কৈশোর কাল কাকে বলে? কৈশোর কালের বৈশিষ্ট্য
আমরা যা জানতে পারবো -
- কৈশোর কি?
- কৈশোর কাল কাকে বলে?
- কৈশো কালের বৈশিষ্ট্য
- কৈশোর কালে ছেলেমেয়েদের দ্রুত বিকাশ ও দৈহিক পরিবর্তনের ধারা
- কৈশোরে ছেলেমেয়েদের শারীরিক সমস্যা
- কৈশোর কালের সমস্যা ও সমাধান
- কৈশোর কালকে ঝড় ঝঞ্ঝার কাল বলা হয় কেন?
কৈশোর কাল (Adolescence) কাকে বলে?
মানুষের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় হলো কৈশোর (Adolescence)।
শৈশব ও বাল্য পেরিয়ে সংক্ষিপ্ত বয়সন্ধির মধ্যে দিয়ে যৌবনের দ্বার প্রান্তে পৌছানোর যে দ্রুত, বাড়ন্ত, পরিবর্তনশীল সময় তাকে কৈশোরকাল (Adolescence) বলা হয়। এই সময়ে ছেলেমেয়েদের মধ্যে এত দৈহিক ও মানসিক পরিবর্তন হয় যে তারা দিশেহারা হয়ে পড়ে। আসলে কৈশোর কি এ নিয়ে নানা রকম মত দেখা যায়।
ইংরেজি Adolescence কথাটি ল্যাটিন শব্দ Adolescere থেকে এসেছে। এর অর্থ হলো পরিপক্কতা অর্জন এই অর্থে কৈশোর একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ জীবনের প্রস্তুতি হিসাবে প্রয়োজনীয় কৌশল মানুষ আয়ত্ত্ব করে। যৌন পরিণতির স্তরকেই অনেকে কৈশোর বলে বিবেচনা করেছেন।
প্রকৃতপক্ষে বাল্যকালের শেষ পর্যায় ও কৈশোরের আগমনের সন্ধিক্ষণকে বয়ঃসন্ধিকাল বলে। দ্বিতীয় বারের মতো জীবনের সবচেয়ে দ্রুত পরিবর্তন ঘটে এ সময়ে।
Roof এর মতে, এটা হলো বিকাশের সেই সময় যখন যৌনাঙ্গ পরিপক্কতা লাভ করে এবং প্রজনন ক্ষমতা জন্মায়, এর সাথে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনও হয়ে থাকে।
E.Hurlock বার থেকে একুশ বছরের সময়কালকে কৈশোর হিসাবে বর্ণনা করেছেন। তার মতে বয়ঃসন্ধিকাল একটি বিশেষ বয়সকাল। এ বয়সকালকে তিনি দু'ভাবে ভাগ করেছেন, তের থেকে ষোল পর্যন্ত প্রথম কৈশোর ও সতের থেকে একুশ বছর পর্যন্ত শেষ কৈশোর বলে উল্লেখ করেছেন।
আমরা হারলকের অনুসরনে কিছুর পরিবর্তন সাপেক্ষে কৈশোরকে দুটো ভাগে ভাগ করতে পারি। বার থেকে চৌদ্দ বছর কাল পর্যন্ত প্রারম্ভিক কৈশোর (Early Adolescence) এবং পনের থেকে আঠার বা তার পর পর্যন্ত শেষ কৈশোর (Late Adolescence)। ব্যক্তি, লিঙ্গ, স্থান এবং পরিবেশ ভেদে কিছু তারতম্য সহ মোটামুটি বার থেকে আঠার / ঊনিশ বয়স পর্যন্ত সময়কে বয়ঃসন্ধিকাল বা কৌশর কাল ধরা যেতে পারে।
শারীরিক বিকাশ
শৈশবকালের প্রথম দু'বছর শিশুদের বর্ধন দ্রুত হয়, তারপর ভিড় মন্থর হয়ে
আসে। কৈশোরের সূচনায় বয়ঃসন্ধিকালে আবার এই বর্ধন নাটকীয় ভাবে আকস্মিক দ্রুততা লাভ করে এবং পরে আবার
মন্থর হয়ে যায়। এই দ্রুতবর্ধনশীল সাধারণত ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের
তাড়াতাড়ি হয়। দশ বছর বয়সে ছেলেরা মেয়েদের চেয়ে লম্বা ও ভারী হয়,
কিন্তু তের বছরে ক্রমে দেখা যায় মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে লম্বা ও ভারী হয়ে যায়। ষোল
বছর বয়সে ছেলেমেয়েদের অবস্থান আবার কৈশোর পূর্ব স্তরের অবস্থানে ফিরে যায়। আবার
ছেলেরা মেয়েদের চেয়ে বেশি লম্বা ও ওজনে ভারী হয়ে যায়। ছেলে ও মেয়ে উভয়ের
ক্ষেত্রেই দ্রুত বর্ধনশীল সময় প্রারম্ভিক কৈশোরেই উপস্থিত। মেয়েদেরে বর্ধন ষোল
বছরে শেষ হয়। সব চেয়ে বেশি বর্ধন ঘটে ১৩/১৪ বছরে। ছেলেদের বর্ধন ১২/১৩ বছরে শুরু
হয়ে শেষ হয় ১৮/১৯ বছর বয়সে। সবচেয়ে বেশি বর্ধন ঘটে ১৫/১৬ বয়সে।
শারীরিক সমস্যা
কৈশোরে শরীর দ্রুত বাড়তে থাকে কিন্তু বর্ধনের উপাদান শরীরে থাকে না। সেজন্য
হাড়ের পুষ্টি ঠিকমতো হয়না। আর চিকন ও অপুষ্ট থেকে যায়। শরীরে
রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। পরিপাক ক্রিয়া তে ত্রুটি ঘটে। আকস্মিক বাড়নের
সময়ে ছেলে মেয়েরা দুর্বল হয়ে পড়ে। বাল্যের চাঞ্চল্য ক্ষিপ্রতা হ্রাস
পায়। খুব সহজে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। অবসাদ দেখা দেয় খুব বেশি।
দৈহিক পরিবর্তনের অনুপাত
যৌনাগমের সময়ে মেয়েদের শারীরিক বিকাশে একটা আলোড়ন দেখা যায়। বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দ্রুত পূর্ণতার দিকে এগিয়ে যায়। হরমোন নিঃসরনের ফলে এক অঙ্গ অন্য অঙ্গের চেয়ে দ্রুতগতিতে পূর্ণতা প্রাপ্ত হয়। ফলে কোন অঙ্গ সম্পূর্ণ কোন অঙ্গ অসম্পূর্ণ এরকম একটা বিশৃংখলা অবস্থা শরীরে তৈরী হয়। কিছু দিনের জন্য বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের অনুপাত বেমানান ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে উঠে। এই অবস্থা যৌনাগমজনিত পরিবর্তন সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। মুখ ও চোয়ালের গঠন ও আকৃতি পুরো আগে নাকের পূর্ণতা এসে যায়। বাহু ও পায়ের গঠন সম্পূর্ণ হওয়ার আগে হাত পায়ের পাতা পরিপূর্ণ আকার ধারণ করে। কিশোর বয়সে ছেলেমেয়েদের হাত পা লম্বা হয়ে যায়। এভাবে দেহের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের বিকাশে বেমানান অবস্থা দেখা যায়। দৈহিক বিকাশ খুব দ্রুত হয় বলে এবং দেহের বিভিন্ন অংশের বিকাশ বিভিন্ন হারে হয় বলে ছেলেমেয়েদের মধ্যে দেহ সঞ্চালনগত সমন্বয়ের অভাব বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়। কৈশোরের শেষ দিকে শারীরিক অনুপাত স্বাভাবিকক হতে থাকে।
আরো পড়ুনঃ
- বয়ঃসন্ধিকাল কাকে বলে ? বয়ঃসন্ধিকালের লক্ষণ, বয়ঃসন্ধিকালে মানসিক সমস্যা ও সমাধান
- পরিপাক কাকে বলে?
- ফরমালিন কাকে বলে?
- পুষ্টি কাকে বলে?
- পরিপাকতন্ত্র কাকে বলে?
- জাইমোজেন কি?
- সিলেন্টেরন কাকে বলে?
- অগ্ন্যাশয়কে মিশ্রগ্রন্থি বলা হয় কেন?
- গ্লাইকোজেন পরিপাকের প্রয়োজন হয় কেন?
কৈশোর কালের বৈশিষ্ট্য
কৈশোর হল মানুষের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়কাল, যখন তারা শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে ওঠে। এই সময়কালে, ব্যক্তিরা শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিকভাবে দ্রুত পরিবর্তন এবং বিকাশের মধ্য দিয়ে যায়।
কৈশোরের বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে রয়েছে:
- শারীরিক পরিবর্তন: এই সময়কালে, ব্যক্তিরা যৌবনে প্রবেশ করে এবং তাদের শরীরে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তনগুলির মধ্যে রয়েছে উচ্চতা বৃদ্ধি, ওজন বৃদ্ধি, যৌন পরিপক্কতা এবং ত্বকের পরিবর্তন।
- মানসিক পরিবর্তন: এই সময়কালে, ব্যক্তিরা তাদের চিন্তাভাবনা এবং আবেগগুলিকে আরও ভালভাবে বুঝতে শুরু করে। তারা তাদের পরিচয় এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করতে শুরু করে।
- সামাজিক পরিবর্তন: এই সময়কালে, ব্যক্তিরা তাদের পরিবার এবং বন্ধুদের থেকে আরও স্বাধীনতা অর্জন করতে শুরু করে। তারা নতুন সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং তাদের নিজস্ব পরিচয় গঠন শুরু করে।
কৈশোরের কিছু সাধারণ অভিজ্ঞতা এবং চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে:
- আত্ম-সচেতনতা: এই সময়কালে, ব্যক্তিরা তাদের চেহারা এবং আচরণ সম্পর্কে আরও সচেতন হয়ে ওঠে। তারা তাদের সঙ্গীর প্রতিক্রিয়ার প্রতি আরও সংবেদনশীল হয়ে ওঠে।
- স্বাধীনতা: এই সময়কালে, ব্যক্তিরা তাদের পরিবার এবং বন্ধুদের থেকে আরও স্বাধীনতা অর্জন করতে শুরু করে। তারা তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিতে এবং তাদের জীবনকে পরিচালনা করতে শুরু করে।
- পরিচয়: এই সময়কালে, ব্যক্তিরা তাদের পরিচয় এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করতে শুরু করে। তারা তাদের আগ্রহ, মূল্যবোধ এবং লক্ষ্যগুলি অন্বেষণ করতে শুরু করে।
- মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা: কৈশোর একটি চাপপূর্ণ সময়কাল হতে পারে, যা মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার দিকে পরিচালিত করতে পারে। এই সমস্যাগুলির মধ্যে রয়েছে উদ্বেগ, বিষণ্নতা এবং আত্মহত্যার চিন্তাভাবনা।
কৈশোর একটি জটিল এবং উত্তেজনাপূর্ণ সময়কাল হতে পারে। এই সময়কালে, ব্যক্তিরা তাদের নিজের সম্পর্কে অনেক কিছু শিখে এবং তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়।