মুদ্রাস্ফীতি কাকে বলে? মুদ্রাস্ফীতি সম্পর্কে বিভিন্ন অর্থনীতিবিদের সংজ্ঞা

মুদ্রাস্ফীতি কাকে বলে?

সাধারণত সামগ্রিক দামস্তরের বৃদ্ধিকে মূল্যস্ফীতি বলে। মূল্যস্ফীতি বলতে এমন একটি অবস্থা বুঝায় যে, একই পরিমাণ দ্রব্য বা সেবা ক্রয় করতে পূর্বের তুলনায় বেশি পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয়। অর্থাৎ বলা যায় যে, মূল্যস্ফীতি হলে অর্থের মূল্য কমে যায়। সাধারণত কোন একটি দেশের অর্থনীতিতে যখন অর্থের যোগান বৃদ্ধির ফলে দ্রব্য সামগ্রীর কার্যকর চাহিদা বাড়ে অথচ সে তুলনায় দ্রব্য ও সেবার উৎপাদন যদি না বাড়ে তখন দেশের সামগ্রিক দামস্তর দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এই সময় অর্থের মূল্য তথা জনগনের ক্রয় ক্ষমতা ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে এবং অর্থনীতিতে এর বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি হয়।

মুদ্রাস্ফীতি সম্পর্কে বিভিন্ন অর্থনীতিবিদের সংজ্ঞাঃ

অর্থনীতিবিদ ক্রাউথার বলেন, "মুদ্রাস্ফীতি হলো এমন এক অবস্থা যখন অর্থের মূল্য ক্রমাগত হ্রাস পায় এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়।"

অর্থনীতিবিদ কুলবর্ন এর মতে, "মুদ্রাস্ফীতি হলো এমন পরিস্থিতি যেখানে অত্যধিক পরিমাণ অর্থ অতি সামান্য পরিমাণ দ্রব্যসামগ্রীর পশ্চাতে ধাবিত হয়।"

অধ্যাপক হট্রে বলেন, অত্যধিক অর্থের প্রচলনকে মুদ্রাস্ফীতি বলে।"

অধ্যাপক পিগু বলেন, "যখন আয় সৃষ্টিকারী কাজ অপেক্ষা মানুষের আর্থিক আয় অধিক হারে বৃদ্ধি পায়, তখনই মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়।"

অধ্যাপক স্যামুয়েলসন এর মতে, "দ্রব্যসামগ্রী এবং উৎপাদনের উপাদানসূহের দাম যখন বৃদ্ধি পেতে থাকে, সাধারণভাবে তখন তাকে মুদ্রাস্ফীতি বলা হয়।"

লর্ড কেইন্স এর মতে, "যখন দ্রব্য সামগ্রীর মোট যোগানের তুলনায় কার্যকর চাহিদা বেশি হয় তখন সেই অবস্থাকে মুদ্রাস্ফীতি বলে।"

ক্ল্যাসিকেল অর্থনীতিবিদদের মতে, অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধিই হলো মুদ্রাস্ফীতি। মনিটারিস্টরা মনে করেন যে, অর্থের অতিরিক্ত যোগান বৃদ্ধির কারণে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায় এবং মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়। কেইনসের মতে, পূর্ণ নিয়োগ অবস্থার পর অর্থের চাহিদার চেয়ে অর্থের যোগান বৃদ্ধি পেলে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়।

সুতরাং বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ্ মুদ্রাস্ফীতির বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। সংক্ষেপে বলা যায়, যখন দেশে প্রচলিত অর্থের পরিমাণ উৎপাদিত মোট দ্রব্যসামগ্রীর তুলনায় অধিক হয় এবং তার ফলে দ্রব্যমূল্য বা দামস্তর ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে সে অবস্থাকেই 'মুদ্রাস্ফীতি' বলা হয়।

আরো পড়ুনঃ

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url