ধরনের আলোচনার মাধ্যমে অনুসন্ধান ও গবেষণা কাজের বিষয়বস্তুর গুরুত্ব স্পষ্ট হয়।

কাজেই আমরা বলতে পারি, অনুসন্ধান ও গবেষণা প্রক্রিয়া সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে করা হয় এবং একটি অপরটির সম্পূরক।

আগাম ধারণা করা অনুসন্ধান ও গবেষণা প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ধাপ

গবেষণার প্রত্যাশিত ফলাফল সম্পর্কে আগাম ধারণা করা অনুসন্ধান ও গবেষণা প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। কোনো পরীক্ষণের ফলাফল সম্পর্কে ধারণা থাকলে প্রাপ্ত ফলাফল নিয়ে কৌতূহল সৃষ্টি হবে না, তাতে করে কাজের পরের ধাপটিতে অগ্রসর হওয়া দ্রæত ও সহজ হবে। এছাড়াও ফলাফল সম্পর্কে আগাম ধারণা করতে পারলে কাজের পরিকল্পনা প্রণয়নেও সুবিধা হয়। অর্থাৎ কোনো কাজের ফলাফলের উপর ভিত্তি করে পরের কাজটির পরিকল্পনা কেমন হওয়া উচিত সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।


এসএসসি || রসায়ন || SSC || Chemistry

অধ্যায় - ০২ : পদার্থের অবস্থা
অধ্যায় - ০৩ : পদার্থের গঠন
অধ্যায় - ০৪ : পর্যায় সারণি
অধ্যায় - ০৫ : রসায়নিক বন্ধন
অধ্যায় - ০৬ : মোলের ধারণা ও রাসায়নিক গণনা
অধ্যায় - ০৭ : রাসায়নিক বিক্রিয়া
অধ্যায় - ০৮ : রসায়ন ও শক্তি
অধ্যায় - ০৯ : এসিড-ক্ষারক সমতা
অধ্যায় - ১০ : খনিজ সম্পদ ধাতু-অধাতু
অধ্যায় - ১১ : খনিজ সম্পদ- জীবাশ্ম
অধ্যায় - ১২ : আমাদের জীবনে রসায়ন
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url